দীর্ঘদিনের খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে স্বস্তির হাতিরঝিল

বাংলাদেশ

24 June, 2023, 11:55 am
Last modified: 24 June, 2023, 11:59 am
তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এ খোঁড়াখুঁড়িতে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় যানজট লেগে থাকে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এই এলাকা দিয়ে চলাচলকারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।
ছবি: মোঃ জাহিদুল ইসলাম

ব্যস্ততম রাজধানীর অন্যতম এক স্বস্তির এলাকা হাতিরঝিল। তবে এই এলাকার লিঙ্ক রোডের মগবাজার থেকে রামপুরা অংশে দীর্ঘদিন ধরে খনন কাজ চলতে থাকায় এখন তা ঢাকাবাসীর জন্য এক অস্বস্তিতে পরিণত হয়েছে। 

তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এ খোঁড়াখুঁড়িতে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় যানজট লেগে থাকে। এতে চরম জনদুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এই এলাকা দিয়ে চলাচলকারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।

মাত্র ১০ বছর আগে উদ্বোধন করা হাতিরঝিলের চকচকে রাস্তার মগবাজার থেকে রামপুরা পর্যন্ত অংশের সার্ভিস লেনে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে গত ১২ মার্চ থেকে। যদিও দুই মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তিন মাস পার হলেও কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

সরকারের মালিকানাধীন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)-এর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নের অংশ হিসেবে হাতিরঝিল লেকের দক্ষিণ পাশের প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা খনন করে ১৩২ কেভি ভূ-গর্ভস্থ ক্যাবল স্থাপনের জন্য এ খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে।

রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প ও নকশা) এএসএম রায়হানুল ফেরদৌস দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, রমজানের ছুটির কারণে কাজ বিলম্বিত হয়েছে। এছাড়া, পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিতেও সময় লেগেছে।

তিনি বলেন, "আমরা ডিপিডিসিকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য অনুরোধ করেছি, যাতে আর বিলম্ব না করে রাস্তাটি মেরামত করা যায়।"

রাস্তার বর্তমান অবস্থা

বুধবার (২১ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাতিরঝিল প্রকল্পের মহানগর প্রজেক্টের গেইট থেকে রামপুরা পর্যন্ত পুরো রাস্তা খুঁড়ে বিদ্যুতের তারের পাইপ বাসানোর কাজ চলছে। মগবাজার অংশ থেকে মহানগর প্রজেক্ট এলাকা পর্যন্ত বিদ্যুৎ লাইন বাসানোর কাজ শেষ হলেও এ অংশ মেরামত করা হয়নি। ফলে এক লেন ধরেই রাস্তায় গাড়ি চলাচল করছে।

এ অংশের খোঁড়াখুঁড়ির ফলে হাতিরঝিলের পুরো এলাকায় যানজট লেগে যায়; বিশেষ করে সকালে এবং অফিস ছুটির সময়ে যানজট তীব্র হয়। 

এছাড়া, রাস্তার মাটি, ইট-বালি তুলে ফুটপাতে রাখায় পায়ে হেঁটে চলাচলেও সৃষ্টি হচ্ছে ভোগান্তি। 

ডিপিডিসির পক্ষ থেকে প্রকল্প এলাকায় গণবিজ্ঞপ্তি সংবলিত সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। যানজট এড়ানোর জন্য জনসাধারণকে ওই এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পের কাজ কতদিন ধরে চলবে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

এই রাস্তায় নিয়মিত চলাচলকারী মোটরসাইকেল চালক সজিব আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সকালে অফিস টাইমে এই রাস্তা দিয়ে রামপুরা থেকে গুলশান যেতে দেড় ঘন্টারও বেশি সময় লেগে যায়। পুরো রাস্তায় যানজট লেগে থাকে। 

"বৃষ্টি হলে মগবাজার অংশের রাস্তা দিয়ে চলাচল করা দুর্বিষহ হয়ে যায়। বালু, সুরকি ফেলে রাখায় রাস্তা এবড়ো থেবড়ো হয়ে আছে," বলেন তিনি।

