দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর মনিটরিং করা ও চাঁদাবাজি বন্ধের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং ও চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য সকল সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসাথে দুর্নীতি দমন, ছিনতাই, কিশোর গ্যাং এর কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে জোরালো পদক্ষেপ নিতে বলেছেন তিনি।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন সরকার প্রধান।
গতকাল (সোমবার) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় বিভিন্ন খাতে শেখ হাসিনা একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে বলে সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।
মাহবুব হোসেন বলেন, "বৈঠকে সকল সচিব, সচিব পদমর্যাদায় দায়িত্বরত বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানরা অংশ নিয়েছিলেন। সকাল ১০ টায় শুরু হয়ে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত হয় এই সভা।" সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সচিবদের সাথে এ ধরনের বৈঠক করেছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, "দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার মনিটরিং জোরদার করার পাশাপাশি চাঁদাবাজি বন্ধে জোরালো পদক্ষেপ নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে চাঁদাবাজির ভূমিকা আছে বলে শোনা যায়। এটা যাতে কোনোভাবেই ঘটতে না পারে।"
একইভাবে মুদ্রাস্ফীতি যাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মুদ্রাষ্ফীতি জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে কম থাকতে হবে। কর আদায় বাড়াতে করের আওতা বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। দেশে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ রয়েছে যাদের কর দেওয়ার সক্ষমতা আছে, কিন্তু কর দিচ্ছেন না। তাদেরকে করের আওতায় আনতে হবে। করের হার না বাড়িয়ে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে হবে।"
তিনি বলেন, "বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য বিশেষ করে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) উদ্যোগ নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। অহেতুক যাতে বিনিয়োগকারীদের হয়রানিতে পড়তে না হয়, সেই ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।"
প্রধানমন্ত্রী রপ্তানি আয় বাড়াতে কৃষি, পাট, চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের মত সুবিধা দিতে বলেছেন। কারণ এই তিনটি পণ্যে মূল্যসংযোজন বেশি করার সুযোগ রয়েছে। তিনি নতুন বাজারে বিশেষকরে মধ্যপ্রাচ্য, ইষ্ট ইউরোপ, ইষ্ট এশিয়া ও আফ্রিকার বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে বলেছেন। এসব বাজারে ওষুধ, পোশাক, খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
মাহবুব হোসেন বলেন, "প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব শুধু দুদকের নয়। সচিবদেরও দায়িত্ব রয়েছে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের যেসব সার্ভিস পয়েন্ট রয়েছে, সেখানে যাতে দুর্নীতি না হয়, সেজন্য কৌশল নিতে হবে। প্রয়োজনে যেকোনো শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"
নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করেছেন উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, "এমন প্রকল্প নিতে হবে যাতে জনসাধারণের কল্যাণ হয়। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। দেখানোর জন্য কোনো প্রকল্প নেওয়া হবে না। চলমান প্রকল্প দ্রুত শেষ করতেও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কোনো প্রকল্পে অহেতুক বিলম্ব করা যাবে না। সরকারি ব্যয়ে মিতব্যয়ী হতেও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।"
বৈঠকে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ নজর দেওয়া, প্রয়োজনীয় সেচ নিশ্চিত করা, সেচ ব্যবস্থায় সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একইসাথে গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।