মহাবিপন্ন বাঘাইড় মাছ ধরা নিষিদ্ধ হলেও বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না

বাংলাদেশ

22 March, 2023, 07:25 pm
Last modified: 22 March, 2023, 07:44 pm
বুধবার (২২ মার্চ) সিলেট নগরীর লালবাজারে ১০০ কেজি ওজনের একটি বাঘাইড় মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি করতে দেখা যায়। এর আগের সপ্তাহে (১৫ মার্চ) ১৬০ কেজি ওজনের আরেকটি বিশাল আকৃতির বাঘাইড় বিক্রি হয় একই বাজারে। বিশাল আকৃতির এসব মাছ আস্ত বিক্রি না হওয়ায়-  কেটে কেজি দরে বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি বিক্রি হয় দুই হাজার টাকা দরে। 

ছবি: টিবিএস

সিলেটে প্রকাশ্যেই চলছে মহাবিপন্ন বাঘাইড় মাছ বেচাকেনা। শহরে রীতিমত মাইকিং করে এই মাছ বিক্রি করা হচ্ছে। বাঘাইড় মাছ শিকার ও বিক্রয় বন্ধে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা বাস্তবায়নে তেমন কোন উদ্যোগ নেই সংশ্লিস্টদের। পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, এভাবে অবাধে বিক্রি অব্যাহত থাকলে অচিরেই প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

বুধবার (২২ মার্চ) সিলেট নগরীর লালবাজারে ১০০ কেজি ওজনের একটি বাঘাইড় মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি করতে দেখা যায়। এর আগের সপ্তাহে (১৫ মার্চ) ১৬০ কেজি ওজনের আরেকটি বিশাল আকৃতির বাঘাইড় বিক্রি হয় একই বাজারে। বিশাল আকৃতির এসব মাছ আস্ত বিক্রি না হওয়ায়-  কেটে কেজি দরে বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি বিক্রি হয় দুই হাজার টাকা দরে। 

বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে প্রায়ই বড় আকৃতির বাঘাইড় মাছ ধরা পড়ে। সেগুলো সিলেটের ঐতিহ্যবাহী লালবাজারে এনে বিক্রি করা হয়। এর আগে ২০২১ ও ২০২২ সালে কুশিয়ারা নদীর জকিগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় অন্তত চারটি বাঘাইড় মাছ ধরা পড়ে। যা পরে লালবাজারে বিক্রি হয়।

অথচ মহাবিপন্ন প্রজাতির এই মাছ ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন আইনত নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে আইনের তোয়াক্কা না করেই চলছে বেচাকেনা।

মিঠা পানির মাছ বাঘাইড় (gangetic goonch) এর বৈজ্ঞানিক নাম Bagarius yarrelli। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট 'আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ' (আইইউসিএন) এর লাল তালিকায় রয়েছে 'মহাবিপন্ন' বাঘাইড়।

এছাড়াও বাঘাইড় মাছ বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ২নং তফসিলভুক্ত একটি সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী। এই আইন অনুযায়ী- বাঘাইড় মাছ শিকার, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন কিংবা দখলে রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড-ই হতে পারে।

তবে এ আইনের ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন লালবাজারে বাঘাইড় মাছ বিক্রি করা আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, 'এই মাছ প্রায়ই লালবাজারে বিক্রি হয়। কেউ কখনো বিক্রিতে আমাদের বাধা দেয়নি। বাঘাইড় মাছ বিক্রি যে অপরাধ একথাও কেউ জানায়নি'।

বুধবার (২২ মার্চ) লালবাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে বড় আকারের বাঘাইড় মাছ আনার খবর শুনে অনেকে মাছটি দেখতে বাজারে ভিড় করেছেন। মোবাইল ফোনে বিশাল আকৃতির মাছের ছবি তুলছেন। কেউবা আবার দরদাম করছেন। এর আগে মাছটি বিক্রির ঘোষণা দিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরে মাইকিং করানো হয়।

গত ১৪ মার্চে কুশিয়ারা নদীতে জকিগঞ্জ এলাকায় জেলের জালে ১৫০ কেজির একটি বাঘাইড় মাছ ধরা পড়েছিল। সেটিও এই মাছ ব্যবসায়ী কেটে বিক্রি করেন।

প্রকাশ্যে বিপন্ন প্রজাতির একটি মাছ বিক্রিকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, 'মহাবিপন্ন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ এ মাছ ঢালাওভাবে শিকার ও বিক্রির বিষয়টি দুঃখজনক। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই মাছটি একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে'।

তিনি বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনানুযায়ী এ মাছটি বিক্রি নিষিদ্ধ, তাই বন অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তর এ মাছ শিকার ও ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে সবার আগে প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণা।

বাঘাইড় শিকার ও বিক্রি বন্ধে সচেতনতামূলক প্রচারণার প্রয়োজনীয়তার কথা জানালেন বন কর্মকর্তা-ও। বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'এই মাছ যে মহাবিপন্ন প্রজাতির এবং এটি বিক্রয় নিষিদ্ধ তা বেশিরভাগ লোকই জানে না। তাই বাঘাইড় বিক্রি বন্ধে সবার আগে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। মানুষকে সচেতন না করতে পারলে বিক্রি বন্ধ করা যাবে না'।

ইতোমধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, আমরা সম্প্রতি মৌলভীবাজারে বাঘাইড়সহ মহাবিপন্ন প্রজাতির মাছগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ এবং মাইকিং করেছি। বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রচারণা চালিয়েছি। গত পৌষে মাছের মেলায়ও প্রচারণা চালানো হয়েছে। মৌলভীবাজার থেকে দুয়েকবার বাঘাইড় জব্দও করেছি। শীঘ্রই সিলেটে এ ব্যাপারে সচেতনামূলক কার্যক্রম চালানো হবে। এরপরও বাঘাইড় বা এরকম বিক্রয় নিষিদ্ধ কোন মাছ বিক্রি করা হলে- আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.