'জমি না থাকায়' পুলিশের চাকরি হবে না আসপিয়ার

বাংলাদেশ

বরিশাল প্রতিনিধি
09 December, 2021, 06:30 pm
Last modified: 09 December, 2021, 06:45 pm
পুলিশের চাকরিতে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার বিধান রয়েছে। আসপিয়া ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বরিশালে থাকলেও সেখানে তাদের স্থায়ী নিবাস নেই।

পুলিশ কনস্টেবল পদে আসপিয়া ইসলামের চাকরি পাওয়ার খবর শুনে পরিবার পরিজন সবাই ভীষণ উচ্ছ্বসিত ছিল। অভাবের সংসারে পুলিশের এই চাকরি সচ্ছলতা নিয়ে আসবে বলেই আশা করেছিলেন আসপিয়া। 

কিন্তু ডিআইজি এসএম আকতারুজ্জামানের কার্যালয়ে গিয়ে আসপিয়া জানতে পারেন সব ধাপে উত্তীর্ণ হয়েও তার চাকরি হবে না। ডিআইজি জানান, সরকারি নিয়ম অনুসারে নিজেদের জমি না থাকলে চাকরি দেওয়ার আইন নেই। 

ভাঙা মন নিয়ে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত আসপিয়া পুলিশ লাইন্সের সামনে বসেছিলেন।

সরকারি হিজলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করেন আসপিয়া ইসলাম। ২০ বছর আগে ভোলা থেকে তার পরিবার বরিশালে আসে। আসপিয়ার বাবা-মা দুজনেই ভোলা জেলার স্থায়ী বাসিন্দা।

১৫ বছর ধরে উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামের একজনের জমিতে আশ্রিত হিসেবে থাকছে তার পরিবার। আসপিয়ার বাবা সফিকুল ইসলাম মারা গেছেন। পরিবারে তারা তিন বোন, এক ভাই ও মা। ভাই পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার আয় দিয়েই চলে সংসার।

আসপিয়া জানান, বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবলের শূন্য পদে লোক নিতে সেপ্টেম্বরে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। অনলাইনে আবেদন করলে গত ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও উত্তীর্ণ হন। এরপর ২৪ নভেম্বর একই স্থানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আসপিয়া।

২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে চিকিৎসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এতেও তিনি উত্তীর্ণ হন। সর্বশেষ ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেখানেও উতরে যান আসপিয়া।

চূড়ান্ত নিয়োগের আগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তার পরিবারকে 'ভূমিহীন' উল্লেখ করা হয়। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন হিজলা থানার উপ-পরিদর্শক মো. আব্বাস। এর আগে ভূমিহীন হওয়ায় (স্থায়ী ঠিকানা না থাকায়) আসপিয়ার চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

আসপিয়া বলেন, 'আমি যোগ্যতাবলে সাতটি ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগের অপেক্ষায় ছিলাম। এর মধ্যে হিজলা থানার ওসি জানান, চাকরি পেতে হলে নিজেদের জমিসহ ঘর দেখাতে হবে। কিন্তু আমাদের কোনও জমি নেই। আমরা একজনের জমিতে বছরের পর বছর ধরে বাস করছি। জমি নেই বলে আমার চাকরি হবে না—এটা বিশ্বাস হচ্ছিল না। বুধবার দুপুরে ডিআইজি স্যারের কাছে গিয়ে তাকে অনেক অনুনয়-বিনয় করি। কিন্তু আইনে বাধা থাকায় কিছু করার নেই বলে জানান তিনি।'

বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এসএম আকতারুজ্জামান বলেন, 'তাসপিয়ার জন্য আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে। তাসপিয়া নিঃসন্দেহে অত্যন্ত মেধাবী। তাকে পুলিশ বিভাগে পাওয়া গেলে ভালো হতো। কিন্তু পুলিশের চাকরিতে নিয়োগ হয় জেলাভিত্তিক। অবশ্যই জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে-এমন বিধান রয়েছে। কিন্তু তাসপিয়ার জমি না থাকায় তাকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক মানবিক। এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি বিষয়টি সদয় বিবেচনায় নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন তবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা করা যেতে পারে।'

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.