বিনিয়োগে অলীক রিটার্নের প্রতিশ্রুতি

বাংলাদেশ

24 September, 2023, 11:30 pm
Last modified: 25 September, 2023, 11:48 am

আগের চেয়ে অনেক চতুর হয়ে উঠেছে প্রতারকরা। প্রতারণার জন্য বেছে নিচ্ছে নিত্যনতুন কৌশল। লোভনীয় চাকরির প্রস্তাব ও অস্তিত্বহীন বিনিয়োগ সুযোগের প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে তারা। এই প্রতারকরা বেশিরভাগ সময় চলতি মূলধন ও অংশীদারত্ব চুক্তি এবং অবাস্তব, মোটা অঙ্কের রিটার্নের টোপ দেয়। এরকম বেশ কয়েকটি বড় প্রতারণার চক্র ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড।

ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটু ঘুরে বেড়ালেই এরকম সন্দেহজনক প্রতারণা চোখে পড়বে। পঞ্জি স্কিমের মতো বেশ কিছু উদ্যোগ খুঁজে বের করেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। এসব উদ্যোগে যারা মোটা অঙ্কের রিটার্নের প্রতিশ্রুতি পেয়ে বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, তাদের টাকা নিয়ে স্পন্সরের পালিয়ে যাওয়ার সমূহ ঝুঁকি আছে।

এমনই একটি সন্দেহজনক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ঢাকার পল্টনে আরবি কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী রুবেল।

নিজেকে তিনি ঢাকার বাইরে পোশাক সরবরাহকারী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। এই পরিচয়ে সম্প্রতি তিনি নিষ্ক্রিয় অংশীদারের (সাইলেন্ট পার্টনার) খোঁজ করেছেন। টিবিএসের একজন 'আন্ডারকাভার' প্রতিবেদককে একটি লোভনীয় প্রস্তাবও দিয়েছেন। নিষ্ক্রিয় অংশীদার ব্যবসায় মূলধন সরবরাহ করেন, কিন্তু ব্যবসার দৈনন্দিন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত থাকেন না।

রুবেল ৫ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত মাসিক রিটার্নের (অর্থাৎ বছরে ৬০ থেকে ৯৬ শতাংশ) নিশ্চয়তা দিয়েছেন। ব্যাংকে আমানত রেখে বার্ষিক যে মুনাফা পাওয়া যায়, তারচেয়ে সাত থেকে ১৪ গুণ বেশি রিটার্নের নিশ্চয়তা দিয়েছেন তিনি। বিনিয়োগের পরিমাণের অনুপাতে বাড়বে রিটার্ন। তবে একটা শর্ত আছে: বিনিয়োগটি তার কাছে ন্যূননতম এক বছরের জন্য থাকতে হবে।

রুবেলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তিনি ব্যাংকঋণ নেওয়ার চেষ্টা করেননি কেন। ব্যাংকঋণে এখন সুদের হার ১০ শতাংশের কিছু বেশি।

এ প্রশ্নের জবাব রুবেলের কাছে তৈরিই ছিল: কাগজপত্রের কাজ বড় ঝামেলার, ঋণ পাওয়ার নিশ্চয়তা ছিল না এবং ব্যাংকঋণ পাওয়ার জন্য কর ও কমপ্লায়েন্সের ঝুটঝামেলায় যেতে চাননি তিনি।

সাধারণত এসব প্রতারণার জন্য সম্ভাব্য ভুক্তভোগীদের একটি লিঙ্ক পাঠিয়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনুরোধ করা হয়। এ কাজের জন্য তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণের মতো গোপনীয় ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করতে হয়।

প্রতারণার আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে লোভনীয় চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখানো। যেমন, দাবি করা হয়, 'আপনি সফলভাবে চাকরির পর্যালোচনায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং দৈনিক ২ হাজার টাকা বেতনের জন্য যোগ্য।'

সাইবার জগতের অনেক প্রতারক হুট করেই তাদের অফিস বন্ধ করে দেয়। পরে শত শত বিনিয়োগকারী তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয় না।

