দিনভর আন্দোলনের পর বকেয়া ছুটির টাকা ও বোনাস পেল গাজীপুরের পোশাক শ্রমিকেরা

বাংলাদেশ

গাজীপুর প্রতিনিধি
02 April, 2024, 10:15 pm
Last modified: 02 April, 2024, 11:06 pm
এদিকে, মঙ্গলবার ছুটির বকেয়া ও ঈদ বোনাস দিলেও বেতন না পাওয়ায় কারখানায় অবস্থান নিয়েছিল শ্রমিকেরা। ইফতারের পরে শিপমেন্টের তিনটি গাড়ি কারখানা থেকে বের হওয়ার সময় তারা বাধা দেয়। এসময় বহিরাগত ও কারখানার স্টাফেদের হামলায় কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তারা।

গাজীপুরের কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় কেয়া গ্রুপের একাধিক কারখানার শ্রমিকেরা মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দ্বিতীয় দিনের মতো দিনভর আন্দোলনের পর সন্ধ্যায় গত বছরের ছুটির বকেয়া ও ঈদ বোনাস পেয়েছেন। তবে এখনও তারা বকেয়া বেতন পাননি।

এদিকে, মঙ্গলবার ছুটির বকেয়া ও ঈদ বোনাস দিলেও বেতন না পাওয়ায় কারখানায় অবস্থান নিয়েছিল শ্রমিকেরা। ইফতারের পরে শিপমেন্টের তিনটি গাড়ি কারখানা থেকে বের হওয়ার সময় তারা বাধা দেয়। এসময় বহিরাগত ও কারখানার স্টাফেদের হামলায় কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তারা।

আহতরা হলেন: নিটিং অপারেটর মো. আইয়ূব আলী (৩০) এবং জুনিয়র অপারেটর (সুয়িং) মোছা. মলিনা খাতুন (২৫)। নিটিং অপারেটর মো. আইয়ূবের মাথায় ১০টি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

আন্দোলনরত শ্রমিকেরা জানান, কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় কেয়া গ্রুপের একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সোমবার কেয়া স্পিনিং মিলের শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস ও বাৎসরিক ছুটির বকেয়া পাওনা টাকার দাবিতে আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পরে বিকালে এই প্রতিষ্ঠানের কিছু শ্রমিককে শুধু ঈদ বোনাস দেওয়া হয়। তাদের বকেয়া মাসের বেতন ও অর্জিত ছুটির পাওনা দেওয়া হয়নি।

সবগুলো দাবি পূরণ না হওয়ায় কেয়া স্পিনিং মিলের শ্রমিকেরা ফের  দ্বিতীয় দিনের মতো মঙ্গলবার সকাল থেকে কাজ বন্ধ করে কোনাবাড়ী-কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় তারা ছাড়াও কেয়া গ্রুপের আরও কয়েকটি কারখানা যেমন: কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেড, কেয়া কটন, কেয়া ইয়ার্ন মিলস, কেয়া ডাইং অ্যান্ড নিটিং এবং কেয়া কসমেটিকস কারখানার শ্রমিকরাও একই দাবিতে কাজ বন্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

মঙ্গলবার রাত ৮টায় কারখানার শ্রমিকেরা জানান, দিনভর আন্দোলনের পর সন্ধ্যায় কেয়া স্পিনিং মিল ছাড়া অন্যান্য কারখানার শ্রমিকদের গত বছরের ছুটির টাকা ও ঈদ বোনাস বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। কিন্তু কেয়া স্পিনিং মিলের কিছু শ্রমিক ছুটির টাকা ও ঈদ বোনাস পাননি।

ইফতারের পর কারখানা থেকে শিপমেন্টের তিনটি গাড়ি বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু শিপমেন্টের গাড়ি বের হয়ে গেলে আর বকেয়া পাবে না এমন আশঙ্কায় ছুটির টাকা ও ঈদ বোনাস না পাওয়া শ্রমিকেরা গাড়ি বের হতে বাধা দেন। এসময় বহিরাগত ও কারখানার কয়েকজন স্টাফ শ্রমিকদের উপর হামলা করে। এতে কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত দুজনকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

আন্দোলনরত শ্রমিকেরা বলেন, বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস ও বাৎসরিক ছুটির টাকা পরিশোধের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

এদিকে, গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় কারখানা এলাকা পরিদর্শনে আসেন। তিনি কারখানার মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। শ্রমিকেরা তার কথা শোনার পর শান্তভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

পুলিশ সুপার মালিক পক্ষকে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দেন বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে সারওয়ার আলম বলেন, শ্রমিকদের দাবি ন্যায্য ও যৌক্তিক। তারা বেতন পাচ্ছে না, অর্জিত ছুটির টাকা পাচ্ছে না, বোনাস পাচ্ছে না। এগুলো দ্রুত পরিশোধ করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। তবে কারখানার পরিবেশ শান্ত রয়েছে। 

কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম আশরাফ উদ্দিন ছুটির টাকা ও ঈদ বোনাস পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি আরও জানান, শিপমেন্টের গাড়ি বের হতে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চলছে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.