উপকূল অতিক্রম করে যাচ্ছে রিমাল, সকালে দুর্বল হতে পারে: বিএমডি
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/05/27/cyclone_remal_hits_coastal_area.jpg)
ঘূর্ণিঝড় রিমাল এর শক্তি বজায় রেখে দেশের উপকূল অতিক্রম করছে। আগামীকাল সোমবার (২৭ এপ্রিল) সকাল নাগাদ এটি দুর্বল হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার (২৮ মে) পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় দেশের তাপমাত্রাও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
রোববার (২৬ মে) রাতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সর্বশেষ অবস্থার বিষয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক এসব তথ্য জানান।
ঘূর্ণিঝড়টি আগামী ৫–৬ ঘণ্টা তথা সোমবার সকাল পর্যন্ত এর শক্তি বজায় রাখবে বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ। এরপর ধীরে ধীরে এটি দুর্বল হয়ে পড়বে।
'ঘূর্ণিঝড়টি আরও ৫–৬ ঘন্টা এর তীব্রতা বজায় রাখবে। এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় সাধারণত উপকূলে পৌঁছানোর পর দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে রিমাল তীব্রতা ধরে রেখে উপকূলের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে।'
এ ঘূর্ণিঝড়টি অতীতের আইলা এবং সিডরের মতো শক্তিশালী নয় বলে জানান আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ধীরে ধীরে উত্তরে অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশের খেপুপাড়া ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চল আগামী ৫–৬ ঘণ্টায় পার হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2024/05/27/rimal_cyclone_breefing.jpg)
রোববার রাত ১১টায় ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বিএমডি'র ১৫ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৯০–১২০ কিলোমিটার।
পায়রা ও মোংলার সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত এবং কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে নয় নম্বর মহাবিপৎসংকেত বহাল রাখতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এর আগে বিএমডি জানিয়েছিল, ঘূর্ণিঝড় রিমাল রোববার রাত ৮টার দিকে মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে।
ঘূর্ণিঝড়টির আয়তন প্রায় ৪০০ কিলোমিটার বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মো. শামীম আহসান।
বিএমডির পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ৯০–১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং কোথাও কোথাও ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।'
ঘূর্ণিঝড় দুর্বল না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলসমূহের জনগণকে সতর্ক থাকতে এবং সুরক্ষা বিধিমালা মেনে চলতে পরামর্শ দিয়েছে সরকার।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2024/05/27/barishal_flood_water.jpg)
বরিশাল ও লক্ষ্মীপুরে উপকূল প্লাবিত
ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলে আঘাত হানায় বরিশাল বিভাগের সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। তলিয়ে যায় ফসলের মাঠ।
অন্যদিকে মেঘনা নদীর জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, কমলনগর ও রামগতির উপকূলসংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বরিশালের স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের আশঙ্কা, পানির প্রবাহ তিন থেকে পাঁচফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যায় আবহাওয়া অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
'পানি বাড়লে বেড়িবাঁধ, মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পানি নেমে গেলে ভাঙন দেখা দিতে পারে,' বলেন তিনি।
এদিকে রোববার (২৬ মে) লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেকের বসতবাড়ির উঠানে পানি উঠে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েন গৃহস্থরা।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2024/05/27/meghna_coastal_area_under_water_remal.jpg)
উপকূলের বাসিন্দা রাহেলা বেগম বলেন, দুপুর ৩টার দিকে মেঘনা নদীতে জোয়ার শুরু হয়। বিকেল ৫টার পর লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে।
'মেঘনার তীররক্ষা বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি খুব সহজে বসতবাড়িতে ঢুকে পড়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পানি নামা শুরু হয়,' বলেন তিনি।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান বলেন, নদীর পানির উচ্চতা স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১.৩ থেকে ১.৬ মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
'রাতে আরেকটি জোয়ার আসবে। তখন ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করলে জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে,' বলেন তিনি।
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2024/05/26/remal_affects_electricity_connection_large.jpeg)
উপকূলের ২৬ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন
রিমালের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে কোনো ধরনের দুর্ঘটনার এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দুর্ঘটনা এড়াতে ১৪টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
বিআরইবি'র তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎহীন এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে পটুয়াখালী, বাগেরহাট, ভোলা, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা ও ঝালকাঠি জেলা।