রওশনের নেতৃত্বে আসছে নতুন “জাতীয় পার্টি”

বাংলাদেশ

19 February, 2024, 10:55 am
Last modified: 19 February, 2024, 11:00 am
রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আগামী ৯ মার্চ জাতীয় সম্মেলন বাস্তবায়নের জন্য কমিটি ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ

নির্বাচনে ভরাডুবির পরে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ার পর এবার রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নতুন আর একটি "জাতীয় পার্টি" গঠন হতে যাচ্ছে। রওশন এরশাদ তাঁর সমর্থক নেতা-কর্মীদের নিয়ে জাতীয় কাউন্সিল করার জন্য কমিটি ঘোষণা করেছেন।

তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলছেন, তারা এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

রবিবার রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আগামী ৯ মার্চ জাতীয় সম্মেলন বাস্তবায়নের জন্য কমিটি ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ। সংবাদ সম্মেলনে রওশনের সাথে ছিলেন কাজী ফিরোজ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।

সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কাজী ফিরোজ রশীদকে। সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে সহ-আহ্বায়ক এবং সফিকুল ইসলামকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।

এর কিছুক্ষণ পরেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের নিজ ক্ষমতাবলে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান পদসহ দলীয় সকল পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "উনি (রওশন এরশাদ) যা করার করুক, তাতে আমাদের কিছু না। তিনি আমাদের কাছে সম্মানের তাই কিছু বলছি না। তাদের কর্মসূচির সাথে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।"

'জাতীয় পার্টি ভেঙ্গে নতুন আর একটি দল হলে তাদের পদক্ষেপ কি হবে' এমন প্রশ্নের জবাবে চুন্নু বলেন, "যা করার করুক। আমরা এসব নিয়ে চিন্তিত নই।"

দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে রওশন এরশাদ বলেন, "জাতীয় পার্টি এখন চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে এবং দলকে আবার সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে নেতা-কর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ মার্চ জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা দিচ্ছি।"

রওশন এরশাদ আরো বলেন, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ দলের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতারা, এরশাদভক্ত সর্বস্তরের অগণিত নেতা-কর্মী তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা সবাই মিলে সুন্দর একটি জাতীয় সম্মেলন উপহার দিয়ে জাতীয় পার্টিতে আবার প্রাণশক্তি ফিরিয়ে আনতে চান। কারণ, দেশ ও জাতির জন্য রাজনীতির অঙ্গনে জাতীয় পার্টির প্রয়োজনীয়তা এখন অপরিহার্য।

জাতীয় সম্মেলন বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ নেতার সমন্বয়ে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ। দশম জাতীয় সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটিতে কাজী ফিরোজ রশীদকে আহ্বায়ক, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে সহ-আহ্বায়ক , গোলাম সরোয়ার মিলনকে যুগ্ম আহ্বায়ক, সফিকুল ইসলাম সেন্টুকে সদস্যসচিব এবং জিয়াউল হক মৃধাকে কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছে।

রওশন এরশাদের দলের জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার বিষয়ে বনানীতে দলের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, "আমরা কোনো কাউন্সিল ডাকি নাই। বাইরে কে কাউন্সিল ডাকল, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই। অন্যরা ১০টা কাউন্সিল করতে পারে, কমিটি হতে পারে তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না।"

তিনি বলেন, "জাতীয় পার্টির নামে ৪-৫টা দল আছে। জাতীয় পার্টি মঞ্জু গ্রুপ, জাতীয় পার্টি কাঁঠাল গ্রুপ, সাইকেল মার্কা, মই মার্কা, এমন অনেক গ্রুপ আছে। আরেকটা হতেই পারে। সবার স্বাধীনতা আছে। কেউ জাতীয় পার্টির নামে ব্র্যাকেটবন্দি আরেকটা দল করতেই পারেন। সেখানে আমরা বাধা দিতে পারি না।"

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীদের একটা অংশ ভোটে দলের ভরাডুবির পর শীর্ষ নেতাদের পদত্যাগ দাবি করে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন। পরে তাঁরা সারা দেশের পরাজিত প্রার্থীদের নিয়ে একটি সভা করে জাপার নেতৃত্বের সমালোচনা করেছিলেন। এমন কর্মকাণ্ডের জন্য কয়েকজন নেতাকে জাপা থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়।

জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা থেকে বাদ পড়া নেতাদের একজোট হওয়ার চেষ্টার খবর পাওয়া যাচ্ছিল কয়েকদিন ধরে। ২৮ জানুয়ারি দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ নিজেকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদকে দলের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দেন। আর জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির ঘোষণা দেন রওশন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বাবলাকে ঢাকা-৪ আসনে দলের মনোনয়ন দিয়েছিলেন জি এম কাদের। ফিরোজ রশীদকে প্রার্থী করা হয় ঢাকা-৬ আসনে। তবে আওয়ামী লীগ ছাড় না দেওয়ায় তিনি ভোটে লড়তে রাজি হননি।

আগের দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছাড়ে সংসদ সদস্য হলেও বাবলা এবার হয়েছেন তৃতীয়। সেখানে নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জিতেছেন ক্ষমতাসীন দলেরই নেতা আওলাদ হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাবলা বলেন, সম্মেলনের মধ্য দিয়ে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে 'পচা মাংসের দলা ফেলে দিয়ে নতুন উদ্যোমে জাতীয় পার্টি তৈরি হবে'।

তিনি বলেন, "আমরা শুনেছি নিজের থেকে দল বড়, দলের থেকে দেশ বড়। আর এবার আমরা কী দেখলাম? দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে নিজে বড়, আর নিজের চাইতে স্ত্রী বড়। এইভাবে কোনো দল চলতে পারে না। তাই জাতীয় পার্টির প্রতি জনগণের যে প্রত্যাশা, তার প্রতিফলন এবার আমরা ঘটাতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি।"

এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়কে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয় দলটি।

দলের যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.