সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথ: ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা

বাংলাদেশ

12 February, 2024, 11:40 am
Last modified: 12 February, 2024, 12:11 pm
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আজ সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের উদ্বোধন করবেন। পুরোপুরি চালু হলে এই বন্দর দিয়ে পাথর ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করা সম্ভব হবে। এতে খরচ ও সময় দুটোই বাঁচবে।

বাংলাদেশের রাজশাহী ও ভারতের মুর্শিদাবাদের মধ্যে আজ সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে নৌ যোগাযোগ। এদিন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর থেকে মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দরের উদ্দেশে দুই টন তুলা নিয়ে একটি নৌযান ছেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, নৌপথটি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে নতুন গতি আনবে। সেইসঙ্গে এই নৌপথের কারণে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের খরচও অনেক কমে আসবে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আজ সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের উদ্বোধন ও দুই দেশের মধ্যে নৌপথে পণ্য পরিবহনের উদ্বোধন করবেন।

তিনি বলেন, 'উদ্বোধনের দিন আপাতত দুই টন তুলা নিয়ে সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর থেকে একটি ছোট জাহাজ ছেড়ে যাবে। ওইদিন মায়া নৌ বন্দর থেকেও একটি জাহাজে পণ্য আসবে। তবে ভারত থেকে কি পণ্য আসবে তা কাল-পরশুর মধ্যে জানা যাবে।'

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোস্তফা কামাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'মায়া বন্দর থেকে সুলতানগঞ্জ বন্দরের দূরত্ব ১৯ কিলোমিটার। এটি আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। এতে শুধু পণ্য নয়, যাত্রীও পরিবহন করা হবে। এটি উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হবে।'

বিআইডব্লিউটিএর বন্দর কর্মকর্তা ওয়াকিল আহমেদ টিবিএসকে বলেন, 'পুরোপুরি চালু হলে এই বন্দর দিয়ে পাথর ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করা সম্ভব হবে, যা বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পাথর ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করা হয়ে থাকে। এতে খরচও সাশ্রয় হবে।'

তিনি আরও বলেন, `একইভাবে ভারতের কাশ্মীর থেকে ফলমূল ছাড়াও এই পথ দিয়ে আরও কিছু পণ্য আমদানির সম্ভাবনা রয়েছে।'

বিআইডব্লিউটিএর এই কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা নদীর নাব্যতা বাড়ানো হলে এবং রুটটি আরিচা পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা গেলে ২৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রুটের পুরোপুরি সুবিধা পাওয়া যাবে।

তিনি জানান, এ রুটে স্বল্প নব্যতাসম্পন্ন নৌযান চলাচল করবে। সুলতানগঞ্জ ও মায়াকে পোর্ট অব কল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

কমবে রপ্তানি খরচ

এই রুট চালু হওয়ার মাধ্যমে পাথর আমদানিতে সময় ও খরচ দুটোই বাঁচবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আব্দুল ওয়াহেদ টিবিএসকে বলেন, 'এ রুটের মাধ্যমে ভারত থেকে পাথর ছাড়াও চাল, গম, ভুট্টা ও পোল্ট্রি ফিড ও পেয়াঁজ রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে।'

বিআইডব্লিউটিএর তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে মাদার ভেসেলের মাধ্যমে ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে পাথর আমতানি করতে প্রতি মেট্রিক টনে ২০ মার্কিন ডলার খরচ হয়। কয়েকটি স্থল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে সিঅ্যান্ডএফ এর মাধ্যমে পাথর আমদানিতে খরচ হয় ১৩ মার্কিন ডলার। নতুন এই রুট দিয়ে আমদানি করতে খরচ হবে ১০ ডলারেরও কম।

আরও জানা গেছে, স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানির পুরো খরচ ডলারে পরিশোধ করতে হয়। এই নৌরুটের মাধ্যমে পাথর আমদানি এবং দেশিয় মুদ্রায় পরিবহন করা সম্ভব হবে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে ও বাংলাদেশের বহুলোকের কর্মসংস্থান হবে।

বিআইডব্লিউটিএর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১ মার্চ থেকে মে মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত মাত্র আড়াই মাসে চট্টগ্রাম ও অন্যান্য সমুদ্র বন্দর দিয়ে ৩৫ লাখ মেট্রিক টন পাথর আমদানি হয়েছে, যার মূল্য ৬৯.১ মিলিয়ন ডলার।

বিআইডব্লিউটিএ জানায়, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য যে পরিমাণ পাথর লাগে তার ৫ শতাংশ চাহিদাও পূরণ করতে পারছে না দেশের পাথরের উৎসগুলো। এজন্য বিদেশ থেকে বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভিয়েতনাম, ওমান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভারত থেকে প্রচুর পাথর আমদানি করা হয়।

নাব্যতা নিয়ে উদ্বেগ

কিছু অংশে নাব্যতা কম থাকায় সুলতানপুর-মায়া রুটে এখন ভারি জাহাজ চলাচল করতে পারবে না।

বিআইডব্লিউটিএর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শতে বলেন, 'রাজশাহীর এই অংশটি ফারাক্কা ব্যারেজের মুখেই অবস্থিত হওয়ায় বছরের বেশিরভাগ সময়ই এখানে নাব্যতা কম থাকে। নিয়মিত ড্রেজিং করে নাব্যতা না বাড়ালে এই রুট পুরোপুরি কার্যকরী হবে হবে না।'

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.