কার্বন ক্রেডিট থেকে ১৭ মিলিয়ন ডলার আয় বাংলাদেশের, যা হিমশৈলের চূড়া মাত্র

বাংলাদেশ

08 April, 2023, 11:00 pm
Last modified: 08 April, 2023, 11:27 pm
তৈরি পোশাক খাতের বাংলাদেশি সরবরাহকারীরা অচিরেই কার্বন ক্রেডিটের সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। কারণ এ খাতের বৈশ্বিক গ্রাহকরা এখন আগের চেয়েও ঘন ঘন কারখানায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমানোর দাবি তুলছে।

২০০৬ সালে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) তাদের প্রথম ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম প্রকল্পটি জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনে নিবন্ধিত করার সময় প্রথমবারের মতো কার্বন ক্রেডিট থেকে আয় করে বাংলাদেশ। এরপর থেকে ইডকল এ পর্যন্ত ২.৫৩ মিলিয়ন কার্বন ক্রেডিট বিক্রি করে ১৬.২৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, বর্তমান বিনিময় হারে যা ১৭০ কোটি টাকার সমান। কার্বন ক্রেডিটকে একধরনের অনুমতিপত্র বলা যায়—এর মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করতে পারে।

এই কার্বন ক্রেডিট আয়ের বেশিরভাগই এসেছে উন্নত রান্নার চুলা (আইসিএস) থেকে। বাকি আয় এসেছে সোলার হোম সিস্টেম থেকে।

পাঁচটি ইট প্রস্তুতকারক কয়লার ব্যবহার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে এবং পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদনে পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে। এই প্রস্তুতকারকরা প্রায় ৩ কোটি টাকা আয় করেছে। হাইব্রিড হফম্যান ভাটা (এইচএইচকে) প্রযুক্তি ব্যবহার করার সুবাদে ২০১৮-র জানুয়ারি থেকে ২০২০-এর মার্চ পর্যন্ত এই ইট প্রস্তুতকারকরা ৬৫ হাজার ৬০৩ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমাতে পারে।

টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবহার বাড়াতে কাজ করে ঢাকাভিত্তিক এনজিও ওয়েস্ট কনসার্ন। এই সংস্থার প্রচেষ্টায় বিশ্বের প্রথম কম্পোস্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এই প্ল্যান্ট ৬২ হাজার টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমিয়ে ২৫.৬৭ লাখ টাকা আয় করেছে। তবে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, তারা ২০১৪ সালের পরে কোনো কার্বন ক্রেডিট বিক্রি করেনি।

কার্বন ক্রেডিট বিক্রি থেকে বাংলাদেশ যে পরিমাণ আয় করতে পারে, এটি তার একটি ভগ্নাংশ মাত্র।

ইডকলের সিইও আলমগীর মোরশেদ বলেন, প্রতিষ্ঠানটি যদি আগামী পাঁচ বছরে উন্নত চুলার সংখ্যা দ্বিগুণ করে ৮০ লাখে উন্নীত করতে পারে এবং তিন বছরের মধ্যে ৩০০ মেগাওয়াট রুফটপ সোলার স্থাপন করতে পারে, তাহলে কার্বন ক্রেডিট থেকে আকাশচুম্বী করা সম্ভব।

তবে কার্বন ক্রেডিট বিক্রির লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি বাধা হচ্ছে, স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সচেতনতা ও সক্ষমতার অভাব, অপর্যাপ্ত তহবিল এবং দক্ষ জনবলের অভাব।

তবে আশা ফুরিয়ে যায়নি। আলমগীর মোরশেদের বিশ্বাস, তৈরি পোশাক খাতের বাংলাদেশি সরবরাহকারীরা অচিরেই কার্বন ক্রেডিটের সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। কারণ এ খাতের বৈশ্বিক গ্রাহকরা এখন এখন আগের চেয়েও ঘন ঘন কারখানায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমানোর দাবি তুলছে। সঠিক কৌশল ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ শিগগিরই আন্তর্জাতিক কার্বন ক্রেডিট বাজারের বড় অংশীদার হয়ে উঠতে পারে।

কার্বন ক্রেডিট মূলত এক ধরনের অনুমোদন, যার মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ১ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা অন্য কোনো গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের অধিকার লাভ করে। কার্বন ক্রেডিটের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো কার্বনের ওপর মূল্য ধার্য করে এর নিঃসরণ কমাতে উৎসাহ দেওয়া, যা পরিণতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব প্রশমিত করবে।

কার্বন ক্রেডিট কীভাবে কাজ করে? 