ইউএস অ্যাসোসিয়েশন অভ সার্টিফাইড ফ্রড এক্সামিনার্স-এর ফেলো মেজর মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা (অব.) বলেন, এভাবেই মানুষ প্রতারণার শিকার হতে থাকে—যদিও প্রতারণার এসব পদ্ধতি নতুন নয়, কয়েক দশক আগের।

'একমাত্র পার্থক্য হলো ইন্টারনেট আগের চেয়ে অনেক দ্রুত এসব প্রতারণার বিস্তার ঘটাতে সাহায্য করছে,' বলেন তিনি।

শামসুজ্জোহা আরও বলেন, হুন্ডি কাজল, ডেসটিনি, ইউনিপে, ইভ্যালি, ইঅরেঞ্জ, এবং সাম্প্রতিক এমটিএফই-র মতো প্রতারণার ব্যাপারে জানার পরও লোকে পঞ্জি স্কিমের শিকার হয়।

প্রতারণামূলক অনলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম এমটিএফই এক মাস আগে স্বেচ্ছায় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। হাজার হাজার বাংলাদেশির কাছ থেকে অন্তত ১ হাজার কোটি টাকা নিয়ে পলাতক রয়েছে প্ল্যাটফর্মটি পরিচালনাকারীরা।

গত মাসে হৃদয় মিয়া নামে একজন ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। প্রথমে তাদের আকর্ষণীয় মাসিক মুনাফা দিলেও পরে মূলধন ও মুনাফা দুটো নিয়েই তিনি পালিয়ে যান। ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান তাকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কয়েক বছর আগে হৃদয় মিয়ার গুলশান ডিসিসি মার্কেটের দোকানে গিয়ে তার ডিসকাউন্টের ফাঁদে পড়েন একজন এনজিও নির্বাহী। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ভুক্তভোগী বলেন, 'সবার সাথে লোকটার ভালো সম্পর্ক এবং তার দেওয়া বিনিয়োগের সুযোগে প্রলুব্ধ হয়ে আমার মতো অন্তত ৩০ জন লোক হৃদয় মিয়ার ফাঁদে পা দিয়েছে।'

ব্যবসায়িক সমস্যার অজুহাত দিয়ে গত ছয়-সাত মাস ধরে কোনো মুনাফা দেননি হৃদয়। ভুক্তভোগীরা তার কাছে ১০ কোটি টাকার বেশি পান। তাদের মধ্যে দুজন ভুক্তভোগী টিবিএসের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা এ তথ্য জানান।

তাদের একজন আফসোস করে বলেন, 'এখন আমার কাছে ডিড পেপার থাকলেই কী লাভ? এসব কাগজপত্র কেবল লোকটার কারাদণ্ডই নিশ্চিত করতে পারবে। আমার টাকা উদ্ধার করার কোনো কার্যকরী উপায়ই দেখতে পাচ্ছি না।'

বিনিয়োগকারীদের টার্গেট করে এক ডজনেরও বেশি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এখনও সক্রিয় রয়েছে।

এমন কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে এসআরএ, এসএফএক্সটি, ট্রন লিঙ্ক, হিলটন মেটা, জিএক্স গ্লোবাল, মেটা ফোর্স, সিএফএক্স ট্রেডিং ও এপিএলজিও। বাংলাদেশে এই সবগুলো প্ল্যাটফর্মেরই ব্যবহারকারী আছে। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম ব্যবসার মতো প্রথমদিকের ব্যবহারকারীরা মোটা মুনাফার লোভ দেখিয়ে নতুন নতুন মানুষকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে।

প্রতারণার শিকার হচ্ছে কারা? 

