এমআরপিতে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি ও তামাকজাত দ্রব্যে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ জরুরি: সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
27 May, 2023, 04:35 pm
Last modified: 27 May, 2023, 04:35 pm

সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি ও তামাক কোম্পানি কর্তৃক রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে আসন্ন অর্থবছর থেকে তামাকজাত দ্রব্য সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে (এমআরপি) বিক্রি নিশ্চিতকরণ এবং সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ জরুরি। এটি অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা।

আজ শনিবার (২৭ মে ২০২৩) সকাল ১১টায় অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে 'এমআরপিতে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিশ্চিতকরণ ও তামাকজাত দ্রব্যে সুনির্দিষ্ট কর আরোপের দাবি'তে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএনটিটিপির প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো ও বিএনটিটিপির একটি যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক কোম্পানিগুলো প্যাকেটে লেখা খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করে বছরে ৫০০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-র অনুসন্ধানেও এর সত্যতা মিলেছে। সুতরাং এর বিরুদ্ধে এনবিআরকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বেশি দামে বিক্রির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে সরকারকে দ্রুত মোড়কে উল্লিখিত মূল্যে সিগারেট বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি রাজস্ব বাড়াতে এবং ফাঁকি বন্ধ করতে অ্যাড ভ্যালোরেম করারোপ পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতিতে কর আরোপ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা বলেন, সুনির্দিষ্ট কর আরোপ ও এরআরপিতে বিক্রি নিশ্চিতের মাধ্যমে তামাক খাত থেকে আরও রাজস্ব আয় সম্ভব। নিম্ন স্তরের সিগারেটের ভোক্তা বেশি হলেও এই খাতে কর হার ৫৭ শতাংশ। অথচ অন্য খাতে সেটা ৬৫ শতাংশ। ফলে রাজস্ব বৃদ্ধি করতে দ্রুত এ স্তরের সম্পূরক শুল্ক ৫৭ শতাংশ থেকে ৬৫ শতাংশে বৃদ্ধি করতে হবে। 

সংবাদ সম্মেলনে সুনির্দিষ্ট করারোপের বিধান রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও করারোপের সুপারিশ তুলে ধরা হয়। বাজেট প্রস্তাবে নিম্ন স্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা নির্ধারণ করে ৩৫.৭৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; মধ্যম স্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৭০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; উচ্চ স্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; এবং প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৯৭.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেওয়া হয়। পাশাপাশি নিম্ন স্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ৫৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়েছে।

এছাড়া বিড়ির ২৫ শলাকার খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ; প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার পাশাপাশি উভয় দ্রব্যেরই সম্পূক শুল্ক ৫৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদে, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারি সাইফুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন। বিএনটিটিপির প্রজেক্ট অফিসার ইব্রাহীম খলিলের উপস্থাপনায় সাংবাদ সম্মেলনে সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মী ও তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.