ভোটের পরিবেশ তৈরিতে ৪২,০০০ কমিটি গঠন করছে আওয়ামী লীগ

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠভাবে সফল করে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসতে সারাদেশের ভোট কেন্দ্রগুলোতে কমিটি গঠন করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো।
এসব কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করবেন এক কোটিরও বেশি স্থানীয় নেতা-কর্মী। দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হলেই এই কমিটিগুলো কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।
দলের কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী, কমিটিগুলো নৌকার পক্ষে প্রচার, কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো এবং ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। একইসাথে বিএনপি-জামায়াতের চলমান সহিংসতা দমনে সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করবে এই কমিটিগুলো।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, প্রতিটি নির্বাচনে এরকম কমিটি গঠন করা হলেও এবং এসব কমিটির কলেবর ও কর্যক্রম বাড়ানোর জন্য এবার বেশি জোর দিচ্ছে দলটি। কারণ গত কয়েকটি সংসদীয় আসন উপ-নির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচনে কম ভোটার উপস্তিতির অভিজ্ঞতা থেকে এবারের জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ও সুষ্ঠু ভোট করার পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এজন্য দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ভোটকেন্দ্রভিত্তিক 'ইউনিট কমিটি' গঠনের কার্যক্রম প্রায় শেষদিকে। প্রতিটি কমিটিতে সদস্য থাকবেন ন্যূনতম ১৫০ জন। এভাবে সারাদেশে মোট ৪২,০০০ ভোটকেন্দ্রের জন্য কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এসব কমিটিতে কাজ করবেন আওয়ামী লীগের প্রায় ৬৩ লাখ নেতা-কর্মী। গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এসব কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া, দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানো এবং যারা 'নির্বাচনের উৎসব নষ্ট করার' চেষ্টা করবে তাদের প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে সারাদেশে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য ২০ সদস্যের কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। এসব কমিটিতে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ সদস্য থাকবেন।
অওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষকলীগ প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য পৃথক কামিটি গঠন করে আওয়ামী লীগের মূল কমিটির সাথে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তিন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
তারা জানিয়েছেন, তাদের কমিটিতে প্রায় ২০ লাখ নেতাকর্মী থাকবেন।
এছাড়া, রাজধানীর ১৩৯টি ওয়ার্ডের জন্য 'ইউনিট কমিটি' গঠনের জন্য ঢাকা মহানগরীতে ৩৪টি দল কাজ করছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য শক্তিশালী ও স্বচ্ছ কমিটি গঠনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে তাদের ভূমিকা অগ্রণী।
কমিটির ভূমিকা
আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ভোটকেন্দ্রর জন্য ইউনিট-ভিত্তিক কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষ। প্রতিটি ওয়ার্ডের নেতারা তাদের ঊর্ধ্বতন নেতাদের মাধ্যমে প্রতিটি উপজেলা, জেলা, মহানগর নেতাদের কাছে কমিটির তালিকা জমা দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, এসব কমিটি কেন্দ্রে জমা হবে। এরপর সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করতে কেন্দ্র থেকে যেভাবে নির্দেশনা আসবে, সেভাবে তারা কাজ করবেন।
নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি মেনে নেতাকর্মীরা কাজ করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি
এসএম কামাল জানান, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ ও জামার পর চূড়ান্তভাবে প্রার্থী মনোনয়নের পরই এসব কমিটি মাঠে কাজ করবে। সরকারের টানা ১৫ বছরের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে ভোটরদেরকে 'নৌকায়' ভোট দিতে অকৃষ্ট করতে তারা কাজ করবেন।
এছাড়া ভোটের দিন, আগে ও পরে ভোট কেন্দ্রগুলোর পরিবেশ যাতে সুষ্ঠু থাকে, সেজন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকেও তারা যথাযথ সহায়তা করবেন।
কমিটি গঠন পদ্ধতি
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, ইউনিট কমিটি গঠনে মূল ভূমিকা পালন করবেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।
তবে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য ও উপজেলা/থানা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের পরামর্শ গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গঠিত ইউনিট কমিটি জেলা/মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বরাবর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মাধ্যমে সংগঠনের দপ্তরে জমা দিতে হবে। এসব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড, স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িতরা যেন কমিটিতে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বলা হয়েছে, যদি এসব ইউনিট কমিটি করার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার বিতর্কিত ব্যক্তি অনুপ্রবেশ করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়িত্ব নিতে হবে।
পাশাপাশি দলের ত্যাগী ও দুঃসময়ের নেতাকর্মী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং বিভিন্ন সামাজিক পেশায় প্রতিষ্ঠিত সমাজের গ্রহণযোগ্য প্রগতিশীল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে এসব কমিটি গঠনের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
চলতি নভেম্বর মাসের শেষ নাগাদ সারাদেশে ইউনিট কমিটি গঠন সম্পন্ন করার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ করবে ২০ লাখের বেশি নেতাকর্মী
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয সূত্র জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন প্রচারণা ছড়িয়ে দিতে নতুন ৬ লাখ স্মার্ট কর্মী মাঠে নামাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ জন্য তাদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছে দলটি। যাদের প্রধান কাজ হবে সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন– ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার (এক্স) হেন্ডেলে ও ইনস্টাগ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া। একইসঙ্গে, বিরোধীদের চলমান সহিংসতার বিপক্ষে জনমত তৈরি করা।
গতমাসের মাসের ২৬ অক্টোবর থেকে চলতি মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত এসব নেতা-কর্মীদের প্রশক্ষণ দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বিভিন্ন ইউনিটের প্রায় ৮ লাখ নেতা-কর্মকে ইতোমধ্যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। এজন্য কেন্দ্র থেকে একটি নির্দেশনাও দেওয়া হয় সম্প্রতি।
আর এসব কার্যক্রম মনিটরিং করতে আওয়ামী লগের কেন্দ্র থেকে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক সচিব কবির বিন আনোয়ার।