সামনের মাসগুলোয় মূল্যস্ফীতির চাপ কমে আসতে পারে 

বাংলাদেশ

01 January, 2023, 05:10 pm
Last modified: 01 January, 2023, 05:15 pm
আগস্ট মাসে দেশের বাজারে দাম বৃদ্ধির পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রুডের (অপরিশোধিত জ্বালানি তেল) দাম কমছে। ডিসেম্বরে পণ্যটির দাম আগের বছরের একই সময়ের কাছাকাছি নেমে এসেছে। গত দুই তিন মাসে অনেক পণ্যের দামই পড়তির দিকে।

বহির্খাত থেকে আগামীতে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ বিশ্বে অনেক পণ্যের দাম সর্বোচ্চে পর্যায়ে পৌঁছানোর পর এখন কিছুটা স্থির আছে। আবার মন্দা প্রবণতা শুরু হওয়ায়, চাহিদা কমে আসার কারণেও বেশকিছু পণ্যের দাম কমে আসার একটা সম্ভাবনা আছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পণ্যের দাম কমা শুরুও হয়েছে।

আগস্ট মাসে দেশের বাজারে দাম বৃদ্ধির পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রুডের (অপরিশোধিত জ্বালানি তেল) দাম কমছে। ডিসেম্বরে পণ্যটির দাম আগের বছরের একই সময়ের কাছাকাছি নেমে এসেছে। গত দুই তিন মাসে অনেক পণ্যের দামই পড়তির দিকে।

এটা একটা ইতিবাচক লক্ষণ যে বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির চাপ থেকে আগামী কয়েক মাসে মুক্তি পাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। তবে সেখানেও একটা অনিশ্চয়তা আছে। কারণ কোন কারণে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির অবনতি হলে– আবার সরবরাহের দিকে বিভিন্ন ধরনের ব্যাঘাত ঘটবে। এর ফলে সব পণ্যের দামও আবার বাড়তে পারে।

তবে আমাদের এখানে বড় সমস্যা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম কমলে– দেশের বাজারে এর তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব পড়ে না। আবার কোনো পণ্যের দাম একবার বাড়লে, ব্যবসায়ীরা আর কখনো কমাতে চান না। তারা বিভিন্ন কারণে খরচ বেড়ে গেছে এমন অজুহাত দিয়ে থাকেন।

বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে, দ্রুত দেশের বাজারে বেড়ে যায়। আর বিশ্ববাজারে কমলেই যে দেশের বাজারেও কমবে– এর কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে সারা বিশ্বে পণ্যের দাম কমলে, দেশে একটা স্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করে।

দেশের বাজারে তেলের দাম কমানো নাহলে– আগামীতে মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো অনেক কঠিন হবে। কারণ তেলের দামের সঙ্গে বিদ্যুতের দাম ও অন্যান্য শিল্প ও কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচের সম্পর্ক রয়েছে। তেলের দাম কমানো হলে সেচ, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে খরচের পরিমাণ কিছুটা কমে আসবে। এর ফলে মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে।

আগামীতে মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে কৃষি উৎপাদন বড় একটা ভূমিকা রাখতে পারে। সামনের দুটো মওসুমে ভালো ফসল হলে– খাবারের দামে কিছুটা স্বস্তি আসবে।

তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো– আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে উচ্চ মাত্রার 'মার্কেট ইমপারফেকশান' রয়েছে। সাময়িক সরবরাহ সংকটের সুযোগ নিয়ে বিক্রেতারা মজুতদারী ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম কারসাজি করে থাকে। 

এই সমস্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না। একারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পণ্যের দাম নিয়ে ভোক্তাদের ভোগান্তি বেড়ে যায়। এই বিষয়গুলো মনিটরিং করা দরকার। আর এটা করা গেলে, আগামীতে মূল্যস্ফীতির চাপ অনেকটা কমে আসবে।

গত কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতির যে চাপ দেখা যাচ্ছে, তা এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এটা দেশের মানুষ ও নীতিনির্ধারকদের জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। কোভিডে কর্মহানী, আয় কমে আসার মতো ক্ষত থেকে পুনরুদ্ধারের আগেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের– কারণে সৃষ্ট এই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সামর্থ্য দেশের অনেক মানুষের নেই। 

এই অবস্থায় মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে যে ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে– তার অনেকগুলোই আবার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ও মানুষের আয় বৃদ্ধির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ব্যাংক ব্যবস্থায় সুদের হার দীর্ঘদিন ধরেই ৬-৯ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। মুদ্রাপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে এটা তুলে নেয়া উচিত। 

মুদ্রার বিনিময় হার ও রিজার্ভের অবস্থা একটা পর্যায়ে ধরে রাখতে কিছু পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সেটা করতে গিয়ে হয়ত শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমাদনিতেও কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। 

এখন মূল্যস্ফীতি কমাতে বিনিয়োগ, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, আয় তথা অর্থনৈতিক কার্যক্রম কমাতে পারে এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া যাবে না।

এই অবস্থায় মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য উৎপাদন খাতে যেমন গুরুত্ব দিতে হবে, তার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়াতে হবে।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.