কার্বন ক্রেডিট হলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন বাড়ানোর পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ কমানোর একটি পথ তৈরি করে দেয়।

গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমায় বা করে না, এমন সব প্রকল্পের মাধ্যমে কার্বন ক্রেডিট অর্জন করা যায়। এই প্রকল্পগুলো অনেকভাবে নেওয়া হতে পারে—বায়ু, সৌর, জল ও ভূ-তাপীয়বিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উদ্যোগ; ভবন, কারখানা বা পরিবহন ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়ায় এমন জ্বালানিসাশ্রয়ী প্রকল্প; নতুন বন তৈরি বা ক্ষয়প্রাপ্ত জমি পুনরুদ্ধার করার জন্য বনায়ন ও পুনর্বনায়ন প্রকল্প; ভাগাড় থেকে নিঃসৃত মিথেন ধরে রাখার প্রকল্প প্রভৃতি।

এই প্রকল্পগুলো সাধারণত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাস্তবায়ন করা হয় এবং জাতিসঙ্ঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন-এর (ইউএনএফসিসি) মতো স্বীকৃত তৃতীয় পক্ষের সংস্থা দ্বারা প্রত্যায়িত হয়। প্রত্যয়নের পর একটি প্রকল্প কার্বন ক্রেডিট অর্জন করতে থাকে। এ ক্রেডিট কার্বন বাজারে বিক্রি বা লেনদেন করা যায়, যা দেশ, ব্যবসা ও ব্যক্তিদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে অর্থনৈতিক প্রণোদনা দিয়ে থাকে।

সারা বিশ্বে যেভাবে হয় কার্বন বাণিজ্য 

কার্বন ক্রেডিট পরিমাপ করা হয় কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সমতুল্য মেট্রিক টনে। আর এর লেনদেন হয় বাজারভিত্তিক মেকানিজমে। তবে বাজারের অবস্থা, প্রকল্পের ধরন ও ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে কার্বন ক্রেডিটের মূল্যে ব্যাপক হেরফের হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, পরিবেশপন্থী ওবামা প্রশাসনের আমলে প্রতি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইডে কার্বন ক্রেডিটের মূল্য ৬-৭ ডলারে উঠে যায়। কিন্তু পরিবেশের প্রতি উদাসীন ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে তা ১-২ ডলারে নেমে আসে। ইডকল সিইও জানান, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে কার্বন ক্রেডিটের দাম এখন কম। এ যুদ্ধ কার্বন ক্রেডিটের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে।

ওয়েস্ট কনসার্নের নির্বাহী পরিচালক আবু হাসনাত মো. মাকসুদ সিনহা বলেন, কার্বন ক্রেডিটের ব্যাপক দরপতনের কারণে প্রায় এক দশক তারা কোনো কার্বন ক্রেডিট বিক্রি করেননি। ২০০৮ সালে প্রতি টন কার্বন ক্রেডিটের দাম ছিল ১০ ইউরো, ২০১৪ সালে তা ৩০ সেন্টে নেমে আসে। তিনি জানান, তারা রূপগঞ্জের ভুলতায় বিশ্বের প্রথম কম্পোস্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করেছেন। এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে ভাগাড় থেকে নিঃসৃত মিথেন ধরে রাখা হয়। এই প্রকল্পটি ইউএনএফসিসিসির দেওয়া ৭ হাজার ১৩১টি সিইআর বা কার্বন ক্রেডিট বিক্রি করে ২৫.৬৭ লাখ টাকা পেয়েছে।

যেসব কোম্পানির কাছে উদ্বৃত্ত কার্বন ক্রেডিট আছে, তারা অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে কার্বন ক্রেডিট বাণিজ্য করতে পারে। ক্রেডিটের মূল্য নির্ধারিত হয় চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে। ক্রেডিটের ঘাটতি হলে দাম বেড়ে যায়।

কিছু দেশের সরকার তাদের দেশে বা অঞ্চলে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের সীমা নির্ধারণ করে দেয়। এই সীমা সাধারণত নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রার আকারে ঠিক করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন কোম্পানি বা শিল্পের নিঃসরণের ইতিহাস বা অন্যান্য ফ্যাক্টরের ওপর ভিত্তি করে সেগুলোর জন্য নিঃসরণের সীমা ঠিক করে দেয় সরকার। যেসব প্রতিষ্ঠান অনুমোদিত সীমার চেয়ে বেশি নিঃসরণ করে, তাদের অতিরিক্ত ক্রেডিট কিনতে বা জরিমানা দিতে হয়। 

