মেট্রো স্টেশনে উপচে পড়া ভিড়, ট্রেন চলাচল কম, লম্বা লাইনে যাত্রীরা

বাংলাদেশ

22 January, 2024, 10:15 am
Last modified: 22 January, 2024, 01:50 pm
এক বছরের বেশি সময় ধরে মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচলের বিষয়টিকে চরম অদক্ষতা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

পিক আওয়ারে বর্তমানে ১০ মিনিটের ব্যবধানে ট্রেন পরিচালনা করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। আর অফ-পিক আওয়ারে ট্রেন পরিচালনা করছে ১২ মিনিটের ব্যবধানে। কিন্তু প্রথমে প্রতি সাড়ে তিন মিনিটের ব্যবধানে একটি করে মেট্রো ট্রেন চালানোর কথা ছিল।

এছাড়া লাইনে চালানোর জন্য ২৪টি ট্রেন নির্ধারিত থাকলেও বর্তমানে দৈনিক মাত্র ৮ সেট ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে।

চাহিদার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ ট্রেন পরিচালনা করায় উত্তরা-মতিঝিল রুটে এমআরটি লাইন-৬-এর যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 

রোববার (২১ জানুয়ারি) দেখা যায়, উত্তরা উত্তর, পল্লবী, সচিবালয় ও মতিঝিলের মতত গুরুত্বপূর্ণ মেট্রো স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। লম্বা লাইন পেরিয়ে হাতে টিকিট পেতেই যাত্রীদের ৩০-৪০ মিনিট সময় লেগে যাচ্ছে। আর প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের চাপ থাকায় স্টেশনে প্রবেশের পর ট্রেনে চড়তে ঘণ্টাখানেক লাগছে।

রোববার সকাল ৮টায় মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশনে সিঙ্গেল জার্নির টিকেট কেনার কাউন্টারগুলোর সামনে কয়েকশো যাত্রী দেখা গেছে। তিনটি অটোমেটিক মেশিনের একটি বন্ধ থাকায় টিকেট পেতে যাত্রীদের বাড়তি সময় লেগেছে।

বেশ কয়েকটি স্টেশনে ডজনখানেক যাত্রী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, যানজটমুক্ত, নিরাপদ, আরামদায়ক ও দ্রুতগতির বাহন হিসেবে ভাড়া কিছুটা বেশি হলেও মেট্রো ট্রেনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন তারা। তবে চাহিদার তুলনায় ট্রেন কম থাকা, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে স্বয়ংক্রিয় টিকেট ভেন্ডিং মেশিন বন্ধ থাকা, টিকেট বুথে কর্মীদের না থাকার কারণে মেট্রোরেলে সাশ্রয় হওয়া সময়ের বড় একটা অংশ স্টেশনেই চলে যাচ্ছে। 

পল্লবী স্টেশনে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সিনিয়র কর্মী খাদিজা আকতার নিপা টিবিএসকে বলেন, 'মতিঝিল পর্যন্ত সেবা চালু হওয়ার পর কয়েকদিন মেট্রো ট্রেনে গিয়ে অফিস করেছি। তবে ফেরার ব্যবস্থা না থাকায় অধিকাংশ দিনেই গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। বিকেলেও মতিঝল পর্যন্ত সেবা চালু হওয়ায় গাড়ি না নিয়ে মেট্রো স্টেশনে এসেছি। তবে ট্রেনে চড়তে ভোগান্তি পোহাতে হলে গাড়িতেই যেতে হবে।'

মেট্রো পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ডিএমটিসিএল ট্রেনের সংখ্যা কম থাকার পেছনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অংশ হিসেবে সীমিত পরিচালনার বিষয়টিকেই দায়ী করছে। 

এ অবস্থায় ট্রেনের সংখ্যা কবে থেকে বাড়ানো হবে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএলের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) নাসির উদ্দিন আহমেদ।

জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'পূর্ণাঙ্গ সেবা চালুর পর সাড়ে তিন মিনিট ব্যবধানে ট্রেন চালানোর কথা থাকলেও আপাতত ট্রেনের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।'

টিকেট ভেন্ডিং মেশিনের সমস্যার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিটি স্টেশনে তিনটি করে মোট ছয়টি মেশিন স্থাপন করা আছে। এর মধ্যে দুই-একটি মেশিনে সমস্যা থাকতে পারে। যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়ে তেমন কিছু করণীয় নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নাসির উদ্দিন বলেন, মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে এখনও অনেক কাজ বাকি আছে। তাছাড়া ট্রেন ও স্টেশন পরিচালনায় নিয়োগ পাওয়া অনেক জনবলের প্রশিক্ষণ শেষ না হওয়ায় অনেকেই কাজে যোগ দিতে পারেননি। 

২০১২ সালে একনেকে অনুমোদন পাওয়া এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের আওতায় উত্তরা-আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেল সেবা চালু হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। গত বছরের নভেম্বরে চালু করা হয় আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ। এতদিন এই অংশে শুধু সকালে ট্রেন পরিচালনা করলেও শনিবার (২০ জানুয়ারি) থেকেই রাত পর্যন্ত উত্তরা-মতিঝিল রুটে মেট্রোরেল পরিচালনা করা হচ্ছে।

এক বছরের বেশি সময় ধরে মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচলের বিষয়টিকে চরম অদক্ষতা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, লাইন তৈরি ও কোচ সরবরাহের পর সামর্থ্যের কম সক্ষমতায় ট্রেন পরিচালনা করলে কোম্পানির লোকসান বাড়বে। 

জানতে চাইলে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে পরীক্ষামূলক বা সীমিত পরিসরে মেট্রো রেল চালানোর কোনো সুযোগ নেই। 

পরিচালনায় অদক্ষতা রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মেট্রোরেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিশাল ব্যয়ের তুলনায় আয় নিশ্চিত না হলে লোকসান বাড়বে। এর ফলে যাত্রীদের নির্ভরতাও কমবে বলে তিনি মনে করেন।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.