সেই নবজাতককে মায়ের জিম্মায় দিলেন বিচারক

বাংলাদেশ

উত্তরাঞ্চল প্রধান
22 January, 2024, 06:30 pm
Last modified: 22 January, 2024, 06:34 pm
লাবনী ও পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, লাবনী তার স্বামীকে নিয়ে গত ১৩ জানুয়ারি হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে যান। সন্তানসম্ভাবা হওয়ায় তাকে সেদিন-ই ভর্তি করে নেওয়া হয় হাসপাতালে। রাতেই তার সিজার হয়। এরপর লাবনী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালের বিল আসে ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু, সেই টাকা পরিশোধ করার মতো সামর্থ্য তাদের ছিল না। এরপরই এই সন্তান বিক্রির ঘটনা ঘটে।   
ছবি: টিবিএস

মাত্র ৪০ হাজার টাকার জন্য রংপুরের টার্মিনাল এলাকায় হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে থেকে বিক্রি হওয়া সেই নবজাতককে মা লাবনী আক্তারের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন আদালত।

আজ সোমবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত- ১ এর বিচারক জাহাঙ্গীর আলম এই আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মজনু মিয়া। 

তিনি বলেন, আজ আদালতে গিয়ে লাবনী তার সন্তানকে নিজ জিম্মায় ফেরত চান। পরে আদালত সবকিছু শুনে নবজাতককে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন। এই বিষয়ে আদালত কোনো মন্তব্য করেননি।

লাবনী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে মুঠোফোনে জানান, 'আজ দুপুরে আমি সন্তান পেয়েছি। আদালত আমাকে বাচ্চার জিম্মা দিয়েছেন। আমি বাসায় যাচ্ছি। ক্লিনিকের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে কিনা জানি না। বাচ্চা বিক্রির সাথে আমার স্বামীও জড়িত। সে মাদকাসক্ত। এই ঘটনার পর থেকে সে পলাতক।'    

প্রসঙ্গত, লাবনীর সিজারের (অপারেশন) বিল পরিশোধ করতে না পারায় ৮ দিন বয়সের তাঁর নবজাতকে মাত্র ৪০ হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগ ওঠে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। বিষয়টি রংপুর নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে যায়। পুলিশ নবজাতক উদ্ধার করলে ঘটনা সংবাদমাধ্যমে আসে।

নবজাতক বিক্রির ঘটনায় হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম রনি, নবজাতকের ক্রেতা রুবেল হোসেন ও তার স্ত্রী বিথিকে গ্রেপ্তার করেছে রংপুর নগর গোয়েন্দা পুলিশ।

লাবনী ও পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, লাবনী তার স্বামীকে নিয়ে গত ১৩ জানুয়ারি হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে যান। সন্তানসম্ভাবা হওয়ায় তাকে সেদিন-ই ভর্তি করে নেওয়া হয় হাসপাতালে। রাতেই তার সিজার হয়। এরপর লাবনী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালের বিল আসে ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু, সেই টাকা পরিশোধ করার মতো সামর্থ্য তাদের ছিল না। এরপরই এই সন্তান বিক্রির ঘটনা ঘটে।   

লাবনী জানান, দূর সম্পর্কের পরিচয়ে লাবনী হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসক এস এম রনির কাছে যান। রনির পরামর্শেই তাঁর ক্লিনিকে সিজার করানো হয়। এরপর চিকিৎসার খরচ দিতে না পারায়– এই চিকিৎসক আমাদের বিল পরিশোধ করতে চাপ দেন। কিন্তু, আমাদের কাছে এত টাকা ছিল না। এরমধ্যে আমার মাদকাসক্ত স্বামী ওয়াসিমের সাথে যোগসাজশ করেন ডাক্তার রনি। এরপর রুবেল হোসেন রতন নামে একজনের কাছে ওয়াসিম ৪০ হাজার টাকায় বাচ্চাটিকে বিক্রি করে দেন।

প্রসূতি লাবনী আরও জানান, ডাক্তার রনি এবং তাঁর ছেলেকে তিনি আগে থেকে চিনতেন। তাদের এলাকায় বেড়ে উঠেছেন তিনি। রনিকে টাকা-পয়সায় সমস্যার কথা আগেই বলা হয়েছে। রনি তখন জানান টাকা-পয়সা লাগবে না। তার কথামতো আশ্বস্ত হয়ে ক্লিনিকে ভর্তি হন। পরে রনি জানান হাসপাতালের বিল ৪০ হাজার টাকা হয়েছে। এই টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ তাঁর নেই। কিন্তু হাসপাতাল টাকা ছাড়া তাদের ছেড়ে দিতে নারাজ। অনেক কথাকাটাটির পর হাসপাতালের বিল মেটানোর জন্য এক পর্যায়ে ডাক্তারের কাছে কিডনি বিক্রির প্রস্তাবও দেন এই দম্পতি। কিন্তু, তাতে রাজি হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নবজাতকের মা আরও বলেন, "এক পর্যায়ে আমার স্বামীও বাধ্য হয়ে অন্য ক্লিনিকে কিডনি বিক্রি করার জন্য যান। সেখানে তিনি বিক্রি করতে পারেননি। পরে হাসপাতালের লোকজন বাচ্চাটিকে বিক্রি করার জন্য ক্রেতা নিয়ে আসে। আমি সন্তানকে দিতে না চাইলে আমাকে অনেক মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে আমার কাছ থেকে বাচ্চা কেড়ে নেওয়া হয়। পরে আমার স্বামীর মাধ্যমে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। তখন তারা এসে আমাকে উদ্ধার করে। অভিযোগ করা হয় রংপুর মেট্রোপলিটন থানায়।"   

অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ গত রোববার রাত ৩টার দিকে নগরীর পীরজাবাদ এলাকা থেকে নবজাতককে উদ্ধার করে। আর এই ঘটনার সাথে জড়িত ৩ জনকে মানবপাচার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানতে পারে, এই ঘটনায় লাবনীর স্বামীর সম্পৃক্ততার কথা।  

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মজনু মিয়া জানান, গ্রেপ্তার তিন আসামিকে আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় লাবনীর স্বামীকেও গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.