অ্যাকুয়াকালচার-অ্যাগ্রিকালচার সমন্বয়ের অভাবে আয় থেকে বঞ্চিত ৫৬% মাছের খামার: সমীক্ষা

বাংলাদেশ

11 September, 2023, 02:15 pm
Last modified: 11 September, 2023, 04:18 pm
গবেষকরা ইউএসএইড এর অর্থায়নে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৭২১টি মৎস্য খামারে গবেষণাটি চালিয়েছেন। প্রতি হেক্টর জমির অর্থনৈতিক ও পুষ্টিমানের উৎপাদনশীলতার তুলনা করেছেন তারা।
ইনফোগ্রাফ- টিবিএস

সমন্বিত অ্যাকুয়াকালচার-অ্যাগ্রিকালচার (আইএএ) প্র্যাক্টিস করছে না দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৫৬% মৎস্য খামার। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মাছ, প্রন ও চিংড়ির মতো অ্যাকুয়াটিক খাবারের পাশাপাশি ধান, শাকসবজি, ফলের মতো খাবারের চাষ করতে পারছে না এসব খামার। 

আইএএ হলো এমন এক পদ্ধতি, যেখানে জলজ এবং স্থলজ খাবার একসাথে একখণ্ড জমিতে উৎপাদিত হয়, যা খামারের আয় ও পুষ্টির মান কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

'ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকুয়াটিক অ্যান্ড টেরেস্ট্রিয়াল ফুড প্রোডাকশন এনহ্যান্সেস মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট অ্যান্ড ইকোনমিক প্রোডাক্টিভিটি ফর নিউট্রিশন-সেনসিটিভ ফুড সিস্টেম' শীর্ষক গবেষণাটি ৪ সেপ্টেম্বর নেচার ফুড জার্নালে প্রকাশিত হয়।

গবেষকরা ইউএসএইড এর অর্থায়নে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৭২১টি মৎস্য খামারে গবেষণাটি চালিয়েছেন। প্রতি হেক্টর জমির অর্থনৈতিক ও পুষ্টিমানের উৎপাদনশীলতার তুলনা করেছেন তারা।

সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুসারে, এই খামারগুলোর প্রায় ৪৪% একই জমিতে অ্যাকুয়াকালচারের পাশাপাশি অন্যান্য কৃষিপণ্যও উৎপাদন করে।

সমীক্ষায় আরো দেখা গেছে, এই ফার্মগুলো ১২টি স্বতন্ত্র আইএএ সংমিশ্রণের ভিত্তিতে ধান, শাকসবজি এবং ফলের পাশাপাশি মাছ, প্রন ও চিংড়ি চাষ করছে।

তবে, যারা সমন্বিত কৃষিকাজ করছেন, তারা সবাই-ই যে খুব ভালো আয় করতে পারছেন এমনটাও নয়। কিন্তু অ্যাকুয়াকালচারের সাথে বৈচিত্র্যময় কৃষিপণ্য চাষ করে আরও বেশি আয় করা সম্ভব বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

গবেষকরা ১২টি সমন্বিত কৃষি মডেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে কম লাভজনক মডেল চিহ্নিত করেছেন। সমীক্ষায় মডেলগুলো বিশ্লেষণ করে প্রতি বছর হেক্টর প্রতি অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা হিসাব করা হয়েছে।

এরমধ্যে সবচেয়ে লাভজনক মডেল পাওয়া গেছে যেখানে ধান, শাকসবজি ও ফলের সঙ্গে মাছ, প্রন ও চিংড়ির মতো খাদ্য চাষ করা হয়। এ ধরনের খামার প্রতি বছর হেক্টর প্রতি ৪,৩৭৯ ডলার আয় করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

ধান, শাকসবজি এবং ফলের সাথে মাছ এবং প্রনের সমন্বিত চাষ করা খামার ৩,৯৪৭ ডলার আয় করে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে কম উৎপাদনশীল মডেল হলো, যেখানে ধানের সাথে মাছের চাষ করা হয়। এসব খামার ১,২৪৯ ডলার আয় করে। এবং ধান, শাকসবজি ও ফলের সাথে মাছের চাষ করা খামার ১,৩৩৫ ডলার উপার্জন করে।

