আশুলিয়া: কারখানায় ঢুকে বেরিয়ে গেছেন অনেক শ্রমিক, ১২ মামলায় আসামি ৩ হাজার
ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে পোশাক খাতের শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার আশুলিয়ায় বিভিন্ন কারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এরমধ্যে একটি মামলায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করা ছাড়াও ১২টি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে অন্তত ৩ হাজার জনকে।
এছাড়া, গতকালের মতো আজও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। চালু থাকা কারখানাগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবেই কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। আবার বেশ কয়েকটি কারখানায় সকালে শ্রমিকরা গেলেও কাজ করেননি। হাজিরা কার্ড পাঞ্চ করে কারখানা থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
এদিকে রোববার বেলা ১২টা নাগাদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে মামলা সংক্রান্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম বলেন, "এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পোশাক কারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মোট ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি মামলায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, এছাড়া বাকি সব অজ্ঞাতনামা আসামী। এখন পর্যন্ত ৫ জন শ্রমিক গ্রেপ্তার রয়েছেন।"
"এছাড়া, ১২টি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে প্রায় ৩ হাজার জন", বলেন তিনি।
এর আগে, গতকাল আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছিলেন, ১১ নভেম্বর রাত পর্যন্ত চলমান শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যে আশুলিয়ার বিভিন্ন পোশাক কারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা ছিল ৬টি। এতে গ্রেপ্তার ছিল মোট ৪ শ্রমিক।
শনিবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, "এসব মামলায় (৬টি মামলায়) ১৬ জনের নাম উল্লেখ করাসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। তারমধ্যে মামলায় যাদের নাম ছিল এবং এসব ঘটনায় যারা সরাসরি জড়িত- তাদের মধ্য থেকে ৩ জন ও অজ্ঞাতনামাদের মধ্য থেকে ১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলমান আছে, কোন নীরিহ শ্রমিক যেন হয়রানির শিকার না হন সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।"
গ্রেপ্তারকৃতদের সকলেই বিভিন্ন কারখানার পোশাক শ্রমিক বলেও জানিয়েছিলেন এই কর্মকর্তা।
এর আগে, ঢাকার আশুলিয়ায় ৩টি পোশাক কারখানায় হামলা চালিয়ে কারখানা ও বিভিন্ন আসবাবপত্র-মেশিনারিজ ভাঙচুর করে আর্থিক ক্ষতিসাধনকরাসহ কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে আহত করার অভিযোগে আশুলিয়া থানায় গত ৫ নভেম্বর পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করে ৩টি পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ।
কারখানাগুলো হলো- ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেড, হামীম গ্রুপের নেক্সট কালেকশন লিমিটেড ও ডিসাং সোয়েটার লিমিটেড। কারখানাগুলো ঢাকার আশুলিয়ার নরসিংহপুর, কাঠগড়া ও ধনাইদ এলাকায় অবস্থিত।
মামলা ৩টিতে শ্রমিকসহ দেড় হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছিল। তবে এসব মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।
পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগে আজ (১২ নভেম্বর) দুপুর পর্যন্ত বাকি ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
শান্ত আশুলিয়া, কারখানায় ঢুকে বেরিয়ে গেছেন কয়েকটি কারখানার শ্রমিক
এদিকে আজ রোববার (১২ নভেম্বর) সকালে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েকদিনের তুলনায় গতকালের মত আজও শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে এই শিল্পাঞ্চলে।
যেসব কারখানা খোলা রয়েছে, এসব কারখানার শ্রমিকরা সকালে শান্তিপূর্ণভাবেই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে কাজে যোগদান করেছেন।
তবে, যেসব কারখানা বন্ধ রয়েছে, সেসব কারখানার সামনে আজ আর কোনো শ্রমিককে দেখা যায়নি।
অন্যদিকে সকাল ১০ টার দিকে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, আশুলিয়ায় চালু থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে ৮/১০টি কারখানার শ্রমিকরা সকালে কাজে যোগদান করলেও কাজ না করে কারখানার মধ্যে বসে ছিলেন। কিছু কারখানার শ্রমিক কারখানায় হাজিরা কার্ড পাঞ্চ করে কারখানা থেকে বেরিয়ে যান। তবে কোনো শ্রমিক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করেননি।
শ্রমিকরা কাজ না করায় এসব কারখানার কয়েকটিতে আজ ছুটি ঘোষণা করা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
আজ দুপুর ১টা পর্যন্ত শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি।
আশুলিয়ায় বন্ধ ৬০টি পোশাক কারখানা
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম আরও জানান, আজ শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় মোট ৬০টির মত পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, "গতকাল সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই এলাকায় মোট ১৩০টি পোশাক কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় বন্ধ করা হয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য ছিল। এরমধ্যে আশুলিয়াতেই ছিলো ১০০-এর অধিক কারখানা। কিছু কারখানা পরে খুলে দেওয়া হয়েছে। খুলে দেওয়ার পর সেসব কারখানায় কাজ চলছে, শ্রমিকরা কাজ করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় কর্তৃপক্ষ কারখানাগুলো খুলে দিচ্ছেন। আশা করছি ধীরে ধীরে বাকি কারখানাগুলোও খুলে দেওয়া হবে।"
এ সময় তিনি বলেন, যেসকল কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করছেন, সেসব কারখানার শ্রমিকরা যেন নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারেন, সেজন্য কারখানাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো শাখা বা বিভাগে বেআইনীভাবে ধর্মঘট করা হলে মালিক ওই শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারবেন; এক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা কোনো মজুরি পাবেন না।
সকালে আশুলিয়ার জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়- এই এলাকায় সড়কের উভয় পাশের অধিকাংশ কারখানাগুলো বন্ধ রয়েছে। চলমান শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যে আশুলিয়ার এই এলাকাগুলোতেই অধিকাংশ শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছিল।
ধীরে ধীরে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া প্রসঙ্গে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ধীরে ধীরে কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার এই খবর স্বস্তিদায়ক। আমরা চাই চলমান শ্রমিক আন্দোলনের ইস্যু দ্রুত সমাধান করে সবগুলো কারখানা খুলে দেওয়া হোক, আবারও আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুক এই শিল্প।"
এ সময় বিভিন্ন পোশাক কারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, "সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমাদের দাবি থাকবে যেন এসব মামলায় কোনো নিরীহ শ্রমিককে হয়রানি না করা হয়। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, কোনো শ্রমিক নাশকতা, হামলা, ভাঙচুরের সাথে জড়িত থাকতে পারে না। বহিরাগতরাই এসব ঘটিয়েছে।"
"মালিকপক্ষও কিন্তু সবসময় এই কথাই বলে আসছে। কাজেই এসব মামলায় যেন কোনো নিরীহ শ্রমিক হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে আমাদের সবিনয় অনুরোধ থাকবে সংশ্লিষ্টদের প্রতি," যোগ করেন তিনি।