খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় শীর্ষে রংপুর, দ্বিতীয় সিলেট 

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
01 January, 2024, 10:30 am
Last modified: 01 January, 2024, 12:49 pm
জরিপের তথ্যমতে, তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ০.৮৩ শতাংশ মানুষ। আর মাঝারি ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ২১.৯১ শতাংশ।

রংপুরে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমলেও এখনো এ অঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। অঞ্চলটির প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ মাঝারি বা তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে, যেখানে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার জাতীয় গড় ২১.৯১ শতাংশ।

রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা 'ফুড সিকিউরিটি স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩' শীর্ষক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দেশের ৮টি বিভাগের ২৯ হাজার ৬০টি পরিবারের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়।

জরিপের তথ্যমতে, তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এমন মানুষের শতকরা হার ০.৮৩ শতাংশ। আর মাঝারি ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ২১.৯১ শতাংশ (এর মধ্যে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তার হারও অন্তর্ভূক্ত)।

এদিকে, বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ১৮.৭ শতাংশ। ২০১৬ সালে এটি ছিল ২৪.৩ শতাংশ।

মাঝারি বা তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষের সংখ্যা সংচেয়ে বেশি রংপুরে ২৯.৯৮ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে সিলেট, যেখানে ২৬.৪৮ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।

এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগে ২৬ শতাংশ, রাজশাহীতে ২৫.০১ শতাংশ, বরিশালে ২২.৮৩ শতাংশ, খুলনায় ২২.০৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৯.৬৬ শতাংশ এবং ঢাকায় ১৬.৪০ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে।

যদিও বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী উচ্চ ও নিম্ন দারিদ্র্যের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে বরিশাল বিভাগ, যেখানে দারিদ্র্যের হার ২৬.৯ শতাংশ।

অন্যদিকে, রংপুরে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র ছিল ২০১৬ সালে, ৪৭ শতাংশ। এটি এখন কমে ২৪.৮ শতাংশে পৌঁছেছে।

অর্থাৎ দারিদ্র্যের হার রংপুরে কমলেও এখনো খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা কমেনি। খানা জরিপে প্রতি ৫ জন মানুষের একজন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান টিবিএসকে বলেন, 'দরিদ্র মানুষগুলো খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এর বাইরেও অনেকেই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে পারে।  এজন্য দারিদ্র্যের হারের তুলনায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।'

তিনি বলেন, 'দুটি বিষয়ে অনেক মানুষ দারিদ্র্যের পরিসংখ্যানে না থেকেও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ফিল করতে পারে। খাদ্যের পর্যাপ্ততা না থাকতে পারে, আবার একটি নির্দিষ্ট খাদ্যে অ্যাকসেস কমে যাওয়া, অ্যাকসেস না থাকার বিষয়টিও কাজ করতে পারে। যেমন বাজারে হঠাৎ করে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে গেলে তাতে মানুষের অ্যাকসেস কমে যায়।

এদিকে বিবিএস বলছে, আয়, খাদ্যের মজুদ, কেনার সক্ষমতা, খাবার গ্রহণের হার, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পরিমাণসহ মোট ৮টি প্রশ্নের মাধ্যমে খাদ্য নিরপত্তাহীনতায় থাকা মানুষগুলোর একটা ধারণা উঠে এসেছে এই জরিপে। যেখানে কোন পরিবার দিনে কতবার খাদ্য গ্রহণ করছে বা করতে পারছে না এ ধরনের কোনো তথ্য উঠে আসেনি।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, 'তিনটি উদ্দেশে জরিপটি করা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতির বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া, একটা ফুড ব্যালেন্স শিট তৈরি করা এবং মাইক্রো ও ম্যাক্রো লেভেলে ক্যালরি বা প্রোটিন ইনটেক কমছে নাকি বাড়ছে, সেটি জানা।

এতে করে পরবর্তী সময়ে পলিসি তৈরি করা বা খাদ্য নিয়ে যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যানগুলো মাথায় রাখা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

বিবিএসের সার্ভের তথ্য বলছে, মূলত খাদ্য নিরাপত্তায় পল্লী, শহর ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এ ব্যাপকতার হারে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।  দেশের পল্লী এলাকায় তীব্র খাদ্য নিরাপত্তার হার এক শতাংশের নিচে, ০.৯৫ শতাংশ। শহর এলাকায় ০.৬৭ শতাংশ এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ০.৪১ শতাংশ।

জরিপে অবশ্য সারাদেশে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ, প্রোটিন ইনটেকের পরিমাণ, দেশের ফুড স্টক নিয়েও কিছু ধারণা দেওয়া হয়েছে। যদিও এই তথ্যগুলো সেকেন্ডারি সোর্স থেকে সংগ্রহ করার কথা বলছে বিবিএস।

বিবিএস বলছে, ফুড ব্যালান্স শিটের ক্ষেত্রে দেশে দিনপ্রতি মোট মাথাপিছু খাদ্য সরবরাহ বাড়ছে।

সেকেন্ডারি ডাটার ভিত্তিতে ফুড ব্যালান্স শিট থেকে পাওয়া গেছে, ২০১৬ সালে মাথাপিছু প্রতিদিন মোট ফুড সাপ্লাই ২ হাজার ৪৬১ কিলোক্যালরি।  এটি বেড়ে ২০২১ সালে ২ হাজার ৫১৬ কিলোক্যালরিতে দাঁড়িয়েছে।

দেশে প্র্রতিটি খানা বা পরিবারে যে পরিমাণ চাল মজুদ রয়েছে তা গড়ে ৫১ দিন পর্যন্ত পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে। গ্রামঞ্চলে ৬৩ দিন, শহরে ৩৫ দিন এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১১ দিনের খাদ্য মজুদ থাকে বলে জরিপে উঠে এসেছে।

গমের ক্ষেত্রে এটি ৯ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.