উপজেলা নির্বাচন চলছে: অনিয়মের বিরুদ্ধে সিইসি’র হুঁশিয়ারি
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়— সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
গতকাল মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, "স্থানীয় নির্বাচনে অযাচিত প্রভাব ঠেকাতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ভোটের দিন মন্ত্রী-এমপিরা যাতে হস্তক্ষেপ করতে না পারেন, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।"
হাবিবুল আউয়াল বলেন, "আমরা ভোটের দিন সতর্ক থাকব। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব এবং কোনো অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
আজ বুধবার (৮ মে) প্রথম ধাপে ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে ১৩৯টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরমধ্যে ২২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ চলছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, যাতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয় সে লক্ষ্যে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে মত বিনিময় করেছে কমিশন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ও টহলের সুবিধার্থে ধাপে ধাপে ভোটের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এরপর নানান কারণে যেমন— স্থগিত হওয়া, ধাপ পরিবর্তন ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার ফলে ১৩টি উপজেলা বাদ পড়ে। এ কারণে আজ প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে।
এতে মোট ১,৬৩৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৭০, ভাইস চেয়ারম্যান ৬২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪০ জন প্রার্থী রয়েছেন।
এই ধাপে ৫ উপজেলায় সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান ৮ জন ও ১০ জন ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান রয়েছেন ১০ জন।
এই ধাপে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ভোট কেন্দ্র ও ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ভোটদানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মোট ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭৪ জন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। একইসঙ্গে দেশব্যাপী ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়া উপজেলার আয়তন, ভোটার সংখ্যা ও ভোটকেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতি উপজেলায় ২ থেকে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে রয়েছে কোস্ট গার্ড। এছাড়া, পরিস্থিতি বিবেচনায় বেশ কয়েকটি উপজেলায় ২-৪ প্লাটুন বাড়তি সদস্য মোতায়ন করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাধারণ প্রতিটি কেন্দ্রে ১৭ জন করে এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এই সংখ্যা পার্বত্য এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে অন্তত ২১ জন।
এদিকে সিইসি বলেন, "নির্বাচনে আমরা সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। সংশ্লিষ্টরা নিয়ম কানুন প্রতিপালন করলে নির্বাচনটা সহজ হবে; তারা যদি বিশৃঙ্খল তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা দুরূহ হবে। এবার কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং প্রার্থীসহ সবার সঙ্গে মত বিনিময় করা হয়েছে। নির্বাচনটাকে স্বচ্ছ করার চেষ্টা করছি।"
ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে নানান ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সিইসি।
তিনি বলেন, "অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে কারো কারো প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে। …নির্বাচন যাতে প্রভাবিত না হয় সেজন্যে ইসির তরফ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছি।"
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, "সংসদ সদস্য, মন্ত্রী অনেকে নিবৃত করতে পেরেছি। হয়ত বা অনেকে এলাকায় আছেন। সরকারের তরফ থেকে যতদূর দেখেছি, দলীয়ভাবে হোক বা সরকারের পক্ষ থেকে হোক-যাতে নির্বাচনটা অবাধ, নিরপেক্ষ হয়, কেউ যেন প্রভাব বিস্তার না করেন— সে বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।"
"প্রভাব বিস্তার প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রভাব বিস্তারের কারণে কিছু কিছু অ্যাকশনও নিয়েছি। বিভিন্ন ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করা হয়, এজন্য একজনকে ডাকিয়ে এনে বক্তব্য নিয়েছি, প্রার্থিতা বাতিলও করেছি।"
"এটা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচনটা যেন অবাধ, নিরপেক্ষ হয়। বিশেষ করে নির্বাচনের দিন কেউ যেনো ভোটকেন্দ্রে অনুপ্রবেশ করতে না পারে এবং সেখানে যেন অনিয়ম না হয়– সে বার্তাটি রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের দেওয়া হয়েছে।…তারপরও বলে হচ্ছে– কোনো সংসদ সদস্য প্রভাব বিস্তার করছেন কিনা, যদি করে থাকেন, অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। ভোটের দিন আমরা সতর্ক থাকবো, কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করবো," যোগ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।