প্রতারকরা দুই ধরনের মানুষকে টার্গেট করে। প্রথমত, যাদের হাতে বিনিয়োগের মতো অর্থ আছে এবং উচ্চ-রিটার্নের সুযোগ খুঁজছে। দ্বিতীয়ত, যাদের আয় ও সঞ্চয় সীমিত এবং আরও অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করছে। 

দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত আল-আমিন (ছদ্মনাম) করোনা মহামারির কারণে ব্যবসায় লোকসানের পর এখন সঞ্চয়ের ওপর নির্ভরশীল। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির মধ্যে দৈনন্দিন খরচ মেটাতেই কষ্ট করতে হচ্ছে ঢাকার এই বাসিন্দাকে। আল আমিন উচ্চ রিটার্ন পেতে মরিয়া, কিন্তু অতীতের লোকসান এবং করোনা-পরবর্তী জটিলতার কারণে আগের ব্যবসায় ফের বিনিয়োগ করতে দ্বিধাগ্রস্ত। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে তিনি 'তরুণ এসএমই উদ্যোক্তাদের' অসংখ্য পোস্ট এবং বিজ্ঞাপন দেখতে পান। এই উদ্যোক্তারা অনিয়ন্ত্রিত গণ-অর্থায়ন (ক্রাউডফান্ডিং), অনানুষ্ঠানিক অংশীদারত্ব, বা প্রথাগত ঋণ ব্যবস্থার মাধ্যমে মরিয়া হয়ে পুঁজি খুঁজছেন। সব পোস্ট ও বিজ্ঞাপনেই দেশে প্রচলিত সব ধরনের আনুষ্ঠানিক সঞ্চয় মাধ্যমের তুলনায় ২ থেকে ৮ গুণ বেশি রিটার্ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।  

সৌভাগ্যবশত, একসময় ব্যবসা সম্প্রসারণে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার নেওয়ার ওপর নির্ভরশীল আল-আমিন রুবেলের আরবি কর্পোরেশনে বিনিয়োগ করেননি।

যে লোভনীয় হারে রিটার্ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ হয় আল আমিনের। পাশাপাশি আরবি কর্পোরেশনের ওয়েবসাইটের ভুলের কারণেও—অচেনা বিদেশি নির্বাহীদের ছবি ও সদস্যদের নাম প্রদর্শন—আল আমিনের সন্দেহ হয়। 

রুবেল অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি তার ওয়েবসাইটের কাজ শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুঁজি চেয়ে দেওয়া পোস্টে ওয়েবসাইটের লিঙ্ক শেয়ার করলেও সেখানকার মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর তথ্যকে অজ্ঞতা বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

ডিজিটাল সেবার নামে

প্রতারণার আশঙ্কা থাকা সন্দেহজনক বৈশিষ্ট্যের বেশ কয়েকটি ব্যবসার খোঁজ পেয়েছে টিবিএস। উদাহরণস্বরূপ, উত্তরায় গত পাঁচ বছরে ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, ভিডিওগ্রাফি, ফটোগ্রাফি, কল সেন্টার, বিজনেস কনসালটেন্সি ও ট্রেনিং সেবা দিয়ে আস্থা অর্জন করেছে 'সেন্টার অভ ডিজিটাল মার্কেটিং (সিডিএম)'। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিনিয়োগকারী খুঁজছে প্রতিষ্ঠানটি। 

সিডিএম-এর প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মো. কাইয়ুম বলেন, '৫০ লাখ টাকার তহবিল পেলে আমরা মাল্টিমিডিয়া স্টুডিও চালু করতে পারব। এতে আমাদের বার্ষিক মুনাফা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।'

প্রতি মাসে নূন্যতম ২ শতাংশ রিটার্ন এবং লাভ-বণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে আরও বেশি রিটার্নের সম্ভাবনার কথা ঘোষণা করছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ উল্লেখিত পরিমাণের অর্ধেক খরচে ব্যাংক থেকেই ঋণ নিতে পারেন তারা। 

সিডিএম-এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনার দায়িত্বে আছেন কাইয়ুমের স্ত্রী শারমিন আক্তার রুমা। কাইয়ুম জানান, প্রতি মাসে তারা ২৫ লাখ টাকা আয় করছেন। নির্মাণাধীন মাল্টিমিডিয়া স্টুডিওর কাজ শেষ হলে আয় আরও অনেক বাড়বে। 

