কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দী সাড়ে ৪ লাখ মানুষ

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
08 August, 2023, 02:05 pm
Last modified: 08 August, 2023, 02:20 pm
সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজারের প্লাবিত ইউনিয়নের সংখ্যা ছিল ৩১টি; যা মঙ্গলবার এসে দাঁড়িয়েছে ৪৫টি ইউনিয়নে। সবেচেয়ে বেশি প্লাবিত এলাকা চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা।
পেকুয়ার মেহেরনামা বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকছে বন্যার পানি/ ছবি- টিবিএস

কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজারের ৭টি উপজেলার কমপক্ষে ৪৫টি ইউনিয়নের সাড়ে ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

পানির কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের জৈষ্ঠ্য পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র দাশ জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১৭ মিলিমিটার।

আগামী আরও ৩ দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এতে পাহাড় ধসের আশংকাও রয়েছে বলে জানান তিনি।

চকরিয়ায় পানির নিচে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট (কাকারা-সুরাজপুর-মানিক সড়ক)/ ছবি- টিবিএস

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজারের প্লাবিত ইউনিয়নের সংখ্যা ছিল ৩১টি; যা মঙ্গলবার এসে দাঁড়িয়েছে ৪৫টি ইউনিয়নে। জেলায় সবেচেয়ে বেশি প্লাবিত এলাকা চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা।  

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, লোকজন জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের প্রবেশমুখ সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন ও কাকারা ইউনিয়ন ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। জিদ্দাবাজার-কাকারা-মানিকপুর সড়কের কয়েকটি অংশের উপর দিয়ে মাতামুহুরী নদী থেকে উপচে আসা ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় বসতঘরগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। শুকনো খাবার ছাড়া রান্নার কোন ব্যবস্থা নেই গত দুইদিন ধরে।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ড পানির নিচে তলিয়ে গেছে। স্ব-স্ব ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা পানি যাতে দ্রুত নিচের দিকে নেমে যায়, সেজন্য কাজ করছে। এছাড়াও ৯নং ওয়ার্ডের ১নং বেড়িবাঁধটি রক্ষার জন্য বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে।

বন্যা কবলিত চকরিয়ার সওজ ভবন/ ছবি- টিবিএস

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম ও কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন জানান, "আমাদের ইউনিয়নগুলো মাতামুহুরী নদীর সাথে লাগোয়া। এজন্য পাহাড় থেকে নেমে ঢলের পানি আগে আঘাত আনে এসব ইউনিয়নগুলোতে।"

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেছেন, "বন্যা কবলিত মানুষদের নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যেসব মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে তাদেও বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে।"

এছাড়া রামু উপজেলার ৪ ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। মিঠাছড়ি, খুনিয়াপালং, রশিদনগর ও জোয়ারিয়ানালা এ ৪ ইউনিয়নের বাঁকখালী নদী সংলগ্ন গ্রামের শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও, জালালাবাদ, পোকখালী, ইসলামাবাদ ইউনিয়ন, কক্সবাজার সদরের পিএমখালী, খুরুশকুল, পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড, কুতুবদিয়ার ৬টি ইউনিয়ন, মহেশখালীর ৩ ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়া তথ্য জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

ছবি- টিবিএস

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান জানান, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কুতুবদিয়ায় ৭০০ পরিবার, পেকুয়াতে ১০ হাজার পরিবার, মহেশখালীতে ৫০০ পরিবার, চকরিয়ায় ৫০ হাজার পরিবার, কক্সবাজার সদরে ১ হাজার পরিবার, ঈদগাঁও উপজেলায় ১৫০ পরিবার পানিবন্দী রয়েছে।

প্রতিটি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রতিটি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছে। তারা বোট নিয়ে পানিবন্দি মানুষের ঘরে ঘরে যাচ্ছে এবং তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসছে।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.