ঈদে পোশাকের খুচরা বিক্রি কমে যাওয়ায় লোকসানে পাইকারি বিক্রেতারা

বাংলাদেশ

18 March, 2024, 10:40 am
Last modified: 18 March, 2024, 12:42 pm
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঊর্ধ্বমুখী মুদ্রাস্ফীতি আর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি দামের মধ্যে এবারের ঈদ মৌসুমে খুচরা বিক্রেতারা পোশাক কম নিচ্ছেন দোকানে।

ঈদকে ঘিরে রোজার শুরুতেই পাইকারি ক্রেতাদের চাপে জমজমাট হয়ে উঠতো দেশের অন্যতম পাইকারি পোশাকের বাজার ইসলামপুর। কিন্তু এবার ৭ রোজা পেরিয়ে গেলেও এখনও জমে উঠেনি পোশাক বিক্রি। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঊর্ধ্বমুখী মুদ্রাস্ফীতি আর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি দামের মধ্যে এবারের ঈদ মৌসুমে খুচরা বিক্রেতারা পোশাক কম নিচ্ছেন দোকানে।

শুক্রবার দেশের অন্যতম পোশাকের বাজার ইসলামপুর, গুলিস্তান মার্কেট ঘুরে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতবারের তুলনায় তাদের বিক্রি কম হয়েছে প্রায় অর্ধেক। তবে ১০ রোজার পর থেকে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছেন তারা। 

ইসলামপুর গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ঈদুল ফিতরে ইসলামপুরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার পোশাক বিক্রি হয়।

শুক্রবার বিকালে মেসার্স জনী টেক্সটাইলের জনী প্রিন্ট শাড়ির বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা শূন্য দোকান। সেখানকার ম্যানেজার ওয়াসিম রেজা টিবিএসকে বলেন, "বিক্রি এবার ভালো না। গতবারের তুলনায় ৬০ শতাংশ বিক্রি কম।"

তিনি বলেন, সারাদেশ থেকে এখানে খুচরা ক্রেতারা আসে। তাদের বিক্রি কম তাই তারা মালও কম কিনছেন। 

ছবি: টিবিএস

ইসলামপুরের রাজকণ্যা প্রিন্ট শাড়ির ম্যানেজর মনির হোসেন কে দেখা যায় ৩ জন বিক্রয়কর্মীকে নিয়ে বসে আছেন ক্রেতার অপেক্ষায় । বিকাল ৪ টার দিকে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, "দোকান খুলে বসে আছি ক্রেতার জন্য, ক্রেতা নেই। পাশের পাকিজা প্রিন্ট শাড়ির দোকান বন্ধ করে চলে গেছে ক্রেতা নেই দেখে।"

বেচাবিক্রি কম কেন– জানতে চাইলে এই পাইকারি দোকানের ম্যানেজার বলেন, "এবার খুচরা বাজারে বিক্রি কম। কেউই বিপণি-বিতানে আসছে না। শবে বরাতের পরে কিছু কাপড় নিয়েছিল, সেগুলো এখনও তাদের বিক্রি হয়নি।

মনির হোসেন বলেন, "আমাদের এবার ৫০ শতাংশ বিক্রি কম হয়েছে। সধারণত রোজার ১৫ দিন আগে থেকে ১৫ রমজান পর্যন্ত ভালো চলে আমাদের পাইকারি বিক্রি। তবে এবার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি, সেইসঙ্গে ঊর্ধ্বমুখী মুদ্রাস্ফীতিতে পোশাক বিক্রি কম হবে। মানুষ তো খাওয়ার পরে পোশাক কিনবে।" 

দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি কাপড়ের বাজার পুরান ঢাকার ইসলামপুর ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রোজা শুরুর ১৫ থেকে ২০ দিন আগে বিক্রি শুরু হয় এবং চলে ১৫ রমজান পর্যন্ত। মোটামুটি ২০ রমজান নাগাদ তাদের পোশাক প্রায় খালি হয়ে যায়।  

ইসলামপুর ঘুরে দেখা গেছে, দোকানগুলো এখনও পোশাকে ভরা। বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরগুলোতে  এই সময় তাদের অর্ধেকেরও বেশি পণ্য বিক্রি হয়ে যেত। 

রাখি প্রিন্ট শাড়ির বিক্রয় কর্মী হৃদয় খান বলেন, "এবার পোশাক বিক্রি নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি।"

ইসলামপুরে এমন ১৫টি দোকানে কথা হয়– যারা প্রায় সবাই জানায় গতবারের তুলনায় এবার তাদের বিক্রি কমে গেছে অর্ধেক।

ইসলামপুরে সাড়ে ৬,৫০০ এর বেশি শো-রুম আছে। মূলত ঈদ সামনে রেখে দর্জির কাছে বানানো পোশাকের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাজার হাজার খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা ইসলামপুরে কাপড় কিনতে আসেন।

ছবি: টিবিএস

সাধারণত নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল ও কেরাণীগঞ্জের বিভিন্ন কারখানার কাপড় এখানে আসে। পাজামা-পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, থ্রিপিস, প্যান্ট পিস, লুঙ্গিসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় বিক্রি হয় ইসলামপুরে।

এদিকে, গুলিস্তানের জেনিয়া গামেন্টসের বিক্রয় কর্মী মোহম্মদ রিপন বলেন, "আমরা বিভিন্ন ধরনের প্যান্ট পাইকারি বিক্রি করি। গত বছর এ্ই সময় এমন ছিল যে ক্রেতার চাপে আপনার সঙ্গে কথা বলার সময় হতো না। আর এখতো ক্রেতাই নেই।"

"সারাদিনে ২৫-৩০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেছি।  আমরা সারাবছর এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু আমাদের বিক্রি অর্ধেক কমে গেছে," বলেন তিনি।

নাফিজা গার্মেন্টসের বিক্রিয় কর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, "নিম্ন-মধ্যবিত্তদের বাজার করতে করতেই তো টাকা শেষ। পোশাক কিনবে কী করে! যারা দুইটা কিনতো, তারা হয়তো এবার একটা কিনবে।"

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৪৪ শতাংশ, আর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৩৩ শতাংশ।
 
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, "আমরা আশা করছি আগামী শুক্রবার থেকে খুচরাতে ভালো বিক্রি শুরু হবে। ঈদের বোনাস পেতেও এই মাসের ২৫ তারিখ চলে যাবে।"
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.