একই ভবনের তিনটি ফ্লোরে (একটি বসবাসের জন্য, একটি অফিসের জন্য এবং একটি স্টুডিওর জন্য) সিডিএম তাদের কার্যক্রম চালায়। ছদ্ম পরিচয়ে পরিদর্শনের সময় তাদের ব্যবসার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তুলে ধরে সিডিএম। কয়েক হাজার গ্রাহককে সেবা দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করা হয় তাদের পক্ষ থেকে। 

কাইয়ুম জানান, অসংখ্য উৎস থেকে মূলধন না নিয়ে কয়েকজন সমমনা দীর্ঘমেয়াদি অংশীদার নেওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন তারা। 

শারমিন আক্তার রুমা বলেন, মূলধনের জন্য ব্যাংকে গিয়ে লাভ নেই, কারণ ওরা আমাদের কর এবং ভ্যাট-সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতার মুখোমুখি করবে। এছাড়া ব্যাংক সাধারণত আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দেয় না।

প্রশ্ন হলো, যদি এভাবে অনলাইনে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শত শত বিনিয়োগকারীকে তারা রাজি করাতে পারেন এবং কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন?

'ইসলামি অফার' নিয়মিত ঘটনা

এরকম অনেক উদ্যোগই প্রথাগত ফিক্সড রিটার্ন এবং প্রফিট-লস শেয়ারিং উভয় পদ্ধতিতে বিনিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে। ইসলামি অনুশাসন মেনে চলা ব্যক্তিসহ নানা ধরনের বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করার জন্য এ পথ ধরে তারা।

ব্যবসায় অংশীদার নেওয়ার ইসলামি পদ্ধতির অপব্যবহার হয় প্রায়ই। এ পদ্ধতিতে অংশীদার নিলে প্রতারকদের জন্য নিয়মিত টাকা না দেওয়ার কাজটি সহজ হয়ে যায়। কেননা নিষ্ক্রিয় অংশীদারের আসলে খতিয়ে দেখার সুযোগ থাকে না তার সক্রিয় অংশীদার মুনাফা করছে কি না।

এরকম একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। একদল বন্ধু মিলে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে গাজীপুরে গড়ে তুলেছেন পোশাক উৎপাদন কারখানা আরএস জিন্স। তারা এখন টিএসএ জিন্স নামে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে। গত কয়েক বছর ধরে তারা বিনিয়োগকারীদের মুনাফা দিয়ে আসছে, আরএস জিন্সের মতোই।

টিএসএ জিন্সের প্রতিষ্ঠাতা আবু শাহিন আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন, 'অর্থদাতাদের বছরজুড়ে ধারাবাহিকভাবে ২-৩ শতাংশ মাসিক রিটার্ন দেওয়া কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। পিক সিজনে আমরা আরও বেশি রিটার্ন দিতে পারি। এখন আমাদের ২০টি সেলাই মেশিন আছে, শিগগিরই দ্রুত প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করছি।'

উত্তরায় স্টাইলওয়ে পাঞ্জাবি, দীমাস লাইফ স্টাইল, মোহাম্মদপুরে পাকিস্তানি ড্রেস হোলসেল ইন বাংলাদেশ, যাত্রাবাড়ীতে পারফেক্ট অটো মোটরস, কামরাঙ্গীরচরে জেএন্ডজে ফ্যাশন শু, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইসহাক নুর ট্রেডিং, সিলেটের তানহাবিব ডটকম এবং বেশ কিছু রিয়েল এস্টেট প্রকল্পসহ আরও অনেক ব্যবসা সক্রিয়ভাবে নিষ্ক্রিয় অংশীদার ও চলতি মূলধন অর্থায়নকারী খুঁজছে।

স্টাইলওয়ে পাঞ্জাবির স্বত্বাধিকারীর মতো অনেকে ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে ফিক্সড রিটার্ন দেয় না। তারা 'স্রষ্টার দয়ায়' পাওয়া ব্যবসায়িক সাফল্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের ৩-৮ শতাংশ মাসিক রিটার্নের আশ্বাস দেয়। 

