এখন থেকে পোশাক কারখানায় সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ: বিজিএমইএ

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
10 November, 2023, 11:50 am
Last modified: 10 November, 2023, 04:04 pm
যেসব শ্রমিকরা কারখানায় গিয়েও কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন বা কারখানা ছেড়ে বেরিয়ে যাবেন, সেসব কারখানার মালিকরা বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুযায়ী কারখানা বন্ধ করে দেবেন। এর অর্থ কাজ নেই, বেতনও নেই।

দেশের সব পোশাক কারখানায় সব ধরনের নিয়োগ বন্ধসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানের সভাপতিত্বে সংগঠনটির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভার বিস্তারিত সিদ্ধান্ত জানিয়ে সদস্যদের চিঠিও দিয়েছে সংগঠনটি।

চিঠি অনুযায়ী, প্রতিটি কারাখানায় গেটে 'নিয়োগ বন্ধ' লেখা ব্যানার টাঙিয়ে দিতে হবে।

বিজিএমইএ'র সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি টিবিএসকে বলেন, "কারখানা মালিকরা নিয়োগ বন্ধ রাখার জন্য বিজিএমইএকে বলেছেন, এ জন্য বিজিএমইএ ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যতদিন পরিস্থিতি শান্ত না হবে, ততদিন নিয়োগ বন্ধ থাকবে।"

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক আন্দোলনের জেরে গতকাল আশুলিয়া ও গাজীপুরের কিছু অংশ মিলিয়ে শতাধিক কারখানায় কাজ বন্ধ ছিল।

তিনি বলেন, "অনেক কারখানাতেই ওয়ার্ক অর্ডার কম। আবার কিছু কারখানায় কাজ আছে, তাদের হয়তো শ্রমিকও প্রয়োজন। কিন্তু শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজ করছে না, এতে কারখানা মালিকদের লোকসান হচ্ছে। আবার নতুন শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে বা কারখানা চালু রেখে এ লোকসান আর তারা বাড়াতে চাচ্ছেন না। তাই এ নিয়োগ বন্ধ থাকবে।"

অবশ্য এর পেছনে শ্রমিকদেরকে হুমকি দেওয়া মালিকদের উদ্দেশ্য নয় বলে জানান তিনি।

চিঠিতে বলা হয়, 'যেসব কারখানায় অগ্নি সংযোগ, ভাঙচুর বা মারামারি সংঘটিত হয়েছে, সেসব কারখানা কর্তৃপক্ষকে প্রমাণ হিসেবে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ নিয়ে নিকটস্থ থানায় মামলা করতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম জানা না থাকলে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা যাবে।'

মামলার পর এর একটি কপি অবশ্যই সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠাতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।

আরও বলা হয়, যেসব শ্রমিকরা কারখানায় গিয়েও কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন বা কারখানা ছেড়ে বেরিয়ে যাবেন, সেসব কারখানার মালিকরা বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুযায়ী কারখানা বন্ধ করে দেবেন। এর অর্থ কাজ নেই, বেতনও নেই।

১৩/১ ধারায় বন্ধ রাখার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, "কারখানায় শ্রমিকরা আসলেও কাজ করবে না বা আসবে না, আবার ক্ষতিও করবে। একদিকে উৎপাদন না হলে লোকসান হচ্ছে, অন্যদিকে শ্রমিকদের বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হবে। এটা তো হতে পারে না। দুই দিকের ক্ষতি মালিকরা মেনে নিতে চান না। এজন্য কারখানা বন্ধ রাখবে তারা। ওই সময়ের জন্য শ্রমিকরা বেতন পাবেন না।"

এ ছাড়া যেসব কারখানায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর বা মারামারি সংঘটিত হয়েছে, সেসব ঘটনার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিজিএমইএর সিস্টেম অ্যানালিস্টকে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।

এদিকে, ব্র্যান্ডগুলো বাড়তি মজুরির অংশ শেয়ার করবে বললেও বাস্তবতা ভিন্ন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, "১০ শতাংশ বায়ার এটা মানেন। বাকিরা বাস্তবে তা মানেন না।"

এছাড়া নতুন যে ১২,৫০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ হয়েছে, তা অর্ধেক কারখানা মালিকের দেওয়ার সামর্থ্য নেই বলে জানান তিনি।
 
অবশ্য মালিকপক্ষের এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন শ্রমিক নেতারা।

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার টিবিএসকে বলেন, "নিয়োগ বন্ধ, কিংবা কারখানা বন্ধ রাখা কোন সমাধান নয়। নিয়োগ বন্ধ রাখলে তাদের কারখানা চলবে কীভাবে?"

তিনি মনে করেন, মালিকপক্ষের এ সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, "কারখানা বন্ধ রেখে একদিনে যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, বেতন বাড়ালে ওই পরিমাণ টাকাও লাগতো না।"

এই শ্রমিক নেতা বলেন, "মালিকপক্ষের উপরের লেভেলে যাওয়ার সুযোগ আছে, কিন্তু শ্রমিকদের কথা শোনার তো কেউ নেই।"

গতকালের সমন্বয় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, সংগঠনটির আরেক সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এস এম মান্নান (কচি) প্রমুখ।

 

 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.