শ্রীহীন প্রবাল দ্বীপ; ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় দ্বীপবাসী

বাংলাদেশ

15 May, 2023, 10:00 pm
Last modified: 15 May, 2023, 10:00 pm
দ্বীপের ১ হাজার ২০০ ঘর ও কটেজ ভেঙে গেছে। খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে বহু মানুষ। সেন্ট মার্টিনের মূল বাজারে দোকান প্রায় সাড়ে ৩০০। এর মধ্যে আধাপাকা এবং টিনশেড দোকানের ছাউনি উপড়ে গেছে। কিছু কিছু দোকান ভেঙে গেছে আংশিক। 

প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের পূর্ব পাশের জেটি ঘাট ধরে একটু এগিয়ে গেলেই মূল বাজার। সে বাজারে প্রবেশ করতেই দেখা গেল ঘূর্ণিঝড় মোখার রেখে যাওয়া ক্ষত। প্রায় সাড়ে ৩০০ দোকান নিয়ে বাজারটির পাকা দোকানগুলো অক্ষত থাকলেও আধাপাকা এবং টিনশেড দোকানের ছাউনি উপড়ে গেছে। কিছু কিছু দোকান ভেঙে গেছে আংশিক। 

সোমবার বিকাল ৫টার দিকে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের মালিকরা কিছুটা ভাঙা অংশ সংস্কারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বাজারের কয়েকটি দোকানও খুলেছে। ওই দোকানগুলোতে মানুষের আনাগোনা, প্রয়োজনীয় মালামাল বা উপকরণ কিনছেন দ্বীপের মানুষ।

বাজারের ব্যবসায়ী নাহিদ হোসেন জানালেন, তার মুদি দোকানের অর্ধেক অংশ ভেঙে গেছে। উড়ে গেছে টিন। যা মালামাল ছিল, তা-ও বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। যা আছে, তা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।

আরেক ব্যবসায়ী আবদুল মালেক বলেন, বাজারের কম হলেও দেড় শতাধিক দোকান নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবাল দ্বীপটির বাজার হয়ে পশ্চিম পাড়ার সড়কটির বিভিন্ন পয়েন্টজুড়ে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে যাওয়া গাছ। যদিও এর মধ্যে গাছ কেটে ও সরিয়ে সড়ক চলাচল উপযোগী করা হয়েছে। 

তবে সড়কের দুপাশের আধাপাকা ঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ছোট কটেজ আংশিক বা সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে।

ছবি: টিবিএস

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের সদস্য (মেম্বার) খোরশেদ আলম জানান, চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবকরা মিলে সড়কে ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। 

সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দ্বীপে এসে সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন। বিকাল ৫টায় দলটি দ্বীপ থেকে টেকনাফের উদ্দেশে যাত্রা ক্রে। দ্বীপের সার্বিক চিত্র তারা দেখেছেন, ক্ষয়-ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণও তাদের জানানো হয়েছে।

খোরশেদ আলম বলেন, দ্বীপের পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপা ও মাঝেরপাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ এখনও খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন।

পশ্চিম পাড়া এলাকার রফিকুল হুদা নামের এক জেলে জানান, সাগরে মাছ ধরে জীবিকা পরিচালনা করেন তিনি। স্ত্রী ও ৩ সন্তান নিয়ে সংসার। ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। ফিরে এসে দেখেন ঘরটি ভেঙে গেছে।

কোনারপাড়া এলাকার হেলাল উদ্দিন নামের এক যুবক বলেন, পুরো দ্বীপ এখন শ্রীহীন হয়ে উঠেছে। আগের অবস্থায় ফিরতে আরও অনেক সময় লাগবে।

কোনারপাড়ার কটেজ মালিক আবু তালেব জানান, তার ১০ কক্ষের কটেজের টিন উড়ে গেছে। একটি অংশও ভেঙ্গে গেছে। 

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপের ১ হাজার ২০০ ঘর ও কটেজ ভেঙে গেছে। তার মধ্যে ১ হাজার বসতঘর। এসব ঘরের মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে। জেলা প্রশাসক সোমবার দ্বীপ পরিদর্শনে এসে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। একই সঙ্গে প্রশাসনের সহযোগিতায় ইউনিয়নের পক্ষে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

ছবি: টিবিএস

মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপের ২ হাজারের বেশি গাছ ভেঙে গেছে। 

বিকাল ৫টায় জেটি ঘাটে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, প্রাথমিকভাবে দ্বীপের মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবারের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হবে। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের মূল আঘাত হয়েছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। এর বাইরে টেকনাফ উপজেলায় কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের ১ হাজার ঘর, টেকনাফের অন্যান্য উপকূলীয় এলাকায় ৩ হাজার ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.