বিশ্বের শীর্ষ ১০০ লিড সার্টিফাইড গ্রিন ফ্যাক্টরির অর্ধেকই বাংলাদেশে

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
07 February, 2023, 02:05 pm
Last modified: 07 February, 2023, 02:10 pm
ভারত ও শ্রীলঙ্কায় রয়েছে ৬টি করে প্লাটিনাম রেটেড কারখানা; ভিয়েতনাম ও তাইওয়ানে ৪টি করে এবং মিয়ানমার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ২টি করে কারখানা।

সারা বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি লিড (এলইইডি) সার্টিফাইড গ্রিন ফ্যাক্টরি বা সবুজ শিল্প ইউনিটের অর্ধেকই রয়েছে বাংলাদেশে। এর মূল কারণ হল, সম্প্রতিকালে স্থানীয় উদ্যোক্তারা পরিবেশ-বান্ধব উত্পাদন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন।

ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) অনুসারে, দেশের এই শীর্ষস্থানীয় লিড সার্টিফাইড কারখানাগুলোর মধ্যে ৪৯টি পোশাক খাতে এবং একটি মাত্র বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্পে।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর, প্রধানত দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা কার্বন, জ্বালানি এবং পরিবেশগত বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ নজর দিয়েছেন, যাতে বৈশ্বিক পর্যায়ে দেশের পোশাক খাতের ভাবমূর্তি উন্নত হয়। এর মাধ্যমে তারা স্বনামধন্য ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতাদেরও মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।

বর্তমানে, বাংলাদেশে ১৮৭টি লিড সার্টিফাইড গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে, যার মধ্যে চারটি বাদে সবই গার্মেন্টস সেক্টরে। এই লিড সার্টিফাইড পোশাক কারখানাগুলোর মধ্যে ৬৩টি প্লাটিনাম, ১১০টি গোল্ড এবং ১০টি সিলভার রেটেড।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর তথ্য অনুসারে, চট্টগ্রামের কালুরঘাটে অবস্থিত কেডিএস আইডিআর লিমিটেড, গেল ১ ফেব্রুয়ারি প্লাটিনাম রেটেড লিড সার্টিফিকেশন পাওয়া সর্বশেষ বাংলাদেশি পোশাক কারখানা।

বিজিএমইএ সূত্র জানায়, পরিবেশ-বান্ধব বা সবুজ উদ্যোগের জন্য ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) থেকে লিড সার্টিফিকেশন পাওয়ার জন্য আরও ৫০০ পোশাক কারখানা অপেক্ষায় আছে।

ইউএসজিবিসি অনুসারে, চীনে মাত্র ১০টি কারখানা প্লাটিনাম রেটেড। এই সংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে দেশটি। ৯টি প্লাটিনাম রেটেড কারখানা নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তান।

ভারত ও শ্রীলঙ্কায় রয়েছে ৬টি করে প্লাটিনাম রেটেড কারখানা; ভিয়েতনাম ও তাইওয়ানে ৪টি করে এবং মিয়ানমার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে মাত্র ২টি করে কারখানা।

তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, মেক্সিকো, পোল্যান্ড, প্যারাগুয়ে, রোমানিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিটিতে একটি করে লিড সার্টিফাইড প্লাটিনাম রেটেড কারখানা রয়েছে।

সবুজ উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত বিজিএমইএ'র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, "এলইইডি সার্টিফিকেশন এটিই ইঙ্গিত দেয়, দেশের পোশাক খাত পরিবেশের নিরাপত্তা, পানি ও জ্বালানি সাশ্রয় এবং শ্রম কল্যাণ সম্পর্কিত সমস্ত নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালনা করে।"

আন্তর্জাতিক পোশাক ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার পেতে কারখানাগুলোর এমন পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক নয়; এরপরেও নির্মাতারা এখন পরিবেশের দিকটি গুরুত্ব দিয়ে এই খাতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করছে। ভবিষ্যতে, ক্রেতারা পোশাক সরবরাহকারীদের (উৎপাদন) জন্য এটি (পরিবেশ-বান্ধব কারখানা) বাধ্যতামূলক করতে পারে বলেও ধারণা দেন তিনি।

একটি সাধারণ কারখানার নির্মাণে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হয়, তারচেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়ে সবুজ কারখানা নির্মাণে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের কারখানার পরিচালন ব্যয় সাধারণ কারখানার তুলনায় কম, যে কারণে নির্মাতারা পরিবেশ-বান্ধব কারখানা নির্মাণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বলে জানান তিনি। 

"গ্রিন ইনিশিয়েটিভ বা সবুজ উদ্যোগের জন্য ক্রেতাদের কেউই অতিরিক্ত মূল্য দিতে রাজি নন। তবে তারা এ ধরনের কারখানায় অর্ডার দিতে পছন্দ করে; কারণ এই উৎপাদনকারীরা পরিবেশগত সুরক্ষা সম্পর্কিত নিয়ম মেনে পণ্য তৈরি করে," যোগ করেন মহিউদ্দিন রুবেল।

তিনি আরও বলেন, "পরিবেশ-বান্ধব কারখানা নির্মাণে নীতি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সরকারের উচিত এই বিষয়ে উদ্যোক্তাদের উত্সাহিত করা। একটি সবুজ কারখানা নির্মাণে যে পরিমাণ ব্যয় হয়, সেই বিবেচনায় সবুজ কারখানার জন্য মাত্র ২ শতাংশ কর কমানো মোটেও আকর্ষণীয় নয়।"

রুবেলের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে বিশ্বের প্রথম প্লাটিনাম সার্টিফাইড ডেনিম মিল এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্রেতারা সব সময় কম দামে পণ্য কিনতে চায়; পরিবেশ-বান্ধব কারখানার জন্য তারা অতিরিক্ত দাম দেয় না।

বিশ্বের অন্যতম প্লাটিনাম রেটেড নিটওয়্যার কারখানা ফতুল্লা অ্যাপারেলস লিমিটেডের সিইও এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান বলেন, পরিবেশ-বান্ধব কারখানার জন্য ক্রেতারা অতিরিক্ত দাম দেয় না, তবে ভবিষ্যতে তাদের এই মনোভাবের পরিবর্তন করতে পারে।

"শুধু ভালো দামের জন্য নয়, ব্যবসা করার সময় পরিবেশের সুরক্ষায় আমরা কারখানাগুলোকে পরিবেশবান্ধব করতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছি," যোগ করেন তিনি। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.