বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানাগুলোর কাছে পেট্রোবাংলার বকেয়া বিল ২৫,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

বাংলাদেশ

26 April, 2024, 05:55 pm
Last modified: 27 April, 2024, 05:52 pm

চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানাগুলোর কাছে পেট্রোবাংলার অধীন ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বকেয়া বিলের পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

পেট্রোবাংলার তত্ত্বাবধানে থাকা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এখন এই বিপুল বকেয়া পাওনা আদায়ে হিমশিম খাচ্ছে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, পেট্রোবাংলার ছয় কোম্পানির কাছে যে বকেয়া পড়েছে, এর মধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বকেয়া বিলের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এরপর সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিল গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের, ৪ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকার বেশি।

বাকি চার গ্যাস বিতরণ কোম্পানি হলো বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি।

উৎপাদকদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে বিতরণকারী কোম্পানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। পেট্রোবাংলার কাছ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় গ্যাসও কেনে বিপিডিবি। বিপিডিবির কাছে পেট্রোবাংলা পাবে ৮ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। 

হরিপুর পাওয়ার, মেঘনাঘাট পাওয়ার, সামিট মেঘনাঘাট পাওয়ার, রিজেন্ট এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার, ইউনাইটেড পাওয়ার ও সামিট বিবিয়ানা-২-সহ সমস্ত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে পেট্রোবাংলার মোট বকেয়া পাওনা ১৩ হাজার ৫৯৩.৪১ কোটি টাকা।

এছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন-এর (বিসিআইসি) কাছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর পাওনা ২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। বিসিআইসি সার কারখানা চালানোর জন্য গ্যাস কেনে।

গত ৮ মার্চ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গ্যাসের বকেয়া বিল দ্রুত সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'সরকারি প্রতিষ্ঠানও সময়মতো বিল না দিলে গ্যাসের লাইন কেটে দেওয়া উচিত।'

বিপুল পরিমাণ এই বকেয়া উদ্ধারে কী করছে মন্ত্রণালয়—এমন প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিস বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন লাইন কেটে দেওয়ার জন্য। আমরা এখন অ্যাকশনে যাব। ইতিমধ্যে নাম সহকারে তালিকা চেয়েছি আমি। তাদের লিস্ট নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেব।'

পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর থেকে বাড়তি দাম পরিশোধ করেনি বিসিআইসি। এতে দেনার অঙ্ক দিন দিন বড় হচ্ছে। 

গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করে থাকে পেট্রোবাংলা। বিসিআইসির আওতাধীন সার কারখানাগুলোর কাছে পেট্রোবাংলার মোট পাওনার পরিমাণ ৬৪২.৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে যমুনা ফার্টিলাইজারের কাছে পাওনা ৪২৩.০৮ কোটি টাকা এবং ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া কারখানার কাছে পাওনার পরিমাণ ২০১.৪৭ কোটি টাকা।

জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানির কাছে ৭৪৫.৭৫ কোটি টাকা, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজারের কাছে ৪৯১.৩১ কোটি টাকা এবং কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি চিটাগং ইউরিয়া কারখানার কাছে পাবে ৩৮৮.৪২ কোটি টাকা। 

পেট্রোবাংলা বলছে, বিসিআইসি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে বারবার দেনার টাকা পরিশোধের বিষয়ে বলা হলেও তারা এই টাকা পরিশোধ করছে না। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি এখন এমন অবস্থায় যাচ্ছে যে বাধ্য হয়েই সার কারখানাগুলোর গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'দিন দিন বকেয়া বাড়ছে। বারবার তাগাদা দেওয়ার পরেও এখন পর্যন্ত আমরা সার কারখানাগুলোর কাছ থেকে নতুন দামে কোনো বিল পাইনি। আশা করছি তারা শীঘ্রই বিল পরিশোধ করবে।'

তিনি আরও বলেন, 'এছাড়াও পেট্রোবাংলার আওতাধীন কোম্পানিগুলোর বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্যও আমরা তাগাদা দিচ্ছি, যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বকেয়া পরিশোধ করে দেয়।'

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.