দেশে ওমিক্রন বিএফ.৭ শনাক্তের পর বন্দরে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

বাংলাদেশ

02 January, 2023, 10:00 am
Last modified: 02 January, 2023, 10:17 am
রোববার (১ জানুয়ারি) চীনা নাগরিকের জিনোম সিকোয়েন্স রিপোর্টে ওমিক্রনের উপধরন বিএফ.৭ শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আইইডিসিআর-এর পরিচালক ডাঃ তাহমিনা শিরিন।

দেশে করোনার অতি সংক্রামক নতুন উপধরন ওমিক্রন বিএফ.৭ শনাক্তের পর বিমান ও স্থলবন্দরসহ সব ধরনের বন্দরে নজরদারি বাড়ানো পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি চীন থেকে বাংলাদেশে আসা চারজন কোভিড আক্রান্ত চীনা নাগরিকের একজনের জিনোম সিকোয়েন্স রিপোর্টে নতুন এই ধরনের উপস্থিতি মেলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ সংক্রামক এই ধরন মোকাবেলায় হাসপাতালে সংক্রমণ প্রতিরোধের ওপরেও বিশেষ জোর দিতে হবে। 

রোববার (১ জানুয়ারি) চীনা নাগরিকের জিনোম সিকোয়েন্স রিপোর্টে বিএফ.৭ উপধরন শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইন্সটিটিউট অফ এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) এর পরিচালক ডাঃ তাহমিনা শিরিন।

গত ২৬ ডিসেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চীন থেকে আসা ৪ যাত্রীর কোভিড-১৯ অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হলে, তাদের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। পরে তাদের মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতালে আইসোলেশনে পাঠানো হয়। 

কোভিড পজিটিভ চার চীনা নাগরিক ভালো আছেন। আবার কোভিড টেস্ট করার পর রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। 

দেশে ওমিক্রনের উপধরন বিএফ.৭ এর সংক্রমণ ঠেকাতে হাসপাতালগুলোর ইনফেকশন প্রিভেনশন বা সংক্রমণ প্রতিরোধের ওপর জোর দেওয়া জরুরি বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডা. এম মুশতাক হোসেন। 

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "হাসপাতাল, ভ্যাকসিন সেন্টার, কোভিড টেস্টিং সেন্টারগুলোতে সংক্রমণ প্রতিরোধের যে পদ্ধতি রয়েছে, যেমন– পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, ফ্লোর-ওয়াশরুম পরিষ্কার রাখা, মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা ও তা নিশ্চিত করা- এই বিষয়গুলোর ওপর জোর দিতে হবে। কারণ হাসপাতাল থেকে রোগ বেশি ছড়ায়।" 

"রোগী সীমান্ত দিয়ে আসবে ঠিকই, কিন্তু রোগ ছড়াবে হাসপাতাল থেকে। সীমান্ত নিয়ে আমরা সিরিয়াস আছি, কিন্তু হাসপাতালগুলোতে সংক্রমণ ছড়ানো প্রতিরোধের বিষয়ে মনোযোগ কম।"

"প্রতিটি হাসপাতালে পরিচালকের নেতৃত্বে ইনফেকশন প্রিভেনশন কমিটি রয়েছে, সে কমিটি যেনো প্রতিদিন ইনফেকশন প্রিভেনশনের বিষয়টি যাচাই করে, তা নিশ্চিত করতে হবে," যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি আছে। ওমিক্রনের অনেক উপধরন হয়েছে; যেটি টিকে আছে সেটিই ছড়াচ্ছে। সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। যারা এখনও টিকার ডোজ শেষ করেননি তাদেরকে ভ্যাকসিন নিতে হবে; পাশাপাশি মাস্ক পরার অভ্যাস চালু করতে হবে।

বিএফ.৭ হল ওমিক্রনের বিএ.৫ ধরনের একটি উপধরন। সংক্ষিপ্ত ইনকিউবেশন পিরিয়ডের এই ধরনটি অত্যন্ত সংক্রামক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুনরায় সংক্রমণ ঘটানোর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই উপধরন টিকা নেওয়া ব্যক্তিদেরও সংক্রমিত করতে পারে।

চীনের উহানে প্রথম যে ধরন শনাক্ত হয়েছিল, তারচেয়ে অন্তত ৪.৪ গুণ বেশি নিরপেক্ষতা প্রতিরোধ ক্ষমতা (সংক্রমণের ক্ষমতা) রয়েছে নতুন এই উপধরনের। অর্থাৎ, ভ্যাকসিনেশন থেকে পাওয়া অ্যান্টিবডি এই ধরনের বিরুদ্ধে যথেষ্ট কার্যকর নয়। সেল হোস্ট অ্যান্ড মাইক্রোব জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় এমনটিই বলা হয়েছে।

জ্বর, গলা ব্যাথা, সর্দি এবং কাশিসহ শ্বাসযন্ত্রের পীড়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে নতুন এই উপধরনে আক্রান্ত হলে। এর পাশাপাশি থাকতে পারে ডায়রিয়া, বমিসহ পেট সম্পর্কিত বিভিন্ন উপসর্গ। 

নতুন এই ধরন গুরুতর কোনো শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি নাও করতে পারে, তবে এটি অত্যন্ত সংক্রামক হওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।

চীনে ইতোমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে ওমিক্রন বিএফ.৭। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্ক, জার্মানি, ফ্রান্স এবং ভারতেও এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

বিএফ.৭ এর সংক্রমণ ঠেকাতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, "আমরা বন্দরে সতর্কতা দিয়েছি। সন্দেহজনক রোগীদের অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। এখন যেহেতু বিএফ.৭ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে, বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোগী কোনো না কোনো বন্দর দিয়েই আসবে, তাই আমরা বন্দরগুলোতে নজরদারি বাড়াতে বলেছি। হাসপাতালগুলোতেও প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে।"

এছাড়া, এখনও যারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ টিকা নেননি, তাদেরকে দ্রুতই টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.