কার্বন ক্রেডিট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত আয় বাড়তি গ্রিনহাউস গ্যাস হ্রাস প্রকল্প গ্রহণে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণে অথবা বা রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্সের খরচ কমাতে ব্যবহার করা যায়। সামগ্রিকভাবে কার্বন ক্রেডিট কোম্পানিগুলোকে তাদের কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমনে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কোম্পানিগুলোকে সঠিকভাবে নিঃসরণের পরিমাপ করতে হয়, যাতে তাদের নিঃসরণ অনুমোদিত সীমার মধ্যে রাখা যায়। তৃতীয় পক্ষের যাচাইকারী দিয়ে নিঃসরণ তথ্যের নির্ভুলতা নিশ্চিত করা হয়।

ইডকল যেভাবে কার্বন বাণিজ্য করে

ইডকল সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে কার্বন ক্রেডিট অর্জন করে। এই প্রকল্পগুলো পরিচ্ছন্ন ও নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে থাকে। প্রকল্পগুলো গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের মাধ্যমেও কার্বন ক্রেডিট অর্জন করে।

ইডকলের সোলার হোম সিস্টেম ও উন্নত চুলা কর্মসূচিগুলোকে বিশেষ করে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের আওতায় ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম প্রকল্প হিসেবে নিবন্ধিত করা হয়েছে। ইডকল সিইও জানান, তাদের প্রত্যেক চুলা বছরে ১ মিলিয়ন টন কম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে। বর্তমানে তাদের ৪০ লাখ চুলা আছে। অর্থাৎ এই কর্মসূচির ফলে বছরে ৪০ লাখ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমে। 

ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজমের আওতায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ নির্ধারণ করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হয়। এই কর্মসূচিগুলো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমায় এবং জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন একটি নির্দিষ্ট সময়কালে বিভিন্ন প্রকল্পের পারফর্ম্যান্স ও পরিচালন অবস্থা যাচাই করার পর সেগুলোকে কার্বন সার্টিফাইড এমিশন রিডাকশন (সিইআর) বা কার্বন ক্রেডিট দেয়। 

এই প্রকল্পগুলোর সমন্বয়কারী এবং পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইডকল সিইআর বিক্রি করতে পারে। এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের সংস্থাটি ইডকলের যোগ্য প্রকল্পগুলোকে ২.৫৩ মিলিয়ন সিইআর দিয়েছে। এসব সিইআর বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়ে বাংলাদেশে এসডিজিকে সহায়তা করবে এমন নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য দীর্ঘমেয়াদি তহবিল গঠন করতে চায় ইডকল।

আলমগীর মোরশেদ জানান, তারা বিশ্বব্যাংকের কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট কার্বন ফান্ডের কাছে কার্বন ক্রেডিট বিক্রি করেন। এ থেকে প্রাপ্ত অর্থ এ কর্মসূচিকে সম্প্রসারিত করার জন্য সৌর প্যানেলে অর্থায়ন, স্থাপন ও সেবা প্রদানের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।

ক্রেতা কারা?

যেসব কোম্পানি স্বেচ্ছায় অথবা নিয়ম মেনে কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে এবং যেসব কোম্পানির নিজস্ব কার্বন নিঃসরণে ভারসাম্য আনতে হবে, তারাই কার্বন ক্রেডিটের ক্রেতা।

বিশ্বের অনেক কোম্পানিই তাদের কার্বন ফুটপ্রিন্টের ক্ষতিপূরণ হিসেবে কার্বন ক্রেডিট কিনে থাকে। এরকম কয়েকটি কোম্পানি হলো: মাইক্রোসফট, রয়্যাল ডাচ শেল, বিপি, টোটাল এসই, নেসলে, গুগল, অ্যাপল, অ্যামাজন, ডেল্টা এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, কোকা-কোলা, জেনারেল মটরস, জেপিমর্গ্যান চেজ, ও গোল্ডম্যান স্যাকস।

দেশের ভেতরে সম্ভাব্য ক্রেতা

বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠাগুলোকে কার্বন ক্রেডিট কেনার জন্য চাপ দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

'আমরা কার্বন ক্রেডিট কেনার বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছি, কিন্তু কেনার সুযোগ পাচ্ছি না,' বলেন দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিনস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ তানভীর আহমেদ।

