জ্যাক মা-র ২০ ঘণ্টার রহস্যঘেরা ঢাকা সফর নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে!

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
03 July, 2023, 07:05 pm
Last modified: 03 July, 2023, 09:34 pm
জ্যাক মার এই সফরকে ব্যক্তিগত বলা হলেও এ নিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের মধ্যে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে।

সম্প্রতি নীরবে ঢাকায় ঝটিকা সফর করে গেছেন চীনা ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। গত ২৬-২৭ জুন ২০ ঘণ্টার সফরে ঢাকায় আসেন তিনি। ঢাকা থেকে জ্যাক মা যান নেপালে। সেখানে সংক্ষিপ্ত সফর সেরে ২৯ জুন তিনি পাকিস্তানে যান।

জ্যাক মার এই সফরকে ব্যক্তিগত বলা হলেও এ নিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের মধ্যে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। বিশেষ করে তার সফরসঙ্গীদের কারণেই এ সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে জল্পনা বেশি হচ্ছে। চীনা, ড্যানিশ ও মার্কিনসহ সাতজন সঙ্গী ছিল তার সফরে।

ঢাকায় জ্যাক মা উঠেছিলেন গুলশানের রেনেসাঁ হোটেলে। ওই হোটেলের একজন নির্বাহীর তথ্যমতে, '[২৬ জুন] বিকাল ৬টার দিকে তিনি হোটেল থেকে বের হন এবং হোটেলের গাড়িতে করে দুই ঘণ্টা শহর ঘোরেন।'

ওই নির্বাহী আরও জানান, 'তিনি পরদিন সকাল ১১টায় সকালের নাস্তা না করেই হোটেল ছাড়েন।'

ই-কমার্স, রিটেইল, ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি খাতে সুবিদিত জ্যাক মা-র মালিকানাধীন আলীবাবা গ্রুপ বাংলাদেশের বৃহত্তম মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) বিকাশে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের বৃহত্তম ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজও অধিগ্রহণ করেছে আলীবাবা। দারাজ এখন দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও নেপালে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে বিকাশ, দারাজ এবং আরও কয়েকটি ই-কমার্স ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা নিশ্চিত করেছে যে জ্যাক মা তাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক করেননি।

সম্প্রতি হোটেলের একজন নির্বাহী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জ্যাক মার সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করার পরই কেবল সংবাদমাধ্যম তার এ সফরের কথা জানতে পারে।

তুমুল জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়ে জ্যাক মা নেপালের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়েন। তিনি বাংলাদেশ ছাড়ার এক সপ্তাহ পরও তার সফর নিয়ে দেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

এদিকে দ্য ট্রিবিউন এক্সপ্রেস পাকিস্তানে জ্যাক মার সফরের খবর নিশ্চিত করেন দেশটির বিনিয়োগ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজফার আহসান। এ কারণেই অনেকে ধারণা করছেন, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যেই এ তিন দেশ সফর করে থাকতে পারেন চীনা বিজনেস টাইকুন।

পাকিস্তানে ব্যবসায়িক কারণে সফর করে থাকলে, ঢাকায় জ্যাক মার সফরেরও পেছনেও ব্যবসা-সংক্রান্ত এজেন্ডা থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশও বিদেশিদের জন্য বিনিয়োগবান্ধব। এ কারণে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী এদেশের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে।

চীনের ব্যাংক ব্যবস্থা ও সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমালোচনা করার পর ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন জ্যাক মা। চীন সরকারও তার ব্যাপারে কিছু বলছিল না। তিনি স্বেচ্ছায় জনসম্মুখে আসা বন্ধ করে দেন নাকি তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়—এ নিয়ে ওই সময় ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলে।

চীনের ব্যাংক ব্যবস্থা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমালোচনা ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির বিরাগভাজন হয়ে পড়েন জ্যাক মা। তার প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট গ্রুপের পরিকল্পিত তিন হাজার সাতশ কোটি ডলারের 'ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং'ও (আইপিও) আটকে দিয়েছিল চীন।

চীনে এমন বৈরী পরিস্থিতির শিকার হওয়ার পর জ্যাক মা নানা দেশ ঘুরে শেষ পর্যন্ত জাপানে থিতু হয়েছেন।

নিজের দেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বিরূপ পরিবেশের শিকার হওয়ার কারণে জ্যাক মা অন্যান্য দেশে বাণিজ্য সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে পারেন। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে তিনি বাণিজ্য বিস্তার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। 

আলীবাবার মতো জায়ান্ট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় জ্যাক মার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান হতে পারে—যদি তিনি এদেশে বিনিয়োগ করেন। 

এদিকে কাঠমান্ডু এক্সপ্রেস একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলেছে, একেবারেই অল্প কয়েকজন কর্মকর্তা তার নেপাল সফর সম্পর্কে জানতেন। সংবাদমাধ্যমে মা-র কাঠমান্ডু সফরকে 'বিজনেস ট্রিপ' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যদিকে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন নিশ্চিত করেছে, জ্যাক মা ২৯ জুন লাহোরে পৌঁছে প্রায় একদিন সেখানে কাটান। ওই সময়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ওঠে, জ্যাক মা ও তার দল পাকিস্তানে ব্যবসার সুযোগ খতিয়ে দেখতে গেছেন এবং তারা অনেক প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন চেম্বার অভ কমার্সের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। সবগুলো সফরেই জ্যাক সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে গেছেন।

নেপাল ও পাকিস্তানে যদি জ্যাক মার সফরের পেছনে ব্যবসায়িক সফরের উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে বাংলাদেশ সফরের পেছনেও একই উদ্দেশ্য থাকাটা অস্বাভাবিক হবে না। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ আসতে পারে তার মতো বিজনেস টাইকুনের কাছ থেকে লাভবান হওয়ার।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত জ্যাক মা চীনের চতুর্থ শীর্ষ এবং সারা বিশ্বে ৩৯তম শীর্ষ ধনী। তার নিট সম্পদমূল্য সাড়ে ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.