স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গবেষণায় আমদানি করা শিশুখাদ্যের মেয়াদের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন

বাংলাদেশ

22 March, 2024, 10:25 am
Last modified: 22 March, 2024, 02:21 pm
গবেষণায় সতর্ক করে বলা হয়েছে, এই অপর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে বাজারে নিম্নমানের পণ্য প্রবেশের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এটি শুধু শিশুখাদ্যের ক্ষেত্রেই নয়, বরং অন্যান্য খাদ্যপণ্য ও খাদ্যপণ্যের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ইনফোগ্রাফিক্স: টিবিএস

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন এক গবেষণায় বাংলাদেশে আমদানি করা শিশুখাদ্যের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নজরদারিতে বড় ধরনের অসঙ্গতির চিত্র উঠে এসেছে।

অধিদপ্তরের 'রিকয়ারমেন্ট, প্রিভেন্টিভ কন্ট্রোলস মিজার্স অ্যান্ড পলিসি টু এনশিওর ফুড সেফটি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ' শিরোনামের এ গবেষণায় বাজারে যেসব শিশুখাদ্য ও গুঁড়াদুধ বিক্রি হচ্ছে, সেগুলোর মেয়াদ ঠিকঠাক আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে আমদানি করা শিশুখাদ্যের মেয়াদের কেবল একটি লেবেল থাকার কথা, সেখানে প্রায়ই একাধিক লেবেল দেখা গেছে। আবার এসব লেবেলে যে মেয়াদের উল্লেখ থাকছে, ভার্চুয়ালি সেটার কোনো অস্তিত্ব নেই।

অন্যদিকে পোর্ট অব এন্ট্রিতে মানসহ মেয়াদের বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা থাকলেও সেটি একেবারেই নামমাত্র।

এসব কারণে গবেষণায় সতর্ক করে বলা হয়েছে, এই অপর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে বাজারে নিম্নমানের পণ্য প্রবেশের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এটি শুধু শিশুখাদ্যের ক্ষেত্রেই নয়, বরং অন্যান্য খাদ্যপণ্য ও খাদ্যপণ্যের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও প্রধান গবেষক নাসির উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সুপারশপ থেকে শুরু করে সাধারণ দোকানে শিশুখাদ্যসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য কীভাবে রাখা হয়, সেই রাখার মধ্যে কি কি ত্রুটি আছে, যে কারণে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয় এবং ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয় গবেষণায় সেই বিষয়গুলো উঠে এসেছে।'

তিনি বলেন, 'গুঁড়া দুধসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য এমন গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে, যেখানে প্যাকেটের ভেতরের বাতাস হয়ত কোনো কারণে বেরিয়ে যাচ্ছে, মান কমছে। আবার এক পণ্য থেকে অন্য পণ্যে কন্টেমিনেশনের সুযোগও তৈরি হচ্ছে। ফলে ভোক্তা দাম ঠিক দিয়েও কোয়ালিটি প্রোডাক্ট পাচ্ছেন না।'

নাসির উদ্দিন আরও বলেন, গবেষণার ফলাফল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনকে জানানো হবে। যাতে তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে ও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করতে পারে।  

গবেষণায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় এসব পণ্যের সাপ্লাই চেইনে কঠোর বিধি-নিষেধ ও নজরদারি জোরদারের গুরুত্বও তুলে ধরা হয়েছে। 

আরেক গবেষক ও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, 'পণ্যের গায়ে মেয়াদের উল্লেখ আছে। কিন্তু মেয়াদের লেবেল একটি হওয়ার কথা থাকলেও রয়েছে একাধিক লেবেল।'

তিনি বলেন, 'পোর্ট অব এন্ট্রিতে মেয়াদের একটি সিঙ্গেল এন্ট্রি নিশ্চিত করার কথা। আমদানির ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা থাকলেও আমাদের সব পোর্ট অব এন্ট্রিতে এটি করা হয় না। চট্টগ্রাম পোর্টে এক সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা হতো, কিন্তু এখনও হয় কি না, সেটি বলা যাচ্ছে না।' 

মতিউর রহমান আরও বলেন, 'এ পরিস্থিতিতে আমাদের মার্কেট লেবেলে এটি যাচাই করতে হবে। কারণ মানহীন পণ্য বিক্রির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এজন্য অবশ্যই পণ্য পরীক্ষা করতে হবে।'

গবেষণায় শিশুখাদ্য, কাঁচামালসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুপারিশ করা হয়। সেইসঙ্গে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে আইন বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

গবেষণাটিতে আরও বলা হয়েছে, এ সংকট শুধু আমদানি পর্যায়েই সীমাবদ্ধ নয়, পুরো সাপ্লাই চেইনজুড়েই। পণ্যের আমদানি থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সাপ্লাই চেইনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোল্ড চেইন মানা হচ্ছে না। আবার সুপারশপ ও গ্রোসারি শপগুলোও শিশুখাদ্য সংরক্ষণে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম মানছে না।

তবে স্টোরে ডেকোরেশনের প্রভাবে পণ্যের গুণমান কতটুকু ক্ষতি হচ্ছে- তা গবেষণায় উঠে আসেনি।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি একটি নির্দেশনার মাধ্যমে গুঁড়াদুধ ও শিশুখাদ্যের প্রতিটি চালানের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে। অর্থাৎ আমদানি হওয়া প্রতিটি চালানের পণ্যই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। তবে এই পরীক্ষাটা শুধু পণ্যে সীসার উপস্থিতি আছে কি না সেটা দেখার জন্য।

আণবিক শক্তি কমিশন ও ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ এই পরীক্ষা করত। তবে কখনো মেয়াদ নিয়ে এ ধরনের পরীক্ষা-নিরিক্ষা হয়ইনি।

ইনফ্যান্ট অ্যান্ড ইয়াং চিলড্রেন নিউট্রিশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইফতেখার রশিদ টিবিএসকে বলেন, 'এক্সপায়রি ডেট নিয়ে টেম্বারিং হতে পারে। কারণ লাগেজের মাধ্যমে বেবি মিল্কের চাহিদার বড় একটা অংশ দেশে প্রবেশ করে। এটা প্রায় মোট বাজারের ২০-৩০ শতাংশ।'

তিনি বলেন, 'যারা বৈধভাবে আমদানি করে তাদের প্রতিটি ব্যাচের বেবি মিল্ক বিএসটিআই নিয়মিত পরীক্ষা করে থাকে। তিন বছর পর পর লাইসেন্স প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আইপিএইচ (ইন্সটিটিউট অব পাবলিক হেলথ) নিজেরা পরীক্ষা করে এবং বিগত সময়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো যাচাই করে। সুতরাং এখানে টেম্পারিংয়ের সুযোগ একেবারেই কম।'

ইফতেখার রশিদ আরও বলেন, 'যে প্রতিষ্ঠান থেকে খাদ্যপণ্য আমদানি করা হয়, সেখানকার কাগজগুলোতে এক্সপায়রি ডেট দেওয়া থাকে। যেগুলো মার্কেটে যে পণ্য বিক্রি হচ্ছে তার সঙ্গে মেলালেই বিষয়টা উঠে আসে। আবার আমরাও অনেক সময় বিদেশ থেকে পরীক্ষা করে সেই রিপোর্টগুলো সংশ্লিষ্টদের কাছে দাখিল করি।'

আমদানিকারকদের তথ্যমতে, প্রতি বছর দেশে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন শিশুখাদ্য ও প্রায় এক লাখ টনের মত গুঁড়াদুধ আমদানি হয়ে থাকে। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.