পুলিশ হেফাজতে সাবেক দুদক কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় দুই এএসআই প্রত্যাহার
চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানায় পুলিশ হেফাজতে থাকা দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এম এ মাসুদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে, ওই দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে দামপাড়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
প্রত্যাহার হওয়া দুই পুলিশ সদস্য হলেন চান্দগাঁও থানার অ্যাসিস্টেন্ট সাব ইন্সপেক্টর (এএসআই) মো. ইউসুফ আলী ও এটিএম সোহেল রানা।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) স্পিনা রানী প্রামাণিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি টিবিএসকে বলেন, তদন্তের স্বার্থে চান্দগাঁও থানার দুই সহকারী উপ পরিদর্শককে সিএমপিতে সংযুক্ত করা হয়েছে।
সাবেক দুদক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে বুধবার তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে সিএমপি। কমিটিতে উপ পুলিশ কমিশনার (ডিবি-উত্তর) কে আহ্বায়ক, অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) কে সদস্য সচিব এবং সহকারী পুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) কে সদস্য করা হয়।
তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তদন্ত কমিটিকে।
মঙ্গলবার রাতে একটি সিআর মামলার ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে শহীদুল্লাহকে নগরীর বহদ্দার হাটের এক কিলোমিটার এলাকায় তার নিজ বাসা থেকে থানায় নিয়ে আসা হয় বলে নিশ্চিত করেন চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খাইরুল ইসলাম।
ওসি আরও জানান, "সাবেক সরকারি কর্মকর্তা জেনে আমার রুমে বসানো হয়। কিন্তু হঠাৎ তিনি অসুস্থবোধ করেন। উপস্থিত তার পরিবারের সদস্যরা তাকে দ্রুত পার্কভিউ হাসপাতালে নিলে রাত ১২ টার দিকে মারা যান। সম্ভবত তিনি হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন।"
শহীদুল্লাহর ছেলে নাফিস শহিদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "চান্দগাঁও থানার দুজন এএসআই ইউসুফ এবং সোহেল আমার বাবাকে আমাদের নিজ বাসা থেকে থানায় নিয়ে আসে। থানায় আনার পর কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয়। তিনি হার্টের রোগী। তার সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে পুলিশ। আমার বাবাকে হার্টের ওষুধ ও ইনহেলার দেওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশ তা দিতে দেয়নি। সেখানেই অবস্থার অবনতি হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।"
নাফিস শহিদ টেলিফোনে টিবিএসকে আরও বলেন, "আমার বাবার সাথে পুলিশ পরিকল্পিতভাবে এমন আচরণ করেছেন। আমরা এই ঘটনায় আইনী পদক্ষেপ নেব।"
শহীদুল্লাহ'র শ্যালক মোহাম্মদ কায়ছার আনোয়ার টিবিএসকে বলেন, "আমি এবং আমার দুলাভাই শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে রনি আক্তার তানিয়া নামে এক নারী চট্টগ্রাম আদালতে একটি মামলা করে। মামলায় ওই নারী উল্লেখ করেন, তিনি আমার দুলাভাইয়ের বাসায় কাজ করতেন এবং তার কাছে ওই নারীর ছয় হাজার টাকা পাওনা আছে। অথচ এই নামে কোনো নারীকে আমরা চিনি না। আমার বোনের বাসায়ও কখনো কাজ করেনি।"
তিনি আরো বলেন, "জায়গা দখল করে চাঁদাবাজির অভিযোগে জসিম নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমার দুলাভাই দুটি মামলা দায়ের করে। ওই চক্র মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে এ মামলা দায়ের করেছে।"
চান্দগাঁও থানার তথ্যমতে, দণ্ডবিধির ৩২৩/৫০৬ ধারায় আদালতে মামলা করেন এক নারী। গত ১ অক্টোবর শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেন আদালত। সেই ওয়ারেন্ট অনুযায়ী গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামী সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানার একটি টিম।