২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে বাজারে ‘অটোক্লেভড এরেটেড কংক্রিট ব্লক’ আনছে ম্যাক্স গ্রুপ

বাংলাদেশ

18 April, 2024, 01:35 pm
Last modified: 18 April, 2024, 01:42 pm
এএসি ব্লক মূলত সাধারণ মাটি পুড়িয়ে বানানো ইট এবং হলো ব্রিকস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এগুলো অনেক হাল্কা এবং পরিবেশের ক্ষতি করেনা– এমন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়; ফলে সাধারণ কাদামাটি দিয়ে তৈরি ইটের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব এএসি ব্লক ও প্যানেল সারাবিশ্বে জনপ্রিয়।

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপ প্রায় ২০০ কোটি টাকার প্রাথমিক বিনিয়োগে আজ (১৮ এপ্রিল) থেকে অটোক্লেভড এরেটেড কংক্রিট (এএসি) ব্লক ও প্যানেলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে।

এএসি ব্লক মূলত সাধারণ মাটি পুড়িয়ে বানানো ইট এবং হলো ব্রিকস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এগুলো অনেক হাল্কা এবং পরিবেশের ক্ষতি করেনা– এমন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়; ফলে সাধারণ কাদামাটি দিয়ে তৈরি ইটের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব এএসি ব্লক ও প্যানেল সারাবিশ্বে জনপ্রিয়।

মূলত সিমেন্ট, চুন, জিপসাম, অ্যালুমিনিয়াম পাউডার, বালি ইত্যাদি কাঁচামাল দিয়ে তৈরি হয় এএসি ব্লক। এটি হাল্কা ও মজবুত হওয়ায় যেকোনো নির্মাণ কাজে ব্যবহার উপযোগী।

ম্যাক্স গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সামিউল ইসলাম বলেন, এএসি ব্লকগুলো ওজনে হাল্কা, দামে সাশ্রয়ী এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো– এটি বিষাক্ত কাদামাটি দিয়ে তৈরি ইটের সবচেয়ে সেরা বিকল্প হিসেবে কাজ করে। পরিবেশ-বান্ধব হওয়ায় সারা বিশ্বেই এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

"আমরা প্রাথমিকভাবে দৈনিক ১,০০০ কিউবিক মিটার এএসি ব্লক উৎপাদন করব। নতুন এ প্রযুক্তি অ্যাডাপটেশনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে উৎপাদন আরও বাড়ানো হবে," যোগ করেন তিনি।

নির্বাহী পরিচালক আরও জানান, ম্যাক্স গ্রুপের সিস্টার কনসার্ন ম্যাক্সক্রেট লিমিটেড মানিকগঞ্জে ৮ একর জমিতে একটি অত্যাধুনিক এএসি ব্লক উৎপাদন ইউনিট নির্মাণ করেছে।

ম্যাক্স গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, এই ব্লকগুলো নির্মাণ খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে সাশ্রয় করে; এটি ব্যবহারের করে সামগ্রিক নির্মাণ ব্যয় ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব এবং এর সহজ ইনস্টলেশনের কারণে কাজ সম্পন্ন হতে সময়ও কম লাগে।

তারা জানান, একটি এএসি ব্লক সাতটি লাল ইটের আকারের সমান, যা জয়েন্ট মর্টার খরচ কমায়।

ব্লকগুলো আকারে বড় হওয়ায় কাজের গতি হয় দ্বিগুণ, একইসঙ্গে বাঁচে শ্রমিক খরচও।

এছাড়া, এএসি ব্লক নির্মাণকাজে সিমেন্ট এবং ইস্পাতের ব্যবহারও কমায়; একইসঙ্গে ব্লকগুলোর তাপ নিরোধক বৈশিষ্ট্য দীর্ঘমেয়াদে অপারেশনাল খরচ কমায় এবং শক্তি সঞ্চার (এনার্জি সেভ) করে।

সাধারণ ইটের তুলনায় এই ব্লকগুলো ৪০ শতাংশ হালকা, যা ভবনের ডেড-লোড কমায়। ব্লকগুলো ভবনের ভেতরে সুবিধাজনক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে। গ্রীষ্ম ও শীতে ৫-ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত (কম বা বেশি– যখন যেটি প্রয়োজন) সুবিধাজনক তাপমাত্রা পাওয়া যায়।

উপরন্তু, ব্লকগুলো সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত আগুন-প্রতিরোধী এবং ৩৮ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দ-প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে বলে জানান ম্যাক্স গ্রুপের কর্মকর্তারা।

২০২৫ অর্থবছরের মধ্যে কাদামাটির তৈরি ইটের ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধের সরকারি উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, কংক্রিট ব্লক শিল্প নিজেদের মতো করে ব্যাপক উদ্যোগ নিচ্ছে। এর মাধ্যমে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পোড়া মাটির ইটের ব্যবহার থেকে নির্মাণ শিল্প সরে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে প্রচলিত ইটভাটার সংখ্যা সাড়ে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজারের মতো। এসব ভাটায় বছরে প্রায় ২২ দশমিক ৭১ বিলিয়ন পোড়া ইট উৎপাদন হয়। 

এরজন্য ২৫ বিলিয়ন কিউবিক ফুট টপ সয়েল পোড়াতে সাড়ে ৩ মিলিয়ন টন কয়লা ও ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন টন জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হয়, যা থেকে মারাত্মক ক্ষতিকর ৯ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন গ্রিন হাউস গ্যাস হয়। 

কনক্রিট ব্লক ইটে মাটির ব্যবহার না হওয়ায় পরিবেশ রক্ষায় এটি অন্যতম ভালো ব্যবস্থা হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.