দলের 'স্বতন্ত্র প্রার্থীদের' বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে আওয়ামী লীগ
স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে ভোট করতে চাওয়া দলীয় নেতারা যেন নৌকা প্রতীক পাওয়া মনোনীত প্রার্থীদের জয়লাভে সমস্যার কারণ হয়ে না দাঁড়ায়– সে বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও বাছাই করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেবে আওয়ামী লীগ।
একইসাথে, দলের মনোনয়ন বঞ্চিত এমপি-মন্ত্রীরা কোনোভাবেই মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না বলে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারণা, দলের মধ্য থেকে হাজারখানেক নেতা স্বতন্ত্রপ্রার্থী হতে পারেন। দলের মধ্য থেকে স্বতন্ত্রপ্রার্থীর এরকম জোয়ার সৃষ্টি হলে দলের মনোনীত প্রার্থীদের জিতে আসতে তারা 'গলার কাঁট' হয়ে দাঁড়াতে পারেন, এজন্য এবার দলের স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের বিষয়ে লাগামা টানার পলিসি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) এক অনুষ্ঠানে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, "আমরা দেখছি কারা কারা চাইছে। আমাদের কৌশলগত সিদ্ধান্ত আছে। ১৭ তারিখ পর্যন্ত সময় আছে। এর ভেতরে আমরা পরিবর্তন, সংশোধন করতে পারব। আমাদের কৌশলগত দিক থাকবে।"
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের যে কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবে বলে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনায় পর মনোনয়ন বঞ্চিত ১২ এমপি এবং শতাধিক নেতা বিভিন্ন আসন থেকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
৩,৩৬২ জন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্য থেকে গত ২৬ নভেম্বর বিকেলে ২৯৮ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। ওই দিনই সকালে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে মতবিনিময়কালে দলের যেকোনো নেতা স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারবে বলে ঘোষণা দেন দলের সভাপতি।
স্বতন্ত্রপ্রার্থীর কৌশল
প্রতিটি আসনে গড়ে ১১ জন মনোনয়ন পাওয়ার জন্য এবার আওয়ামী লীগের নমিনেশন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্র বলছে সকল প্রার্থীই মোটামুটি প্রভাবশালী ছিলেন।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলন, বিএনপিসহ অনেক দল অংশ না নেওয়ায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা, যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক দেখা দেয়। এবার তার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না আওয়ামী লীগ। ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন চায় দলটি। বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলো শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না এলে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও ভোটারদের অংশগ্রহণমূলক করতে স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের বিষয়ে খানিকটা নমনীয় থাকবে আওয়ামী লীগ। ভোটকে উৎসবমুখর করে তুলতেই এবার এমন অবস্থান নিয়েছে দলটি। গত রোববার গণভবনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এমন আভাস দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
ওই নেতা বলেন, তবে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত এ সুযোগ পাচ্ছেন না সরকারের বর্তমান মন্ত্রী, এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
'নৌকার' বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তাদের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে দলে চিরতরে নিষিদ্ধ হতে পারেন তারা। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে এরই মধ্যে এমন আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই বিষয়টি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এছাড়াও দলের মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীর বিপরীতে কোনো প্রভাবশালী নেতা যদি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে চায়, তাদেরকে অনুমতি দেবে না দল।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "দলের পলিসি হলো মনোনীত প্রার্থী থাকলেও স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারবে যে কোনো নেতা-কর্মী। তবে দলের কোনো প্রভাবশালী নেতা যদি শুধুই নৌকা ঠেকাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে যায়, সে বিষয়ে দলের অবস্থানও কঠোর হবে।"
তিনি বলেন, "এ নিয়ে দলীয় সভাপতি কেন্দ্রের সাথে আলোচনা করে খুব দ্রুতই একটি গাইডলাইন দেবেন। আমরা সবগুলো আসনের দিকে নজর রাখছি। কারা কারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়, তার পরিমাণ ও নেতাদের সকল ধরনের অবস্থান দেখে সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী।"
তবে মনোনয়ন বঞ্চিত কোনো দলের কোনো এমপি-মন্ত্রী স্বতন্ত্র না হতে দলের সিদ্ধান্ত পরিষ্কার। তারা কেউ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করলে, আজবীন দল থেকে বহিষ্কার হবেন বলে জানান আবদুর রহমান।
স্বতন্ত্রদের প্রতি সমর্থন নেই
এদিকে, মনোনীত প্রার্থীর হয়ে একযোগে কাজ করতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্র লীগসহ দলের সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তূণমূল পর্যায়ে।
ফলে দলের মধ্য থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে চাইলেও মূল দল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করতে পারবে না। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে নৌকার বিপক্ষে কাজ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দলীয় নির্দেশনা আছে।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল টিবিএসকে বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্র লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো দেশের ৪২ হাজার ভোট কেন্দ্রের প্রতিটির জন্য পৃথক কমিটি করেছে।
"এই কমিটিগুলোতে প্রায় এক কোটি নেতাকর্মী সংযুক্ত রয়েছে। এসব নেতা-কর্মীর কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করতে পারবে না। দলীয় নির্দেশনা নৌকার পক্ষে প্রচার কাজ পরিচালনা, ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা ও ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কাজ করবে।"
তিনি বলেন, "কোনো নেতা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফলে যেসব স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করতে চাইবেন, তাদেরকে দলের সমর্থনের বাইরে গিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা কোনোভকেই নৌকার বিজয় আটকাতে দেব না।"