শনাক্তের বাইরে ২০% যক্ষ্মা রোগী, সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ছে

বাংলাদেশ

24 March, 2024, 12:40 pm
Last modified: 24 March, 2024, 02:16 pm
শনাক্তের বাইরে থাকা এই রোগীরা যক্ষ্মার জীবাণু ছড়াচ্ছে এবং আরও রোগী বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীনে ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ৩,০১,৫৬৪ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে চিকিৎসার আওতায় আছে ৮০ শতাংশ রোগী। বাকি প্রায় ২০ শতাংশ রোগী এখনও রয়েছে শনাক্তের বাইরে।

শনাক্তের বাইরে থাকা এই রোগীরা যক্ষ্মার জীবাণু ছড়াচ্ছে এবং আরও রোগী বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিভাগীয় যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞ ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, "যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ শনাক্তের বাইরে থাকা রোগী। সব রোগীকে যদি আমরা পরীক্ষা করতে পারি এবং চিকিৎসার আওতায় আনতে পারি, তাহলে রোগটি ছড়াবে কম।"

তিনি আরও বলেন, "আমাদের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো অনেক রোগী চিকিৎসা শুরু করলেও শেষ করেনা। কিছুদিন চিকিৎসা করার পর যখন শরীর ভালো লাগে, তখন সেসব রোগী আর ৬ মাস ওষুধ কন্টিনিউ করেনা, তারা যে মোবাইল নাম্বার দেয় সেটি বন্ধ পাওয়া যায়, বা ঠিকানাও ভুল দিয়ে যায়। এই রোগীরা সংক্রমণ ছড়ানোর পাশাপাশি মাল্টিড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট টিবি (এমডিআর টিবি) রোগীর সংখ্যা বাড়াচ্ছে।"

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে বর্তমানে, ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় (এমডিআর) আক্রান্তের সংখ্যা ২,৭২৯ জন। 

ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন বলেন, "শিশু যক্ষ্মা রোগীর মাত্র ৪ শতাংশ আমরা শনাক্ত করতে পারি, কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে দেশে শিশু যক্ষ্মা রোগী আছে ১০ শতাংশ। এখনও ৬ শতাংশ শিশু যক্ষ্মা রোগী আমাদের শনাক্তের বাইরে রয়েছে।"

২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নিমূর্লের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে শনাক্তের বাইরে থাকা রোগীদের শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এমন পরিস্থিতিতে আজ (২৪ মার্চ) পালিত হচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। এবারের প্রতিপাদ্যের বিষয় 'হ্যাঁ! আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি'।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের অ্যাজমা ও টিবি সেন্টারের সমন্বয়ক ডা. কামরুজ্জামান টিবিএসকে  বলেন, দিন দিন শিশু যক্ষ্মা রোগী বাড়ছে। কিন্তু শিশু যক্ষ্মা নির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়া কঠিন। শিশুরা যক্ষ্মা পরীক্ষার জন্য কফ দিতে পারেনা। আবার পরিবারের সদস্যরা বিশ্বাস করতে চায়না যে তার বাচ্চার টিবি হয়েছে। 

"শুরুতে টিবি শনাক্ত না করলে বাচ্চার পরবর্তীতে নিউমোনিয়া তৈরি হয়, বাচ্চার ওজন কমে যায়, অপুষ্টিতে ভোগে। ব্রেন টিবি ডেভলভ করলে বেশিরভাগ বাচ্চা মারা যায়," বলেন তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৩ সালের গ্লোবাল টিউবারকিউলোসিস প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩০টি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। আর ২০২৩ সালে দেশে যক্ষ্মায় মারা গেছে প্রায় ৭ হাজার রোগী।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্যমতে, দেশে ১টি ন্যাশনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরি ও ৫টি রিজিওনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরির মাধ্যমে জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে টিবি রোগ শনাক্ত করা হয়।

তবে যক্ষ্মা রোগী শনাক্তে দেশে মলিকুলার ডায়াগস্টিক পরীক্ষাগারের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশপাশি তাৎক্ষণিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এক্সরের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ডা. আহমেদ পারভেজ জাবীন। 

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় যক্ষ্মা নির্ণয়ের পরে প্রতিটি রোগীকে বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি নিয়মিত ঔষধ সেবন নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি রোগীর সাথে একজন ডটস প্রভাইডার নিশ্চিত করা হয়। 

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ২০২২ সালে দেশে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছিল ২,৬১,৯৫৭ জন। দেশে যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের হার ২০২৩ সালে বেড়েছে।

"এখনও আমরা যক্ষ্মার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি। দ্রুত শনাক্ত ও চিকিৎসা করা গেলে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে আসবে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। এছাড়া, আমরা টিবি প্রিভেন্টিভ থেরাপি দিচ্ছি। মৃত্যুর হার আমরা কমিয়ে আনতে পেরেছি," যোগ করেন তিনি। 

২০১০ সালে বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগে আনুমানিক মৃত্যু ছিল প্রতি লাখে ৫৪ জন, যা ২০২২ সালে কমে প্রতি লাখে ২৫ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.