ছয় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে ১.১২ লাখ কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি
ছয়টি বড় অবকাঠামো প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে না পারায় ১.১২ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রকল্পগুলোর নথি পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এই অর্থ দিয়ে চারটি পদ্মা সেতুর নির্মাণ করা যেত।
প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির ফলে উদ্ভূত সরাসরি ক্ষতি রয়েছে এই অর্থের একটি উল্লেখযোগ্য অংশে। আরেকটি বড় অংশ হলো টোল এবং যাত্রী ও মাল পরিবহন থেকে ভাড়া না পাওয়ার ফলে উদ্ভূত আর্থিক ক্ষতি।
এছাড়া এ বিলম্বের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি যেমন হয়েছে, তেমনি দেশ ও নাগরিকরা সুফল পেতেও বিলম্বের শিকার হয়েছে।
পদ্মা সেতু, খুলনা-মোংলা রেললাইন, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট, ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেলপথ সম্প্রসারণ ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন—এই ছয়টি প্রকল্পের নথির তথ্য বিশ্লেষণ করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এসব তথ্য জানতে পেরেছে।
অদক্ষতা, অর্থায়ন সংগ্রহে বিলম্ব, ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা এবং সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশায় ত্রুটির কারণে এই প্রকল্পগুলো ৪ থেকে ১২ বছর বিলম্বের শিকার হয়েছে।
অনুমোদন দেওয়ার সময় কাজ শেষ করতে প্রত্যেকটি প্রকল্পের জন্য গড়ে ৫ বছর সময় দেওয়া হয়েছিল। তারপরও প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়েছে।
প্রাক্কলিত অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং ব্যয়বৃদ্ধির হিসাবে সবচেয়ে ব্যয়বহুল হবে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্প। কারণ এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় লাগছে প্রাথমিক পরিকল্পনার চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি, আর ব্যয় বেড়েছে প্রাথমিক হিসাবের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পদ্মা সেতু। এরপর রয়েছে খুলনা-মোংলা রেললাইন, ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেলপথ সম্প্রসারণ, বাস র্যাপিড ট্রানজিট এবং কর্ণফুলী টানেল।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, কাজ শেষ করতে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাওয়া ছাড়াও আরও একাধিক ক্ষতি হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় ভোক্তার অধিকার বঞ্চিত হয়েছে, দেশ বিনিয়োগ বঞ্চিত হয়েছে, মন্থর হয়েছে কর্মসংস্থান ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি এবং ঋণ পরিশোধে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর ফলে বর্তমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির পাশাপাশি ভবিষ্যতের ওপরও চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'অবকাঠামো প্রকল্পগুলো ব্যবসার খরচ হ্রাস, গণপরিবহনে যাতায়াত সহজ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে পারত। প্রকল্প বাস্তবায়নের বিলম্ব এসব খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলে।'
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ করা গেলে তা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে সাহায্য করতে পারত, যা উৎপাদনের পাশাপাশি আয় বাড়াত। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ত, যা আরও বিনিয়োগ আকর্ষণ করত।
সামগ্রিক ক্ষতি
এই ছয়টি প্রকল্পের মধ্যে গত বছর শুধু পদ্মা সেতু প্রকল্পটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে, তা-ও অনেক বিলম্বের পর। আর কর্ণফুলী টানেল, খুলনা-মোংলা বন্দর রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন চলতি মাসের শেষের দিকে ও আগামী মাসে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সরকার যখন এই প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেয়, তখন টোল আদায় থেকে তাৎক্ষণিক আর্থিক লাভ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। এ ছয়টি প্রকল্প যানবাহন পরিচালনার ব্যয় হ্রাস, সময় সাশ্রয়, যাত্রী ও মাল পরিবহনের সুবিধা, ট্রাফিক ডাইভারশন, জ্বালানি খরচ হ্রাস, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং দূষণ কমানোসহ সম্ভাব্য ৫০ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকার অর্থনৈতিক সুফল এনে দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এই ছয় প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা, কিন্তু পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ২০১ কোটি টাকা। শুধু বিলম্বের জন্যই সরাসরি ক্ষতি হয়েছে ৩৭ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
টিবিএসের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে ২৩ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামানের মতে, প্রকল্প অনুমোদনের পর্যায়ে অপর্যাপ্ত জরিপ, ত্রুটিপূর্ণ নকশা এবং অসম্পূর্ণ প্রাক্কলনের মতো বেশ কিছু দুর্বলতার কারণে প্রাথমিকভাবে বেঁধে দেওয়া সময় ও ব্যয় অনুসারে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় এবং বাস্তবায়নের সময় কম দেখানো হয়। এছাড়া অনুমোদন পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি পর্যায়ে প্রত্যাশিত রিটার্ন অনেক বেশি দেখানো হয়। ত্রুটিপূর্ণ প্রাক্কলনের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পগুলো নেওয়ার ফলে সময়মতো বাস্তবায়ন ও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কনসালটেন্ট, প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারদের মধ্যে দক্ষতা ও নিষ্ঠার অভাব রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন হাদিউজ্জামান।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। অনুমোদনের সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল সাড়ে তিন বছরে।
কিন্তু বিলম্বের কারণে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় ১৬ হাজার ১৮২ কোটি টাকা।
রেললাইনটি নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ বলে জানিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। আগামী মাসে এই লাইনের মাধ্যমে রেলসেবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অনুসারে, বিলম্বের কারণে এই লাইনে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে ভাড়া বাবদ যে ৫ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা আয় করতে পারত, তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এছাড়া যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সময় ও ব্যয়ে সাশ্রয়, জ্বালানির ব্যবহার ও পরিবেশ দূষণ কমে আসায় আরও ৯ হাজার ৫৭ কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারত।
