আমরা সব ধরনের ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে: বুয়েট শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তারা সব ধরনের ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে।
আজ রবিবার (৩১ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা আবারও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি যে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা সব ধরনের ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী।'
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে পাঁচজন সাংবাদিকদের সামনে ব্রিফ করেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা কেউই নাম প্রকাশ করেননি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, 'হিজবুত তাহরীর ও অন্যান্য আরও যেসব নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে, আমরা সেগুলোরও বিরুদ্ধে।'
তারা আরও বলেন, 'বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়িত থাকলে আমরা বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত ও তাদের বহিষ্কারের দাবি জানাই।'
এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, 'জীবনের ক্ষতি করে' এমন সব ধরনের ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে তারা শপথ নিচ্ছেন।
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, 'আমরা আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেব না।'
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, বুয়েটের ২০ তম ব্যাচের মোট শিক্ষার্থী এক হাজার ২১৫ জন। তাদের মধ্যে এক হাজার ২১৩ জনই আজ অনুষ্ঠিত ফাইনাল পরীক্ষায় বসেননি। এর অর্থ এটাই যে প্রায় সব শিক্ষার্থীই তাদের দাবির সঙ্গে সহমত।
ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির প্রতিবাদ এবং বুয়েট শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যনির্বাহী সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির বহিষ্কারের দাবিতে গত শুক্রবার (২৯ মার্চ) থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে রাব্বির হলের সিট বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে আজ সকালে এক প্রতিবাদী সমাবেশ থেকে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাব্বির হলের সিট ফিরিয়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়েছে ছাত্রলীগ।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের একটি ইউনিটের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, 'আমাদের এক ভাই স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। এ কারণে তার আবাসিক হলের সিট বাতিল করা হয়েছে। আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার সিট ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই।'
তিনি বলেন, 'দাবি না মানলে যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কথা বলছেন, আমরাও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করব এবং কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।'
কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টি 'অসাংবিধানিক, শিক্ষা পরিপন্থি ও মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন' বলেও অভিহিত করেন।
ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি ফিরিয়ে আনার দাবির পাশাপাশি কর্মসূচি থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বুয়েটে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান।
তবে ছাত্রলীগের এই পাল্টা কর্মসূচির মধ্যে বুয়েট শিক্ষার্থীরা নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেননি।
বুয়েটের আন্দোলন সরকার, পুলিশ পর্যবেক্ষণ করছে
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, বুয়েটে আন্দোলনের নামে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের তৎপরতা আছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার নামে বুয়েটকে জঙ্গিবাদ, অপরাজনীতির কারখানায় পরিণত করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। সেই রকম হলে সরকারকে অ্যাকশনে যেতে হবে।
ছাত্রলীগ নেতার বহিষ্কারে আল্টিমেটাম
২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। এরপরও গত বুধবার (২৭ মার্চ) রাতে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালান।
প্রতিবাদে গত শুক্রবার থেকে ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে এ আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
তারা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা রাব্বিকে বহিষ্কারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দেন। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বেশ কয়েকটি দাবিও তুলে ধরেন।