রামপুরার বাসিন্দা হাসনাহেনা বেগম টিবিএসকে বলেন, কাদা-মাটি রাখায় রাস্তার ফুটপাত দিয়েও হাঁটার সুযোগ নেই। আবার রোদের মধ্যে ধুলো-বালিতে আরও বেশি ভোগান্তি হয়।

"রাস্তায় যানজট লেগে থাকায় বিকল্প পথ দিয়েই চলাচল করতে হয়। অনেক সময় ২/১ কিলোমিটার হেঁটেও পারাপার হতে হয়," যোগ করেন তিনি।

পরিকল্পিত হাতিরঝিলে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি

হাতিরঝিল প্রকল্পের শুরু থেকে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন স্থপতি ও নগর বিশেষজ্ঞ ইকবাল হাবিব।

তিনি টিবিএসকে বলেন, প্রকল্পের শুরুতে 'ইউটিলিটি ডাক্ট' করে রাখলে এখন নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ি করা লাগত না। ডিপিডিসির উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তারের জন্য ইউটিলিটি ডাক্ট করতে হলে প্রকল্পের আকার আরও অনেক বেড়ে যেত। 

কিন্তু তখন সরকারের অর্থনৈতিক সংকট ছিল বলে জানান তিনি।

ইকবাল হাবিব বলেন, "হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজের সময় এই ডাক্ট নতুন করে করলে হাতিরঝিল উদ্বোধন হতে আরও তিন বছর সময় বেশি লাগতো। তবে এখন হাতিরঝিলের সৌন্দর্য ফেরাতেই লেকের ভিতরের বিদ্যুতের টাওয়ারগুলো তুলে ফেলে বিদ্যুতের লাইন আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়া হবে।"

কিন্তু এই ডাক্ট তৈরির আগে অন্য সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা যেত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে, প্রধান প্রকৌশলী রায়হানুল ফেরদৌস টিবিএসকে বলেন, হাতিরঝিলের অংশে যেহেতু কোনো বাসাবাড়ি নেই, তাই অন্য সংস্থার জন্য ডাক্ট তৈরি এতটা জরুরি নয়। 

"গ্যাস কিংবা পানির লাইন এই রাস্তার নিচ দিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাই পরিকল্পনায় তা রাখা হয়নি," যোগ করেন তিনি।

হাতিরঝিল প্রকল্প

হাতিরঝিল প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর থেকে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি ও ভবিষ্যতের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ধাপে ধাপে প্রকল্পের আকার বাড়ানো হয়। 

এরই অংশ হিসেবে ২,০০০ কোটি টাকার হাতিরঝিল প্রকল্পে ইউটিলিটি ডাক্টের পরিকল্পনা করা হয়।

তবে বর্তমানের এই খোঁড়াখুঁড়িতেও অন্য কোনো সংস্থার জন্য ইউটিলিটি ডাক্টের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে পরবর্তিতে ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন, তিতাস গ্যাস কিংবা ডিপিডিসির অন্য কোনো লাইনের জন্যও হয়তো আবারও খোঁড়া লাগতে পারে এই সড়ক।

২০০৭ সালের অক্টোবরে হাতিরঝিল প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বেড়ে শেষ পর্যন্ত এর আকার দাঁড়ায় ২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। 

প্রকল্পের আওতায় ৩০২ একর জলাশয় এবং ভূমির উন্নয়ন করা হয়েছে। ৮.৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে সড়ক, ৯.৮ কিলোমিটার সার্ভিস সড়ক, ৪টি ব্রিজ, ৪টি ওভারপাস, ৩টি ভায়াডাক্ট ও ২টি ইউলুপ নির্মাণ করা হয়েছে।

হাতিরঝিল প্রকল্প যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের (এডরা) 'পরিসর পরিকল্পনা' ক্যাটাগরিতে 'গ্রেড প্লেস অ্যাওয়ার্ড ২০২০' অর্জন করে। নগর পরিবেশ আর গণপরিসর সৃষ্টিশীলতার ক্ষেত্রে এটি একটি আন্তর্জাতিক সম্মাননা।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.