পশ্চিমা ভোক্তারা ব্যয় কমানোয় দেশের চিংড়ি রপ্তানিতে ধস

বাংলাদেশ

05 August, 2023, 10:40 am
Last modified: 05 August, 2023, 03:15 pm
রপ্তানি বাজারের এই ধস থামাতে ভেনামির পোনা উৎপাদনের প্রাথমিক অনুমতি দিয়েছে মৎস অধিদপ্তর। দ্রুত ভেনামির বাণিজ্যিক উৎপাদন পেতেই দেশ বাংলা নামের একটি কোম্পানিকে পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামির পোনা উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ইনফোগ্রাফ: টিবিএস

বিশ্ববাজারে 'ব্ল্যাক টাইগার' হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ির চাহিদা পশ্চিমা দেশগুলোতে একেবারেই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ফলে কম খরচের ভেনামি চিংড়ির পোনা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের প্রাথমিক অনুমতি দিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চিংড়ি রপ্তানি করে ৩০০.২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে বাংলাদেশ, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬.২৭ শতাংশ কম। যদিও এ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০০ মিলিয়ন ডলার, লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে তুলনা করলে রপ্তানি ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কম হয়েছে।

রপ্তানি বাজারের এই ধস থামাতে তাই ভেনামির পোনা উৎপাদনের প্রাথমিক অনুমতি দিয়েছে  মৎস অধিদপ্তর। দ্রুত ভেনামির বাণিজ্যিক উৎপাদন পেতেই দেশ বাংলা নামের একটি কোম্পানিকে পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামির পোনা উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।   

রপ্তানিকারকরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপ-আমেরিকার চিংড়ির ক্রেতারা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে থাকায় ব্যয়ে কাটছাঁট শুরু করেছেন। ভেনামির তুলনায় বাগদা চিংড়ি কিনতে ২ থেকে ৩ ডলার পর্যন্ত বাড়তি খরচ করতে হয় বিধায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ক্রেতারা ভেনামির দিকেই ঝুঁকছেন বেশি।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)- এর তথ্য বলছে, ৩২ বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক চিংড়ির বাজারে এক বছরের ব্যবধানেই ভেনামির বাজার ৭৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮২-৮৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এর বাইরে ৭-৮ শতাংশ বাজার রয়েছে বাগদার। বাকি অংশে গলদা চিংড়ি ও সামুদ্রিক কিছু প্রজাতির মাছ রয়েছে। 

জানা যায়, বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ির ৮৫ শতাংশ রপ্তানি হয় ইউরোপে; ৭-৮ শতাংশ আমেরিকায় এবং বাকিটা জাপান ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হয়।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, গত নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে একেবারেই তলানিতে নেমে গিয়েছিল চিংড়ি রপ্তানি। কারণ সে সময়ে শীতের মধ্যে ইউরোপের ক্রেতাদের বিদ্যুৎ বিল বাবদ ব্যয় বেড়ে গিয়েছিল তিনগুণ পর্যন্ত। যার প্রভাবে তারা রেস্টুরেন্টে যাওয়া কমিয়ে দেয় এবং চিংড়ি কেনার ক্ষেত্রেও ভেনামিকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে।

বাজার ধরতে ভেনামি চাষের বিকল্প নেই

চিংড়ি রপ্তানি বাড়াতে হলে ভেনামি চাষের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বাগদা দিয়ে বাজারে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার অবস্থা আর নেই।

এদিকে অবার অনেক ক্রেতা ভেনামি ও বাগদা চিংড়ি একসঙ্গে কিনতে চান। যখন দেশে শুধু বাগদা আছে, ভেনামি নেই- তখন ওই ক্রেতাদের অর্ডারই আসে না। ভেনামির চাষ হলে বাংলাদেশ এই অর্ডারগুলো পাওয়া শুরু করবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এই পরিস্থিতিতে দুই বছরের বেশি সময়ে ট্রায়াল প্রডাকশন শেষে এ বছরের শুরুর দিক থেকেই ভেনামির বাণিজ্যিক উৎপাদনের অনুমতি প্রদান করতে শুরু করেছে মৎস অধিদপ্তর।

মৎস্য অধিদপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর (একোয়াকালচার) অলোক কুমার সাহা টিবিএসকে জানান, এখন পর্যন্ত ৮-৯টা প্রতিষ্ঠানকে ভেনামির বাণিজ্যিক চাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর দেশ বাংলাকে পরীক্ষামূলক চিংড়ি চাষের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।

তবে ভেনামির বাণিজ্যিক উৎপাদনের অনুমতি দিলেও পোনা উৎপাদনের জন্য কোম্পানিটিকে সপ্তাহ দুয়েক আগে অনুমতি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বাণিজ্যিক চাষ কত দ্রুত সম্প্রসারণ হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে পোনা উৎপাদনের ওপর।"

ভেনামির উৎপাদনের অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, পোনার উৎপাদন পাওয়া যেতে পারে নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ। এটি নিয়ে চাষ করা শুরু হলে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে দেশে ভেনামির বাণিজ্যিক উৎপাদন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

তবে এর মধ্যেই একটি প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে পোনা আমদানি করে উৎপাদন শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। দেশ বাংলা পোনা উৎপাদন করলে সেক্ষেত্রে আর আমদানির প্রয়োজন পড়বে না বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এমইউ সি ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস টিবিএসকে বলেন, "আমরা বাণিজ্যিক চাষের অনুমতি পেয়ে ভারত থেকে পোনা এনে চাষ শুরু করেছি। তবে পোনা উৎপাদনে যে প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তারা উৎপাদন করলে আর আমদানির দরকার পড়বে না।"

তিনি জানান, কাঁচামালের ঘাটতির কারণে তারা তাদের সক্ষমতার মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত তারা ব্যবহার করতে পারছেন।

"ভেনামির চাষ শুরু হয়ে গেলে আমাদের প্রসেসিং এবং রপ্তানি দুটোই বাড়তে থাকবে। এজন্য আমরা দ্রুত ভেনামি চাষে গুরুত্ব দিচ্ছি," যোগ করেন তিনি। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.