কয়েক যুগের অবহেলার পর আবারো পুরোনো জৌলুসে ঢাকা গেট

বাংলাদেশ

23 January, 2024, 01:05 pm
Last modified: 23 January, 2024, 02:38 pm
আগামীকাল ঢাকা গেট সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে

অযত্ন ও অবহেলায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা প্রায় ৩৬০ বছরের পুরোনো ঢাকা গেইট ফিরে পেয়েছে তার হারানো রূপ। আগামীকাল জনসাধারণের উদ্দেশ্যে এটি খুলে দেওয়া হবে।

শহরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রয়াস হিসেবে গত বছরের মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ঢাকা গেটের সংস্কার কাজ শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। যা কয়েকদিন আগে সম্পন্ন হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরের কাছে অবস্থিত জরাজীর্ণ এই স্থাপনাটি মানুষের মন থেকেও হারিয়ে যেতে বসেছিল। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঢাকা গেট সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।

উদ্দেশ্য ছিল সংস্কার করে এ স্থাপনাকে সপ্তদশ শতকের রূপে ফিরিয়ে আনা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আহনাফ ট্রেডিংস দ্বারা প্রায় ৮২ লাখ টাকা খরচে এ গেটের সংস্কার করা হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ঢাকা গেটের মতো স্থাপনাগুলোকে পুনরুজ্জীবিত মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। আমরা ঢাকার ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। নগরবাসী এই ব্যাপারে আরো মনোযোগী হচ্ছে। এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি আরও বৃদ্ধি করতে পারবো যদি জনগণ আমাদের পাশে থাকে।"

ঢাকা গেট সংরক্ষণ করার আন্তর্জাতিক গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে তাপস বলেন, "ঢাকার যে ঐতিহ্য আছে এই ঐতিহ্যকে আমাদের ধারণ করতে হবে, সংরক্ষণ করতে হবে। শুধু দেশবাসী নয় বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। এইসব কর্মের মাধ্যমে ঐতিহ্য স্থাপনাগুলোকে পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে আমরা নাগরিকের কালচারাল অ্যাভেলেবিলিটি আরও বৃদ্ধি করতে চাই।"

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন জানিয়েছে, ঢাকা শহরকে পর্যটকবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে নেওয়া নানা উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঐতিহাসিক 'মীর জুমলা গেট' বা 'ঢাকা গেট' কে নান্দনিকতায় ফেরাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ঢাকা কোষের তথ্যমতে, ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সালের মধ্যে ঢাকার সীমানা চিহ্নিত করতে এবং স্থলপথে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ঢাকা গেট নির্মাণ করেন মীর জুমলা। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে মীর জুমলা ছিলেন বাংলার সুবেদার (মোগল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক)।

কয়েক শতাব্দী ধরে এই গেটটিকে রুপান্তর করা হয়। ১৮২৫ সালে ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডাউস এটি পুনর্নির্মাণ করার পর এর নাম দেন 'রমনা গেট'। ব্রিটিশ শাসনের পাশাপাশি পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শাসন চলাকালীন সময়ে গেটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

দেশের প্রখ্যাত স্থপতি ও স্থাপত্য সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আবু সাঈদের নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ গেইটটির নতুন নকশা তৈরি করেন। সেই নকশার আদলেই সংস্কার করা হয়।

ড. আবু সাঈদ বলেন, "ঢাকা গেটকে মীর জুমলার গেইট বলা হলেও এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। ব্রিটিশ আমলে ম্যাজিস্ট্রেট ডয়লির সময় এই গেট তৈরি করা হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রমাণ আছে।"

প্রাথমিকভাবে দুটি অংশ নিয়ে গঠিত এই গেটটিকে ১৯৬০ এর দশকে পরিবর্তন করা হয়েছিল যখন রাস্তা প্রশস্ত করার কারণে একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয় এবং পুনর্নির্মাণ করা হয়।

পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় গেটটির মূল উপকরণ যেমন চুন, সুরকি ইত্যাদি ব্যবহার করে ডয়লির সময়ের এবং ১৯৬০-এর দশকের অংশগুলোকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ওসমানী উদ্যানের একটি কামান গেটের নতুন নকশায় সংযোজন করা হয়েছে।

আগামীকাল (২৪ জানুয়ারি) এ ঐতিহাসিক স্থাপনাটি উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। উদ্বোধনের পরে জনসাধারণের জন্য এ স্থাপনাটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এর আশপাশে দর্শনার্থীদের জন্য বসার স্থানও তৈরি করা হয়েছে।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি তিনি ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণে এবং হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে একইরকম পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বিশ্বাস করেন যে, ঢাকা গেট ঢাকার ঐতিহাসিক সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করার পাশাপাশি নগরবাসীকে একটি খোলা জায়গা দেবে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.