স্ত্রীর সঙ্গে যৌথভাবে 'পাকিস্তানি ড্রেস হোলসেল ইন বাংলাদেশ' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মারুফ। প্রথমে তিনি প্রথাগত বিনিয়োগ মডেলে কাজ করতে চাননি। কিন্তু পরে তারা বিনিয়োগকারীদের ফিক্সড-সুদ দেওয়ার মডেল গ্রহণ করেন।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন

সমগ্র বাংলাদেশেই তৃণমূল পর্যায়ের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য আনুষ্ঠানিক অর্থায়ন পাওয়াটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। তবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সময় প্রতারকরা যতটা বলে, এই সমস্যার ব্যাপ্তি তত বেশি না বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ব্র্যাক ব্যাংকের ডিএমডি ও এসএমই-র প্রধান সৈয়দ আবদুল মোমেনের মতে, চলতি বছরের জুলাই থেকে ব্যাংকঋণ নেওয়ার জন্য ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করার বিষয়টির জন্য ঋণ নিতে ইচ্ছুক ক্ষুদ্র-উদ্যোক্তারা চ্যালেঞ্জে পড়েছেন। কারণ প্রক্রিয়াটিকে তারা জটিল মনে করেন। 

কিন্তু এর পরও প্রতারকদের খরচের তুলনায় ট্যাক্স-ভ্যাট কমপ্লায়েন্সের খরচ অনেক কম বলে উল্লেখ করেন মোমেন।

বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) ভাইস চেয়ারম্যান মো. কায়সার হামিদও মোমেনের সুরে একই কথা বলেন। ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র, অনানুষ্ঠানিক উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে রাজি হয় না—এই দাবি অস্বীকার করেন তিনি। ব্যাংক, ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কুটির, ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের জন্য মোট ডেডিকেটেড ২.৪ লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে।

হামিদের পরামর্শ, এসব পঞ্জি স্কিমের বিস্তার ঠেকাতে সরকারের উচিত চড়া সুদে অনানুষ্ঠানিক ঋণ নেওয়ার চর্চাগুলো সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা। সঞ্চয়ের ওপর লোভনীয় রিটার্ন পাওয়ার বেপরোয়া মনোভাবকে পুঁজি করে ফায়দা লোটে এসব ঋণ।

অনেক ব্যাংক ও এনবিএফআই ঋণ দেওয়ার জন্য সৎ, পরিশ্রমী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের চিহ্নিত করতে সারা দেশে সক্রিয়ভাবে প্রতিযোগিতা করছে। তারা জামানত ছাড়াই ২৫-৫০ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে, যার বার্ষিক সুদের হার ১৩ শতাংশে সীমাবদ্ধ।

উদ্যোক্তারা ব্যবসা শুরুর প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই, ব্যাংকাররা ব্যবসার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতির স্বীকৃতি দিলেই, ঋণ নিতে পারেন। 

সিএমএসএমইর জন্য ন্যূনতম কাগজপত্র লাগে। এ খাতে ইসলামি অর্থায়নও রয়েছে। কাজেই পুঁজি খোঁজার জন্য আদতে এ ধরনের লোভনীয় অনলাইন বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রয়োজনই নেই।

ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের এমডি এবং সিইও মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, কোনো ব্যবসা যদি এসএমই ঋণ পাওয়ার যোগ্য হয়, তাহলে এ ঋণ অনেক দ্রুত বিতরণ করা হয়।

পুলিশ যা বলছে

কোন লোভনীয় এসএমই অংশীদারত্ব বা ঋণ নেওয়ার সুযোগটি শেষ পর্যন্ত পঞ্জি স্কিম হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে, তা এই মুহূর্তে নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

সিটিটিসির সাইবার অপরাধ বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. বায়েজিদুর রহমান টিবিএসকে জানান, তার বিভাগ সাইবারস্পেসে অফারভিত্তিক স্ক্যাম এবং অনলাইন প্রতারণামূলক কার্যকলাপ নিয়মিত ও অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে। 

তবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি। 'কোনো ব্যবস্থা নিতে হলে আমাদের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেতে হবে।'

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.