পোশাক শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসকদের কাজ করার নির্দেশ
তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দুই মন্ত্রণালয় ও পাঁচ জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সম্প্রতি সরকারের এক গোপনীয় প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, রাজধানী ও তার আশপাশের জেলায় অবস্থিত কিছু তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরা সময়মত বেতন পরিশোধ না করায় শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এমন নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, 'ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় বিপুল সংখ্যক গার্মেন্টস কারখানায় অসংখ্য শ্রমিক কাজ করেন। এসব কারখানার অনেক মালিক প্রায়ই শ্রমিকদের বেতন সময়মত পরিশোধ করতে পারছেন না। যে কারণে শ্রমিকরা বিক্ষুদ্ধ হয় এবং কখনো কখনো সড়ক অবরোধ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।'
'বকেয়া বেতনের কারণে ব্যাপক আকারে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এই অসন্তোষ দূরীকরণের লক্ষ্যে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কর্তৃক কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন,' বলা হয় চিঠিতে।
মঙ্গলবারের (২৯ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে কোনো কোনো গার্মেন্টস কারখানা বেতন দিতে পারছে না বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, "এই কয়েকদিন আগেও একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বেতন দিতে পারছিল না। শ্রমিকরা চলে গেছে তার বাসায়। আমাকে খবর দিয়েছে। সাথে সাথে আমাকে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। আমি বলেছি তোমরা (শ্রমিকরা) ফিরে যাও, তোমরা যাতে বেতন পাও, সেটা আমি দেখছি।"
তবে কিছু পোশাক কারখানা সময়মতো শ্রমিকদের বেতন দিতে না পারলেও কোনো ধরনের অস্থিরতার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশ ও পোশাক শিল্প মালিকরা।
শিল্প পুলিশ প্রধান (অতিরিক্ত আইজিপি) মাহবুবুর রহমান, "সমস্যা আছে (শ্রমিকদের বেতন নিয়ে), কখনো কখনো তারা (শ্রমিকরা) রাস্তায় নামছে। তবে অসন্তোষের আশঙ্কা আপাতত নেই।"
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট শহীদুল্লাহ আজিম টিবিএসকে বলেন, "কিছু কারখানায় বেতন দিতে দেরি হচ্ছে, এটা ঠিক। তবে এর জন্য অসন্তোষের আশঙ্কা দেখছি না।"
"আর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বা অন্য কোনো জায়গা থেকেও এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য বা নির্দেশনা আসেনি," যোগ করেন তিনি।
অবশ্য কত সংখ্যক কারখানায় বেতন-ভাতা দিতে সমস্যা হচ্ছে, এমন কোনো পরিসংখ্যান বিজিএমইএ'র কাছে নেই বলে জানান তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে বিভিন্ন পক্ষ দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে বলে উঠে এসেছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। এদিকে, অনেক গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকদের সময়মত বেতন দিতে পারছেন না। ফলে শ্রমিকরা বিক্ষুদ্ধ হচ্ছেন। শ্রমিকদের এই ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে যাতে কোনো পক্ষ দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বাণিজ্য ও শ্রম মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ, গতকাল মঙ্গলবার স্টাইলক্রাফট লিমিটেড নামে একটি কারখানার বেতন ভাতা ইস্যুতে শ্রম মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে।
বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তাওহিদুল ইসলাম বলেন, "স্টাইলক্রাফট নামে একটি কারখানার বেতন-ভাতা ইস্যুতে গতকালও মন্ত্রণালয়ে গভীর রাত পর্যন্ত মিটিং হয়েছে। মিরপুরের ওপেক্স গার্মেন্টস এর পাওনা নিয়েও সমস্যা হয়েছে। গাজীপুর ও আশুলিয়ায় প্রায় ২৫টি কারখানা সময়মত বেতন দিচ্ছে না বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।"
এরমধ্যে মূলত ছোট ও মাঝারি আকারের কারখানা পর্যাপ্ত কাজ না পাওয়ায় এমন পরিস্থিতি হচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি।
তবে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে সরকারের এমন সতর্ক অবস্থানকে স্বাগত জানিয়ে তাওহিদুল ইসলাম বলেন, "আমরা চাই কেবল নির্বাচনের সময় নয়, সারাবছর এমন উদ্যোগ চলমান থাকুক। তাহলে শ্রমিকদের সময়মত বেতন-ভাতা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।"