চিকিৎসা শেষে ভুটানে ফেরার অপেক্ষায় মেডিকেল ভিসায় বাংলাদেশে আসা প্রথম রোগী

বাংলাদেশ

10 February, 2024, 10:15 am
Last modified: 10 February, 2024, 12:31 pm
কারমা দেমা বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটের ১৩-তলায় অবস্থিত একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে এসে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।

ভুটানের ২৩ বছর বয়সী কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী কারমা দেমা। কয়েক বছর আগে নাকের গহ্বরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে চিকিৎসায় ক্যানসারমুক্ত হলেও রেডিওথেরাপিজনিত জটিলতায় নাক নষ্ট হয়ে যায় তার। পরে সেখানে দুই দফা অপারেশন করেও নাক পুনর্গঠনে ব্যর্থ হয় চিকিৎসকেরা।

পরবর্তীতে কারমা বাংলাদেশে এসে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেন। এতে করে তিনি মেডিকেল ভিসায় দেশে চিকিৎসা নিতে আসা প্রথম বিদেশি রোগীর তালিকায় নাম লেখান। সম্প্রতি তার নাক রিকনস্ট্রাকশন সার্জারি সফল হয়েছে। বর্তমানে তিনি ভালো আছেন। শিগগিরিই দেশে ফিরে যাবেন।

গতকাল ৯ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে সার্জনদের তিনটি টিম যৌথভাবে প্রায় ৯ ঘণ্টা ধরে নাক রিকনস্ট্রাকশন সার্জারি করে কারমা দেমার। পুরো সার্জারির তত্ত্বাবধানে ছিলেন বার্ন ইনস্টিটিউটের তৎকালীন প্রধান সমন্বয়ক ও বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা সামন্ত লাল সেন।

চিকিৎসকেরা বলেছেন, কারমার নাকের গঠন এখন অনেকটা ভালো হয়েছে। তিন থেকে ৬ মাস পর তার আরেকটি ছোট সার্জারি করা হবে।

কারমা দেমা বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটের ১৩-তলায় অবস্থিত একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে এসে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।

কারমা দেমা পরিবারের একমাত্র মেয়ে ও তার দুই ভাই। তার বাবা ভূটানের একজন সেনা সদস্য ও বড় ভাই একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করে। তাদের জন্য কারমার চিকিৎসা ব্যয় বহন করা কঠিন ছিল। তাই তারা ভূটান সরকারের সহায়তা চেয়েছিলো। 

ভূটান ও বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় কারমার চিকিৎসা হয়েছে। পরিবারকে কোন অর্থ ব্যয় করতে হয়নি। এর আগে ভারতেও কারমার চিকিৎসা হয়েছে ভারত ও ভূটান সরকারের সহায়তায়।

কামরা দেমার বড় ভাই কারমা ফুঁনথো টিবিএস-কে বলেন, "আমার বোন এখন অনেক ভালো। সেকেন্ড টাইম ফিনিশিং অপারেশন বাকি আছে। ভূটান ও বাংলাদেশ সরকারের কোলাবেরশনে চিকিৎসা হচ্ছে। আমাদের কোন খরচ দিতে হচ্ছে না। বাংলাদেশের চিকিৎসা ও সার্ভিসে আমরা খুব খুশি। এর আগে ২০২০ সাল থেকে ভারতে দেড় বছরের মত চিকিৎসা হয়েছিলো তার।"

তিনটি অপারেশন টিমের একটির প্রধান শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারির সহযোগী অধ্যাপক ডা হাসিব রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা একটা সার্জারি করেছি। রোগীর নাকের এখন একটা স্ট্রাকচার দাঁড় করিয়েছি। তার নাকে আমরা সফট টিস্যু লাগিয়েছি। এরপর আরেকটা অপারেশন লাগবে। তবে সেটি আগের তেমন বড় সার্জারি না।"

''সার্জারিতে কারমা দেমার বুকের পাঁজরের তরুণাস্থি ও হাতের চামড়া/টিস্যু দিয়ে ফ্রি ফ্ল্যাট করে মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। এটি একটি জটিল অপারেশন। ভারতে তার দুইটা অপারেশন করা হয়েছিলো। তবে সামহাউ সেগুলো সফল হয়নি'' যোগ করেন ডা হাসিব রহমান। 

রোগী কারমা দেমা; ছবি: সংগৃহীত

ডা হাসিব রহমান বলেন, "নাক রিকন্ট্রাকশনের এ ধরনের সার্জারি বাংলাদেশে আগেও অনেক হয়েছে। আমাদের দেশে ক্যান্সার রোগী বা বার্নের রোগীদের এ ধরনের সফল সার্জারি করা হয়েছে। কিন্তু কারমার ঘটনাটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তিনি বিদেশি রোগী। অফিসিয়ালি চিকিৎসা ভিসায় তিনি বাংলাদেশে এসেছেন।"

যেভাবে বাংলাদেশে আসলেন কারমা দেমা

২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের তৎকালীন প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্লাস্টিক সার্জারি টিম ভুটানে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুদেশের সরকারের উদ্যোগে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে সাত দিনব্যাপী প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্প পরিচালিত হয়। ঐ ক্যাম্পে বাংলাদেশের সার্জনরা ১৬টি সফল জটিল প্লাস্টিক সার্জারি করেন। সেই ক্যাম্পেই প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে নাক ঠিক করার জন্য কারমা দেমাকে নিয়ে আসা হয়েছিল।

ডা হাসিব রহমান বলেন, ভুটানে কোনো প্ল্যাস্টিক সার্জারি ডিপার্টমেন্ট নেই। তাই সেখানে কারমার সার্জারির ব্যবস্থা ছিল না। এজন্য তাকে আমরা বাংলাদেশে আসতে বলি। পরে দুই দেশের সরকারের সহযোগিতায় কারমা দেমা ও তার এক ভাই গত ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে চিকিৎসার জন্য আসেন।"

ভবিষ্যতে আরো বিদেশি রোগী আসবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, "আমরা সব সময় শুনি বাংলাদেশে থেকে রোগী বিদেশে যায় চিকিৎসা নিতে। কিন্তু ভুটানের এই রোগীই প্রথম রোগী যে মেডিকেল ভিসায় বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। আমাদের চিকিৎসকেরা অনেক কষ্ট করে তাকে সুস্থ করেছে। আশা করি ভবিষ্যতেও আরও বিদেশি রোগী আসবে। এই রোগী কিন্তু ইন্ডিয়াতে গিয়েও চিকিৎসা নিয়েছিলো।"

সামন্ত লাল আরও বলেন, "গত কয়েক দিন আগে নেপালের রাষ্ট্রদূত আমার কাছে এসেছিল। আমি তাকেও এই অফারটা দিয়েছি। ভূটানের মত নেপালে গিয়ে আমরা ক্যাম্প করবো। সেখানকার কোন জটিল রোগী থাকলে আমাদের কাছে তারা পাঠাতে পারে।"

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, "প্ল্যাস্টিক সার্জারি একটি বিরাট বিষয়- বার্ন, মাইক্রোসার্জারি, রিকনস্ট্রাকশন সার্জারি ভিন্ন ভিন্ন সব কমপোনেন্ট। বার্ন ইনস্টিটিউটে সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি মানুষের এদেশের চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা বাড়বে।"

কারমা দেমার চিকিৎসার বিষয়ে আজ (শনিবার) এক প্রেস কনফারেন্সে বিস্তারিত জানাবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা সামন্ত লাল সেন। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.