এছাড়া কার্বন ক্রেডিট সম্পর্কে মানুষ এখনো তেমন কিছু জানে না। তানভীর জানান, কার্বন ক্রেডিট কেনাবেচার কাজটা বেশ কঠিন এবং ক্রেডিট কেনার সময় খেয়াল রাখতে হয়, যেন সেটি প্রকৃত ক্রেডিট এবং স্বীকৃত মাপকাঠি দ্বারা যাচাইকৃত হয়।

তানভীর আরও বলেন, কার্বন ক্রেডিটের ক্রেতা ও বিক্রেতা দেশের ভেতরে হওয়াই বেশি ভালো।

ইডকলের আলমগীর মোরশেদও মনে করেন কার্বন ক্রেডিট বেচাকেনার প্রক্রিয়া আরও সহজ হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, যেসব পোশাক প্রস্তুতকারক কার্বন ক্রেডিট কিনতে ইচ্ছুক, তারা ইতিমধ্যে এটি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা শুরু হয়নি।

স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে ইডকল কার্বন ক্রেডিট বিক্রি করতে চাইলে, তা নির্ভর করবে বিক্রেতা কোন মানদণ্ড অনুসরণ করছে এবং কী দাম দিতে চাইছে, তার ওপর।

র্বন ক্রেডিটে বিপুল সম্ভাবনা বাংলাদেশের

গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানোর উদ্দেশ্যে গৃহীত প্রকল্পের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের উচ্চঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের কার্বন ক্রেডিট আয় করার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এসবের মধ্যে আছে সৌরশক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তির বিপুল সম্ভাবনাময় উৎসের পৃষ্ঠপোষকতা করা। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য খাত থেকে করতে চায়। বর্তমানে এ হার মাত্র ৩ শতাংশ।

বড় পরিসরে বিনিয়োগ প্রয়োজন

ওয়েস্ট কনসার্নের মাকসুদ সিনহা বলেন, বাংলাদেশের কার্বন ক্রেডিট খাতে সুযোগ আছে, কিন্তু এ সুযোগকে বাস্তবে রূপ দিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডে এফডিআই ও গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর প্রকল্পসহ বাংলাদেশের বড় মাপের বিনিয়োগ প্রয়োজন।

'এ খাতে এফডিআই আনার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া উচ্চদামে কার্বন ক্রেডিট বিক্রি হওয়া যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বাজারে কার্বন ক্রেডিট বিক্রির জন্য সরকারের পদক্ষেপ দরকার,' তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন।

'আমরা দেশে টেকসই জ্বালানির পৃষ্ঠপোষকতা করছি,' বলেন সাসটেইনেবেল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-র (স্রেডা) চেয়ারম্যান মুনিরা সুলতানা। সোলার হোম সিস্টেমের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে সরকার সৌর সেচ, সৌর মিনি/মাইক্রো-গ্রিড, সৌর পার্ক, সোলার রুফটপ, সৌর নৌকাসহ নানা প্রকল্প নিয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের কার্বন ক্রেডিট বাণিজ্যের সম্ভাবনা বিপুল, কিন্তু কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে সরকার এর সুবিধা নিতে পারছে না।

'এ বিষয়ে আমাদের কাঠামোগত কোনো ফ্রেমওয়ার্ক নেই। আর প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবও আরেকটি সীমাবদ্ধতা,' বলেন তিনি।

কার্বন নিঃসরণ কমানোর উপায়

উন্নত চুলা: বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক ঘরবাড়িতে প্রচলিত চুলা ব্যবহার বরা হয়। এসব চুলা থেকে বিপুল পরিমাণে কার্বন ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান নিঃসৃত হয়। ইডকল আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আরও ৪০ লাখ উন্নত চুলা বসানোর প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

বনায়ন ও পুনর্বনায়ন: বৃক্ষনিধনের কারণে বাংলাদেশের মোট বনভূমির পরিমাণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক হ্রাস পেয়েছে। বনায়ন ও পুনর্বনায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে কার্বনের পরিমাণ নির্দিষ্ট সীমায় আটকে রাখা ও গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানো যাবে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক সমস্যায় জর্জরিত। বেশিরভাগ বর্জ্যের শেষ আশ্রয় হয় ভাগাড়। বর্জ্য-থেকে-জ্বালানি প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ যেমন কমানো যাবে, তেমনি বিদ্যুৎও উৎপাদন করা যাবে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.