দেশের ৫৯% উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে হয় না

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
24 January, 2023, 11:00 am
Last modified: 24 January, 2023, 11:40 am
এছাড়াও ৮৮.২% উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আল্ট্রাসনোগ্রাম সুবিধা নেই; ৬৩% স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই আবাসিক মেডিকেল অফিসার।

দেশের ৫৯% উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের এক্স-রে করা হয় না; হয় সেখানে এক্স-রে যন্ত্র নেই, অথবা থাকলেও নষ্ট। 

এছাড়াও ৮৮.২% উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আল্ট্রাসনোগ্রাম সুবিধা নেই। ৪১% কমপ্লেক্সে রক্ত পরিসঞ্চালন করা হয় না। 

পাশাপাশি ৬৩% স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস ডিপার্টমেন্টের গবেষকরা দেশের আট বিভাগের ৯টি জেলা হাসপাতাল এবং ১৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপর জরিপ চালানোর পর দেশের স্বাস্থ্য খাতের এই চিত্র উঠে এসেছে। 

সোমবার বিকেলে বিএসএমএমইউতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়। 

গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক এবং গবেষণার প্রধান গবেষক ড. মোঃ খালেকুজ্জামান। তিনি বলেন, "বাংলাদেশের বড় সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যসেবার জন্য জেলা ও উপজেলা হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা দেওয়ার সময় চিকিৎসকেরা বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ বা সমস্যার মুখোমুখি হন, যা স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দেখা দেয়।"

গবেষণায় দেখা গেছে, ১১% জেলা হাসপাতালে ও ৫৮.৮% উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে সেবা নেই। ৫৫.৬% জেলা হাসপাতাল ও ৮৮.২% উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আল্ট্রাসনোগ্রাম হয় না। ১১% জেলা হাসপাতাল ও ২৩% উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইসিজি হয় না। একটি জেলা হাসপাতালেও চিকিৎসকদের ব্যবহার উপযোগী ডরমিটরি বা কোয়ার্টার নেই।

২০২১ সালের মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়কালে গবেষণার জরিপের কাজ সম্পন্ন হয়। এর অর্থায়নে ছিল হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)।

গবেষণায় আরো বলা হয়, জেলা হাসপাতালে ৩০% এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬৩% আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। ৭৭.৮% জেলা হাসপাতালে এবং ৬৪.৭% উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মহিলা রোগী/অ্যাটেনডেন্টদের জন্য আলাদা টয়লেট এর ব্যবস্থা নেই। ৫২.৯% উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের জন্য ব্যবহার উপযোগী ডরমিটরি/কোয়ার্টার পাওয়া গেলেও জেলা হাসপাতালে এর পরিমাণ শূন্য।

জেলা হাসপাতালে ২০% ক্লিনার পদ শূন্য থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শূন্য ক্লিনার পদের পরিমাণ ৬৬%। জেলা হাসপাতালে ৩১% এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫৩% নিরাপত্তা প্রহরী বা আনসারের পদ শূন্য পাওয়া গেছে।

যথাযথ মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এবং প্রযুক্তির অভাবের মতো অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ তো আছেই; হাসপাতালের বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থার অনুপযোগিতা আর অত্যধিক কাজের চাপও পরিস্থিতি কঠিন করে তোলে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, "অনেক হাসপাতালের অবকাঠামো ভালো নেই, আবার অনেক অবকাঠামো আছে পাকিস্তান আমলের ৫০-৬০ বছর আগের, প্লাস্টার উঠে গেছে, টয়লেটে পানি থাকে না। সেগুলো ভালো করতে হবে। একই রকম চিত্র আমি নতুন হাসপাতালগুলোতেও পাই। টয়লেট নষ্ট, যন্ত্রপাতি চলছে না। আসলে প্রশাসন ভালো হলে হাসপাতালও ভালো থাকবে।"

মন্ত্রী বলেন, "বিশ্বের কোন দেশে হাসপাতালে পাহারা দেয়া হয় না। হাসপাতাল তো সহিংসতার জায়গা না। তবে আমাদের দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে যায় রোগী মারা গেল কেনো। সে কারণে গার্ড দেয়া হয়। প্রতিটি জেলা-উপজেলা হাসপাতালে আনসার, সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা আছে।"

তিনি আরো বলেন, "বাংলাদেশে অনেক উন্নতি করছে। সব জায়গায় বিদ্যুৎ আছে, রাস্তাঘাট ভালো হচ্ছে, স্কুল হচ্ছে। তবু বাংলাদেশ তো আমেরিকা না। এটার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ডাক্তারদের কর্মক্ষেত্রে থাকতে হবে।" 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.