করোনা সংক্রমণের চার বছর: এখনও কোভিড-পরবর্তী জটিলতায় ভুগছে অনেকে

বাংলাদেশ

08 March, 2024, 01:55 pm
Last modified: 08 March, 2024, 01:55 pm

২০২১ সালের জুনে করোনা পজিটিভ হয়ে রাজধানীর দুটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বেসরকারি চাকরিজীবী রিয়াজ উদ্দিন। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে ৬ দিন থাকতে হয়েছে তাকে। হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় নিয়মিত স্টেরয়েড দেওয়া হতো তাকে। কোভিড থেকে সেরে ওঠার এক বছর পর দুই হিপ বোন নষ্ট হয়ে গেছে রিয়াজ উদ্দিনের। এখন হিপ বোন প্রতিস্থাপনের জন্য দিল্লিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। এতে তার খরচ হবে প্রায় ১৮ লাখ টাকা।

২০২০ সালের জুনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন বেসরকারি চাকরিজীবী কুতুব উদ্দিন জসিম। ৮ দিন কোভিড পজিটিভ ছিলেন তিনি। কোভিড পজিটিভ থাকার সময় কোনো জটিলতা না থাকলেও নেগেটিভ হওয়ার পর তার ফুসফুসে সংক্রমণ হয় এবং অ্যাজমা হয়। এখন নিয়মিত ইনহেলার নিতে হয় তাকে, খেতে হয় ওষুধ। দুই দিন ওষুধ বন্ধ রাখলে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় তার।

দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। গত চার বছরে ২০ লাখ ৪৮ হাজার ৭৯৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২৯ হাজার ৪৯১ জন। সুস্থ হয়েছে ২০ লাখের বেশি মানুষ।

তবে সুস্থ হওয়াদের মধ্যে অনেকেই রিয়াজ ও জসিমের মত দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় ভুগছেন।

চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনাভাইরাসের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব শারীরিক স্বাস্থ্যের বাইরে মানসিক সুস্থতার ওপরও প্রভাব ফেলেছে। করোনা থেকে সেরে ওঠা অনেকেই এখনও দুর্বলতা, ভুলে যাওয়া, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, 'করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর অনেকের আবার ভুলে যাওয়া, ক্লান্ত লাগা, ঘুমের সমস্যার মতো নানা জটিলতা দেখা দেয়। 

'এসব সমস্যার তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। এসব জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে বই পড়া, গান শোনা, চিন্তা কম করা, সামাজিক কাজে নিজেকে যুক্ত রাখতে হবে।'

এছাড়া করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা বাসায় চিকিৎসা নিয়েছে, তাদের তুলনায় হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার বেড়েছে বলে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ-এর (আইসিডিডিআরবি) এক গবেষণায় উঠে এসেছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে আগে যাদের ডায়াবেটিস ছিল না, তাদের মধ্যে প্রতি এক হাজার জনে ১০ জন প্রতি মাসে নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি। এছাড়া যেসব ডায়বেটিস রোগীর আগে ওষুধে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকত, তাদের এখন ইনসুলিন নিতে হচ্ছে।

আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী ড. ফারজানা আফরোজ টিবিএসকে বলেন, 'কোভিডের প্রাদুর্ভাবের সময় যারা হাসপাতালে ভর্তি ছিল বা বাসায় চিকিৎসা নিয়েছে, এমন ৩৬২ জন রোগীর ওপর এই গবেষণা চালানো হয়। কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর এক মাস, তিন মাস ও পাঁচ মাস পর মোট তিনবার তাদের পরবর্তী শারীরিক অবস্থা ফলোআপ করা হয়। ফলোআপের মাধ্যমে দেখেছি তাদের কী কী সমস্যা রয়ে গেছে, যা কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার আগে ছিল না। গত বছর এই গবেষণা শেষ হয়েছে। 

'কোভিড থেকে সেরে ওঠার ৯ মাস, ১৮ মাস ও ২৪ মাস পর আমরা আবার ফলোআপ করেছি। ডাটা অ্যানালাইসিস শেষে আগামী মাসে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।'

আবার বাড়ছে করোনার সংক্রমণ

ধীরগতিতে হলেও দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। দেশে করোনার নতুন উপধরন জেএন১ শনাক্ত হওয়ার কারণে সংক্রমণ কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে বুধবার (৬ মার্চ) করোনা শনাক্তের হার ছিল ৮.০৪ শতাংশ, জানুয়ারি মাসের শুরুতেও যা ৫ শতাংশের নিচে ছিল। তবে এখন সংক্রমণ বাড়লেও মহামারির আতঙ্ক আর তেমন নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর ইমিরেটাস এবিএম আব্দুল্লাহ টিবিএসকে বলেন, 'নতুন সাবভেরিয়েন্টের কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে। যদিও এই ভেরিয়েন্টে মৃত্যুঝুঁকি কম, কিন্তু এটি দ্রুত ছড়ায়। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে এবং হাত ধুতে হবে।'

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. এম মুশতাক হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'করোনা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কমিটি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের টিকা নেওয়া ও মাস্ক পরার সুপারিশ করেছে। করোনা প্রতিরোধে চিকিৎসা সেবাদান কেন্দ্রগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিকিৎসা দিতে হবে।'

দেশে আবারও করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় টিকা দেওয়া শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২১ জানুয়ারি থেকে রাজধানী ঢাকার ৯টি কেন্দ্রে শুরু হয়েছে টিকাদান কার্যক্রম। তবে নতুন করে টিকাডান কার্যক্রম শুরু হলেও মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার আগ্রহ কম। 

কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে, গত দুই মাসে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছে মাত্র ৭২ জন, দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছে ৮৭ জন, তৃতীয় ডোজ নিয়েছে ৫১৮ জন, আর চতুর্থ ডোজ নিয়েছে ৩ হাজার ৪৫৫ জন।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.