নির্ধারিত সময়ে রেলসেবা চালু না হওয়ায় বঞ্চিত আর্থিক ও অর্থনৈতিক সুবিধাগুলোর মূল্য যোগ করলে বিলম্বের মোট খেসারত দাঁড়ায় ৩০ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু
২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ব্যয় ধরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়িয়ে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা করা হয়, সেইসঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয় ২০১৫ সাল পর্যন্ত।
কিন্তু সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় গত বছর, ২০২২ সালের জুন মাসে।
বিলম্বের কারণে এই অবকাঠামোর নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ১২ হাজার ৯৮ কোটি টাকা।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে করা একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সালে সেতুটি চালু হলে গত নয় বছরে মোট টোল আদায় হতো ৭ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
এছাড়া যানবাহন পরিচালনা এবং ভ্রমণের সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের মাধ্যমে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ২০ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা সাশ্রয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে উঠে এসেছে প্রকল্পের নথিতে।
খুলনা-মোংলা রেলপথ
প্রকল্পটি ২০১০ সালে শুরু হয়, ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা।
আগামী মাসে লাইনটি উদ্বোধন হওয়ার কথা থাকলেও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের তারিখ এখনও চূড়ান্ত করেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে।
২০১৫ সালের মধ্যে ৬৪.৭৫ কিলোমিটার রেল সংযোগের কাজ শেষ হলে চলতি অর্থবছর নাগাদ যাত্রী ও মাল পরিবহন থেকে আয় হতো ৩ হাজার ২০৭ কোটি টাকা।
এছাড়া ট্রাফিক ডাইভারশন, জ্বালানি খরচ সাশ্রয়, দুর্ঘটনা হ্রাস এবং আর্থ-সামাজিক সুফল মিলিয়ে এ প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে ৭ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় করত।
তিন দিক মিলিয়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করায় বিলম্বের কারণে সম্মিলিত ক্ষতি হয়েছে ১৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।
ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেলপথ সম্প্রসারণ
২০১২ সালের জুলাইয়ে ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেললাইন সম্প্রসারণের প্রকল্প নেওয়া হয়। লক্ষ্য ছিল আড়াই বছর, অর্থাৎ ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে।
কিন্তু প্রকল্পটির কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২৭ সালের আগে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে না—অর্থাৎ বাস্তবায়িত হতে ১২ বছরের বেশি বিলম্ব হবে।
এ বিলম্বের কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা, যা প্রাথমিক প্রাক্কলনের চেয়ে ২ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা বেশি।
১২ বছরের বিলম্বের কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ে ৪ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা আয়ের সুযোগ হারিয়েছে।
এছাড়া ট্রাফিক ডাইভারশন, দুর্ঘটনা হ্রাস, ভ্রমণের সময় হ্রাস এবং আর্থ-সামাজিক সুফলের মাধ্যমে এ প্রকল্প থেকে ৩ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকার সুফল পাওয়ার কথা ছিল।
বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে এ প্রকল্প থেকে মোট ১১ হাজার ৯১ কোটি টাকার পুঞ্জীভূত ক্ষতি হচ্ছে।
বাস র্যাপিড ট্রানজিট
বিমানবন্দর এলাকা থেকে ৩৫ মিনিটে জয়দেবপুর যাতায়াতের জন্য ২০.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১২ সালে অনুমোদন পায়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের মধ্যে বিআরটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখনও সেবাটি চালু করার প্রত্যাশিত তারিখ ঠিক করেনি। এর মধ্যে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এ প্রকল্পে সরাসরি ২ হাজার ২২৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
গত আট বছরে যাত্রী ভাড়া থেকে ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা আয় করার কথা ছিল বিআরটির। আর যানবাহন পরিচালনার ব্যয়, যাতায়াতের সময়, দুর্ঘটনা এবং দূষণ কমার ফলে এ প্রকল্প থেকে ৫ হাজার ৭৭ কোটি টাকার সুফল পাওয়ার কথা ছিল।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বিত হওয়ায় মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।
বাস র্যাপিড ট্রানজিট
বিমানবন্দর এলাকা থেকে ৩৫ মিনিটে জয়দেবপুর যাতায়াতের জন্য ২০.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১২ সালে অনুমোদন পায়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের মধ্যে বিআরটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখনও সেবাটি চালু করার প্রত্যাশিত তারিখ ঠিক করেনি। এর মধ্যে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। ব্যয় বাড়ার ফলে সরাসরি ২ হাজার ২২৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
প্রকল্পের নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত আট বছরে যাত্রী ভাড়া থেকেই সরাসরি ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা আয় আনার কথা ছিল বিআরটির। আর যানবাহন পরিচালনার ব্যয়, যাতায়াতের সময়, দুর্ঘটনা এবং দূষণ কমার ফলে এ প্রকল্প থেকে ৫ হাজার ৭৭ কোটি টাকার সুফল পাওয়ার কথা ছিল।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বিত হওয়ায় মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।
কর্ণফুলী টানেল
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে মাল্টি-লেন রোড টানেল প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১১ সালে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। ২০২০ সালের মধ্যে টানেলটি চালু হওয়ার কথা ছিল। বিলম্বের কারণে এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা।
নির্ধারিত সময়ের চার বছর পর, চলতি মাসে অবকাঠামোটি চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পের নথি অনুসারে, বিলম্বের ফলে ১ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকার টোল আদায়ের সুযোগ হারিয়েছে সরকার।
এছাড়া ভ্রমণের সময়, দুর্ঘটনা ও পরিবহন ব্যয় হ্রাস হিসাবে নিয়ে প্রকল্পটি থেকে ৩ হাজার ৯২৯ কোটি টাকার সুফল পাওয়ার কথা ছিল।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় সার্বিক ৭ হাজার ৭১১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।