ঈদের পরেই কারওয়ান বাজারের ১৭৬ টি দোকান স্থানান্তরিত হচ্ছে গাবতলীতে: মেয়র আতিক

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
19 March, 2024, 09:35 am
Last modified: 19 March, 2024, 12:19 pm

যেকোনো ভবিষ্যৎ বিপর্যয় এড়াতে আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের পরই রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে অবস্থিত প্রায় ১৭৬টি স্থায়ী দোকান দোকান গাবতলীতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পাইকারি কাঁচাবাজারে স্থানান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। 

সোমবার (১৮ মার্চ) গাবতলীতে ঢাকা উত্তরের প্রস্তাবিত কাঁচাবাজারে 'কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারস্থ ব্যবসায়ীদের গাবতলীস্থ আমিনবাজার পাইকারি কাঁচাবাজারে স্থানান্তরের নিমিত্তে' আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।

মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, 'ঈদের পরে কারওয়ান বাজারে ঢাকা উত্তরের পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা হবে। কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজার ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় এটি ধসে পড়তে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে বহু মানুষের জীবন হুমকিতে রয়েছে।'

পর্যায়ক্রমে কারওয়ান বাজারের সব পাইকারি ব্যবসায়ীকে গাবতলীতে স্থানান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।

প্রথম ধাপে কারওয়ান বাজার আড়ত মার্কেটের প্রথমতলার ৪০০ বর্গফুটের ৬২টি দোকান এবং দ্বিতীয়তলার ১৭০ বর্গফুটের ১১৪টি দোকান স্থানান্তর করা হবে বলে জানান মেয়র আতিকুল। 

তিনি বলেন, 'কারওয়ান বাজারস্থ পাইকারি কাঁচাবাজারের এই ব্যবসায়ীদের গাবতলীতে ঢাকা উত্তরের পাইকারি কাঁচাবাজারে স্থানান্তর করা হবে। দ্রুতই গাবতলিতে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে। বরাদ্দ দেওয়া হলে আপনারা যারা আসবেন না, তাদের দায় নিজেদের নিতে হবে। বরাদ্দ পাওয়ার পরে কেউ না এলে সেটি নিয়ম অনুযায়ী অন্যজনকে বরাদ্দ দিয়ে দেওয়া হবে।'

এছাড়া কারওয়ান বাজারে সম্পত্তি বিভাগ কর্তৃক বরাদ্দকৃত ১৮০টি টিনশেড দোকান আমিনবাজারে পাইকারি কাঁচাবাজারের আশেপাশের উন্মুক্ত স্থানে স্থানান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান আতিকুল।

তবে মতবিনিময় সভায় কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী নেতারা বরাবরের মতো এবারও কারওয়ান বাজার ছেড়ে যাবেন না বলে জানান। 

ব্যবসায়ীদের দাবি, কারওয়ান বাজারে যে মার্কেট তৈরি হয়েছে সেটি অন্য কোথাও গিয়ে গড়া সম্ভব নয়। তাই কারওয়ান বাজারেই আধুনিক পাইকারি বাজার তৈরি করে দেওয়ার দাবি জানান তারা।

সভায় কারওয়ান বাজার ক্ষুদ্র কাঁচামাল আড়ত সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, 'আমরা চাই কারওয়ান বাজারেই স্মার্ট পাইকারি মার্কেট নির্মাণ করে দেওয়া হোক। কারওয়ান বাজারের আড়তে প্রবেশ করতে ১১টি রাস্তা আছে। কিন্তু গাবতলীতে মাত্র একটি রাস্তা।' 

তিনি আরও বলেন, গাবতলীতে আড়ত চলে গেলে ওই এলাকায় যানজটের মহোৎসব হবে। এছাড়া গাবতলীতে যেভাবে দোকান করা হয়েছে, সেগুলো পাইকারি বাজারের উপযোগী নয়।

আরেক ব্যবসায়ী নেতা সাইফুর রহমান সবুজ বলেন, 'আমার আড়ত ভবন ১৯৯৬ সালে ৪০০ বর্গফুটের দোকান ৩ লাখ টাকা দিয়ে নিয়েছিলাম। এখন কি আমাদের আবার টাকা দিতে হবে?' 

ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র আতিক বলেন, 'ঢাকার মিরপুর, উত্তরা, মোহাম্মদপুর একদিনে গড়ে ওঠেনি। সময়ের পরিক্রমায় ঢাকার উন্নয়ন প্রসারিত হচ্ছে। কারওয়ান বাজার এখন ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে। একটি সিটির প্রাণকেন্দ্রে পাইকারি কাঁচাবাজার থাকতে পারে না। ট্রাক আসছে, ট্রাক যাচ্ছে, রাস্তা বন্ধ করে মালামাল নামছে। কোনো ডিসিপ্লিন নেই। রাস্তায় প্রচণ্ড ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়। কারওয়ান বাজার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কোনো নিরাপত্তা নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, স্মার্ট শহরের কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ এই পাইকারি কাঁচাবাজার থাকতে পারবে না।'

তিনি বলেন, গাবতলীতে যে কাঁচাবাজার রয়েছে, সেটি পরিকল্পিতভাবে সব কমপ্লায়েন্স মেনে নির্মাণ করা হয়েছে।

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, 'কারওয়ান বাজারের ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বা আগুন লাগলে বহু মানুষ হতাহত হবে। আমরা আর মৃত্যুর মিছিল দেখতে চাই না।

'মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কোনো ব্যবসা চলতে দেওয়া যাবে না। ঈদের পরে কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর শুরু হবে। ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিন।'

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, 'কারওয়ান বাজারের ট্রাক তেজগাঁওয়ের রাস্তা দখল করে রেখেছে। কারওয়ান বাজার স্থানান্তর করে ওই এলাকার পরিবেশ সুন্দর করতে হবে৷ গাবতলীতে স্থানান্তর হওয়ার পরে আপনাদের কী কী সুবিধা প্রয়োজন সে বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের সাথে আলাপ করবেন।'

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, 'আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই, কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। অতএব এটি বাস্তবায়ন হতেই হবে। স্থানান্তর হলে সব সুবিধাই পর্যায়ক্রমে নিশ্চিত করা হবে।'

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.