আমদানিকৃত চালান সময়মত না ছাড়লে পোর্ট ডেমারেজের বাইরে সুদও গুণতে হবে
আমদানিকৃত চালান দেশে আসার পর দিনের পর দিন বন্দরে ফেলে রাখা ঠেকাতে এবার কঠোর হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আমদানিকৃত চালান সময়মত ছেড়ে না দিলে বা ডিউটি-ট্যাক্স পরিশোধ না করলে বর্তমানে পোর্ট ডেমারেজ বা চার্জ দিতে হয়। কিন্তু এখন থেকে পোর্ট চার্জের বাইরে কাস্টমস ডিপার্টমেন্টকে সুদ পরিশোধ করতে হবে।
সংসদে উপস্থাপিত নতুন আইনে এ সংক্রান্ত একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, এটি কার্যকর করা হলে বন্দরে দীর্ঘ সময় পণ্য ফেলে রাখার প্রবণতা কমবে।
তারা বলেন, বন্দরে অনেক সময় কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তাদের পরীক্ষার নামে কিংবা কোন এইচএস কোড বা ডিউটি-ট্যাক্স সংক্রান্ত ডিসপুটের কারণে পণ্য বন্দরে রাখতে হয়, যাতে আমদানিকারকের কোন দায় থাকে না। তার জন্য সুদ চার্জ করা যৌক্তিক নয়।
নতুন কাস্টমস আইনের ধারা-৩২ অনুযায়ী, কোন ডিউটি-ট্যাক্স ও অন্যান্য চার্জ নির্ধারিত তারিখের মধ্যে পরিশোধ না করা হলে ওই করের উপর ১০ শতাংশ সুদ পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া কোন বকেয়া থাকলেও তার উপরও এই সুদ প্রযোজ্য হবে।
এনবিআরের কাস্টমস বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "অনেক সময় দেখা যায়, আমদানিকৃত কনসাইনমেন্ট বন্দরে আসার পর তা সঠিক সময়ে ক্লিয়ার করা হয় না। গড়িমসি করা হয়। এতে বন্দরে জট তৈরি হয়। নতুন এ বিধান যুক্ত করার ফলে আমদানিকৃত কনসাইনমেন্ট দীর্ঘ সময় বন্দরে ফেলে রাখার প্রবণতা কমবে।"
তবে ব্যবসায়ী নেতারা এমন বিধানকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "যদি কাস্টমসের কারণে দেরি হয়, তাহলে তারা কি আমাদেরকে ইন্টারেস্ট দেবে?"
তিনি বলেন, "আমরা কনসাইনমেন্ট দিনে দিনেই রিলিজ করতে চাই। কিন্তু কাস্টমসের কারণে অনেক সময় দেরি হয়। তাহলে বিধান হওয়া উচিত, যার কারণে দেরি হচ্ছে, তিনি অপরপক্ষকে ইন্টারেস্ট দেবেন।"
এছাড়া নতুন আইনে আরো কিছু বিধান যুক্ত করা হয়েছে। তবে এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ ধারাই ইতিমধ্যে গত দুই বাজেটে ফাইন্যান্স অ্যাক্টের মাধ্যমে পুরনো আইনে আনা হয়েছে এবং বাস্তবায়ন শুরু করেছে এনবিআর।
ভ্যালুয়েশনে চালু হচ্ছে ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট
এছাড়া নতুন আইনে ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট চালু করা হচ্ছে। এর ফলে আমদানিকৃত চালান ভ্যালুয়েশনে রিয়েল টাইম এক্সচেঞ্জ রেট হবে। এতে কোন পক্ষের বাড়তি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে ভ্যালুয়েশনের ক্ষেত্রে আগের মাসের এভারেজ রেট এর উপর ভিত্তি করে ভ্যালুয়েশনের ভিত্তিতে ডিউটি-ট্যাক্স আদায় করা হতো। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিদিনের এক্সচেঞ্জ রেটকে বিবেচনায় নিয়ে তার উপর ভ্যলুয়েশন ও ট্যাক্স বিবেচনা করা হবে।