যারা সম্মিলিত চাষের মাধ্যমে কম আয় করছেন এবং যারা সম্মিলিত চাষাবাদ করছেন না তাদেরও তাদের আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে এবং এর মাধ্যে তাদের পুষ্টি গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

গবেষকরা বলেছেন, এই আইএএ মডেলগুলোকে আরও বৈচিত্র্যময় করে খামারের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। নীতিনির্ধারকদের মাধ্যমে ফার্মগুলোতে এই উদ্যোগ ছড়িয়ে দেওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন তারা।

ইউএসএইড এর মাধ্যমে এই গবেষণাটির অর্থায়ন করে ফিড দ্য ফিউচার ইনোভেশন ল্যাব ফর ফিশ। এশিয়ান মেগা ডেল্টাসের সিজিআইএআর উদ্যোগের অংশ এ গবেষণা।

ওয়ার্ল্ডফিশের পোস্টডক্টরাল ফেলো এবং পেপারের প্রধান লেখক ডা. লিজ ইগনোকসি বলেন, "আমাদের গবেষণার ফলাফলগুলো নিউট্রিয়েন্ট সেন্সিটিভিটির একটি ইনটুইটিভ মেজার দেখায়, যা গবেষক ও নীতিনির্ধারকরা সহজেই বুঝতে পারবেন। এবং উন্নয়ন অনুশীলনকারী এবং খাদ্যপণ্য উৎপাদকদের সমন্বয়ে এটি কাজে লাগানো যেতে পারে।"

সমীক্ষায় দেখা গেছে, অ্যাকুয়াটিক খাদ্যের সংমিশ্রণের মধ্যে, শুধুমাত্র মাছের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি (৩৯%), এরপর আছে মাছ, প্রন ও চিংড়ি (২৯%), এরপর মাছ ও প্রন (২৬%) এবং মাছ ও চিংড়ি (৪%)।

সমীক্ষা চালানো গৃহস্থালীগুলোর মধ্যে ৯৬% কার্প প্রজাতির মাছ চাষ করে, ৮৩% মজুত ছাড়া মাছের প্রজাতি চাষ করে, ৮২% মজুদকৃত মাছ চাষ করে এবং ৫৯% ক্রাস্টেসিয়ান চাষ করে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ছাত্র এবং ওয়ার্ল্ডফিশের সিনিয়র গবেষণা বিশ্লেষক হযরত আলী বলেন, "আমাদের পদ্ধতি ব্যবহার করে চাষাবাদে সম্ভাব্য উন্নতি করা যেতে পারে।"

গবেষকরা বলেছেন আইএএ মডেলগুলো অতিরিক্ত লবণাক্ত অঞ্চলে কাজ করে না, তবে মাঝারি এবং কম লবণাক্ত অঞ্চলে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, যেস্ব খামারে অ্যাকুয়াকালচার ও ফসল একসাথে চাষ করা হয়, সেসব খামারে পুষ্টি উৎপাদনের পরিমাণ মাছের খামারের তুলনায় বেশি।

গবেষণায় বলা হয়েছে, চিংড়ির মতো কিছু খাবার থেকে আয় বেশি হয় কিন্তু সেগুলোর পুষ্টিগুণ কম। আবার কিছু ফসল যেমন সবুজ শাক, লাউ, লম্বা মটরশুটি, নারকেল এবং পুঁটি, ট্যাংরা, কাতলার মতো মাছের প্রজাতি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সরবরাহে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এসব থেকে আয়ও বেশি হয়।

আইএফপিআরআই-এর রিসার্চ ফেলো ডক্টর বেন বেল্টন বলেছেন, "আমরা বেশ দৃঢ় অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণ পেয়েছি যে, জলজ এবং স্থলজ খাদ্যের একীকরণ ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য অর্থনৈতিক এবং পুষ্টির উৎপাদনশীলতা- উভয় ক্ষেত্রেই উপকারী হতে পারে।"
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.