বাংলাদেশের নতুন ৭ প্রতিমন্ত্রীর সম্পর্কে যা জানা দরকার

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
02 March, 2024, 08:00 pm
Last modified: 02 March, 2024, 08:48 pm
মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক পরিচয় জানার আগ্রহ রয়েছে নাগরিকদের। টিবিএসের এই প্রতিবেদনে নবনিযুক্ত ৭ প্রতিমন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত পোর্টফলিও তুলে ধরা হয়েছে -

গতকাল (১ মার্চ) শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রিসভার নতুন ৭ প্রতিমন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে অর্থ, পরিকল্পনা, স্থানীয় সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীরা রয়েছেন। 

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে নতুন প্রতিমন্ত্রীদের শপথ পড়ান। নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে তাঁরা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, পরে গোপনীয়তার শপথ নেন।

মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক পরিচয় জানার আগ্রহ রয়েছে নাগরিকদের। টিবিএসের এই প্রতিবেদনে নবনিযুক্ত ৭ প্রতিমন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত পোর্টফলিও তুলে ধরা হয়েছে -

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার

জাতীয় সংসদের ৪৭ নম্বর এবং নওগাঁ-২ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন – শুক্রবার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া শহীদুজ্জামান সরকার। একই আসন থেকে ১৯৯১, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হোন।

নওগাঁর ধামুরহাটের বীরগ্রামে ১৯৫৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন শহীদুজ্জামান সরকার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করে তিনি মুন্সেফ হিসেবে সরকারি চাকুরিতে যোগ দেন। পরে নওগাঁ জজ কোর্টে আইনজীবী হিসাবে কাজ করতেন।

২০১৪ সালে দশম  সংসদে সরকারি দলীয় হুইপের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রথম বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং পরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

চার নারী প্রতিমন্ত্রী- শামসুন নাহার চাঁপা, নাহিদ ইজাহার খান, ওয়াসিকা আয়শা খান ও ডা. রোকেয়া সুলতানা।

অর্থ-প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান

দেশের প্রথম নারী অর্থ-প্রতিমন্ত্রী হলেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান ।

ওয়াসিকার জন্ম ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই। তিনি বাণিজ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

ওয়াসিকা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে। পেশায় তিনি ব্যাংকার ছিলেন।

২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত ওয়াসিকা।

তিনি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক হন। এছাড়া তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

ওয়াসিকা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর জন্য কাজ করা ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ নামক নেটওয়ার্কের ভাইস চেয়ারপারসন। এছাড়া তিনি চিটাগং আর্টস কমপ্লেক্সের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
২০২১ সালের জুনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বপালন করেন ওয়াসিকা।

নজরুল ইসলাম চৌধুরী, মো. শহীদুজ্জামান সরকার ও মো. আব্দুল ওয়াদুদ।

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ

রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ সরকারকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে।

মো: আব্দুল ওয়াদুদের পৈতৃক বাড়ি রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহ গ্রামে। ১৯৫২ সালের ২১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শিক্ষাজীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

পেশায় ব্যবসায়ী মো. আব্দুল ওয়াদুদ রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন। তিনি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০০৮ এবং ২০১৪ সাল  দুই মেয়াদে রাজশাহী-৫ আসনের এমপি ছিলেন। এসময় তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

২০১৮ সালে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। তবে ২০২৪ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন।

বেগম রোকেয়া সুলতানা,  প্রতিমন্ত্রী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর শপথ নিয়েছেন  ডা. বেগম রোকেয়া সুলতানা। তিনি  জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন জয়পুরহাট জেলা থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান। শহীদ পরিবারের সন্তান রোকেয়া সুলতানার বাবার পৈতৃক বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামে।

তাঁর বাবার নাম কবি মাহতাব উদ্দীন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মাহতাব উদ্দীনকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে হত্যা করে। মাহতাব পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ছিলেন।

বাবার চাকরিসূত্রে রোকেয়া পড়ালেখা করেছেন কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলায়। তিনি কুড়িগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং কুড়িগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন।

চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদ। এছাড়া ছাত্রজীবনে তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
শামসুন নাহার চাঁপা শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের এমপি শামসুন নাহার চাঁপা হয়েছেন সরকারের নতুন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। তিনি আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক। তাঁর ভাই সাবেক কৃষিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি শামসুন্নাহার হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ছিলেন। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ফেরার সময় তিনি ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ছিলেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও তাঁর ভূমিকা ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগে অধ্যয়ন করেন শামসুন নাহার চাঁপা। পড়ালেখা শেষ করে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগদান করে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা হিসেবে ২০১৫ সালে অবসরে গ্রহণ করেন। অবসর থেকে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হোন তিনি।

সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান

মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদার মেয়ে এবং জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যা নাহিদ ইজাহার খান সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। এর আগে একাদশ সংসদে তিনি সংসদেও তিনি সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।

তার পৈতৃক আদি নিবাস ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামে। ১৯৭২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি  ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।

নজরুল ইসলাম চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী

চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।

তিনি চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ উপজেলা এবং সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়ন, কালিয়াইশ ইউনিয়ন, বাজালিয়া ইউনিয়ন, ধর্মপুর ইউনিয়ন, পুরানগড় ইউনিয়ন ও খাগরিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত) আসন থেকে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন।

মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর জন্ম ১৯৫২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, চন্দনাইশ উপজেলায়। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.