ঈদের ছুটিতে কাজ চললেও চট্টগ্রাম বন্দরে জমেছে অতিরিক্ত ৬,০৬৬ কন্টেইনার 

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
17 April, 2024, 11:00 am
Last modified: 17 April, 2024, 11:00 am
গত ৯ এপ্রিল থেকে টানা ৮ দিনে বন্দরে জমেছে অতিরিক্ত ৬,০৬৬ কন্টেইনার।

ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখে টানা ৫দিনের সরকারি ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পুরোপুরি চালু থাকলেও এর সুফল মেলেনি কন্টেইনার ডেলিভারি কার্যক্রমে। 

গত ৯ এপ্রিল থেকে টানা ৮ দিনে বন্দরে জমেছে অতিরিক্ত ৬,০৬৬ কন্টেইনার।

বন্দর চালু থাকলেও ঈদের দিনে কন্টেইনার ডেলিভারি নেমে আসে শূণ্যের কোটায়। ছুটির অন্যদিনগুলোতে ডেলিভারি নেমে আসে এক হাজার কন্টেইনারে। যদিও স্বাভাবিক সময়ে দিনে চার হাজার থেকে চার হাজার পাঁচশ কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। 
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিবছর ঈদের আগে স্টেক হোল্ডার প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বৈঠক করে বন্দর। ডেলিভারি নিতে সব ধরনের সেবাও চালু রাখে। কিন্তু আমদানিকারকরা ডেলিভারি না নেওয়ায় বন্দর চালু রাখার সুফল পাওয়া যায় না। 

তবে বন্দর ব্যববহারকারীরা বলছে, বন্দর চালু থাকলেও ব্যাংক, কাস্টমসের সেবা পুরোপুরি চালু থাকে না। বন্ধ থাকে কারখানার গুদামও। সড়কে পণ্যবাহী যান চলাচলেও থাকে নিষেধাজ্ঞা। এসব কারণে বন্দর চালু থাকলেও ডেলিভারি নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায় আমদানিকারকদের জন্য।

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশন (বিআইসিডিএ)- এর সেক্রেটারি জেনারেল রুহুল আমিন শিকদার বলেন, ঈদের আগে এবং ৪-৫ দিন পরে কন্টেইনার ডেলিভারি অনেকটাই কমে যায়। এ কারণে বন্দর এবং ডিপোগুলোতে জট তৈরি হয়। এটি প্রতি বছরের ঘটনা।

তিনি বলেন, "ঈদের আগের এবং পরের ৩ দিন ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকে। এ কারণে আমদানি পণ্য ডেলিভারি নিতে সমস্যায় পড়েন আমদানিকারকরা। সড়ক পথে হয়রানি, বাড়তি ভাড়া আদায়সহ নানান সমস্যার কারণে আমদানিকারকরা ঈদের ছুটিতে পণ্য ডেলিভারি নিতে চান না।  যদিও রপ্তানি পণ্য পরিবহন এই নিষেধাজ্ঞার বাাইরে থাকে।"

তবে সড়ক বা সেতু মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল কাজ করতে পারে; ঘরমুখো যাত্রীদের নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিতের পাশাপাশি আমদানি পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করা যায়- সে উপায়ও বের করতে হবে বলে মত দেন তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ডেলিভারির হিসাব ধরা হয় আগের দিন সকাল ৮ টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টা, অর্থাৎ সকাল ৮টা থেকে পরের দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত। 

সে অনুযায়ী, গত ৯ এপ্রিল বন্দরে কন্টেইনার ডেলিভারি হয় ৪১০৪ টিইইউ (টুয়েন্টি ফুট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট)। ১০ এপ্রিল ৩,১৯৫ টিইইউ, ১১ এপ্রিল ৮১৯ টিইইউ, ১২ এপ্রিল ০ টিইইউ, ১৩ এপ্রিল ৬৭১ টিইইউ, ১৪ এপ্রিল ১১৮৯ টিইইউ,  ১৫ এপ্রিল ১৪২২ টিইইইউ, ১৬ এপ্রিল ২৭৪৫ টিইইউ কন্টেইনার ডেলিভারি হয়।

বন্দর খোলা থাকলেও ডেলিভারি পরিস্থিতি সব সময়ের তুলনায় অনেক কম দেখা গেছে। এখনও স্বাভাবিক মাত্রায় পৌঁছায়নি ডেলিভারি পরিস্থিতি। 

৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনারের সংখ্যা ছিল ৩৩,৪১৭ টিইইউ। আর ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বন্দরে কন্টেইনার রয়েছে ৩৯,৪৮৩ টিইইউ। গত ৮ দিনে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে জমেছে অতিরিক্ত ৬,০৬৬ টিইইউ কন্টেইনার।

ঈদের ছুটি, এমনকি ঈদের দিনও বন্দরে ডেলিভারি কার্যক্রম চালু থাকবে বলেছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক।  ঈদের দিন বিকেলে কেউ পণ্য ডেলিভারি নিতে আসলে, নিতে পারবে বলে জানান তিনি। 

তবে দেখা গেছে তার উল্টো চিত্র। ঈদের দিন বন্দর থেকে কোনো কন্টেইনার ডেলিভারি হয়নি। স্বাভাবিক সময়ে দিনে ৯,০০০-১০,০০০ কন্টেইনার জাহাজে উঠানামা (হ্যান্ডলিং) হলেও ঈদের দিন হয়েছে মাত্র ৫৭২ টিইইউ। 

চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার রাখার সক্ষমতা ৫৩,৫১৮ টিইইউ। বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখতে সক্ষমতার ১৫ শতাংশ খালি রাখতে হয়। সেই হিসেবে বন্দর ইয়ার্ডে প্রায় ৪৫,৫০০ টিইইউ কন্টেইানার থাকলে সেটি স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও বন্দর ইয়ার্ডে রক্ষিত কন্টেইনার পরিসংখ্যানকে স্বাভাবিক বলছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

ঈদের ছুটিতে বন্দরের ডেলিভারি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, "ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পুরোপুরি চালু থাকলেও কাস্টমসের কার্যক্রম পুরেপুরি চালু থাকে না। বন্দর চালুর সুফল পেতে হলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে চালুর রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সরকারের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.