গৃহহীন শাহানার এখন ৬টি গরু, সংসারে নেই অভাব
তিন সন্তান ও স্বামী-সংসার নিয়ে একসময় থাকতেন পরের জমিতে, মাটির ঘরে। অভাবের সংসারে আগে যেখানে তিন বেলা খেতেই কষ্ট হতো, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া আশ্রয়ণের বাড়িতে শাহানা বেগমের (৪০) এখন ৬টি গরু ও ১টি ছাগল, আরও রয়েছে হাঁস-মুরগী।
"দুই বছর আগে আমার একটি গরু ছিল, ঘর পাওয়ার পর এখন আমাদের ৬টি গরু হয়েছে। ছাগলও রয়েছে একটি। গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি পালন করার জায়গা হয়েছে", এমনভাবেই বলছিলেন সিলেটের গোয়াইঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি গ্রামের শাহানা বেগম।
শাহানা বেগম আরো বলেন, "এখন আমি দুই ছেলেকে স্কুলে পড়াচ্ছি। একসময়ের গৃহহীন আমি, এখন স্বাবলম্বী হওয়ার পথে, সংসারে আগের মতো এতো অভাব নেই।"
শাহানা বেগমের স্বামী শরিফ উদ্দিন বলেন, "দুই বছর আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছি৷ আগে খাস জমিতে মাটির ঘর ছিলো। ঘর ও ২ শতাংশ বাড়ির জমি পাওয়ায় আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছে।"
শাহানা বলেন, "আমার স্বামীর দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। সংসার চালিয়ে দিনে ২০০ টাকার মতো থাকে। তা দিয়েই সঞ্চয় করে গরু-ছাগল কিনেছি। ৩ সন্তান সবাই পড়াশোনা করছে। সবমিলিয়ে আমরা ভালোই আছি। আমাদের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।"
একই গ্রামে আশ্রয়ণের বাড়ি পেয়েছেন রুকিয়া বেগম (৪০), যিনি একসময় ছিলেন ছিন্নমূল। বর্তমানে রুকিয়া বেগমের বাসায় দেখা যায় দুইটা কাঠের খাট, আলমারি, এলএইডি টেলিভিশন, একটি মোটরসাইকেল, হাঁস-মুরগির পাল।
রুকিয়া বেগম টিবিএসকে বলেন, "আগে বাসা ভাড়া দিয়ে থাকতাম। কাজ করে বাসা ভাড়া দিতেই টাকা শেষ হয়ে যেত, কোনো টাকাই জমা রাখতে পারতাম না। কখনো ভাবিনি নিজের বাড়ি হবে। বাড়ি পেয়ে আমরা মনে হয়েছে বেঁচে থাকার খুঁটি হয়েছে।"
তিন সন্তানের জননী রুকিয়া আরও বলেন, "হাঁস-মুরগি আছে সেগুলো পালন করি। স্বামী যে টাকা পায় তা দিয়েই সংসার চালিয়ে নিচ্ছি। সঞ্চয় করে মোটরসাইকেল কিনেছি। স্বামী দিনে পাথরের কাজ করে, বাসায় ফিরে রাতে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালায়। এতে আমাদের ভালোই আয় হয়। এক বছরের মধ্যে আমরা টেলিভিশনও কিনেছি।"
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সকালে সিলেটের গোয়াইঘাট উপজেলার কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে একসময়ের গৃহহীনদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়। গৃহহীনদের সরকার সারাদেশে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে ঘর করে দিচ্ছে। বেশ কয়েক ধাপে এরইমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় এখনো ২২ হাজারের বেশি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে।
এদিকে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের আগে গৃহহীনদের মাঝে আজ আরও ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর হস্তান্তর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২২ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপে এসব বাড়ি হস্তান্তর করেন।
এর আগে, প্রথম ধাপে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মধ্যে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং তৃতীয় ধাপে ৫৯ হাজার ১৩৩টি ঘর বিতরণ করা হয়।
তথ্যমতে, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে হস্তান্তরিত গৃহের সংখ্যা ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি। চতুর্থ পর্যায়ে অবশিষ্ট নির্মাণাধীন গৃহের সংখ্যা ২২ হাজার ৬টি। চতুর্থ পর্যায় পর্যন্ত বরাদ্দকৃত গৃহের সংখ্যা ২ লাখ ৩৭ হাজার ৮৩১টি। চতুর্থ পর্যায়ে চরাঞ্চলে বরাদ্দকৃত বিশেষ ডিজাইনের গৃহের সংখ্যা ১ হাজার ৩৭৩টি ও পার্বত্য অঞ্চলে বিশেষ ডিজাইনের মাচাং ঘর ৬৩৪টি।