ফারদিনের মৃত্যুতে সম্পৃক্ততা নেই বলছে পুলিশ, তাহলে বুশরা এখনও কারাগারে কেন?

বাংলাদেশ

18 December, 2022, 12:50 pm
Last modified: 19 December, 2022, 02:37 pm
বুশরার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ফারদিনের বাবা বাদী কাজী নূর উদ্দিনের ওপর বিষয়টি চাপানোর চেষ্টা করে তদন্তকারী সংস্থা।

বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তের ফলাফল ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে এই ঘটনায় এক মাসেরও বেশি সময় আগে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক শিক্ষার্থী আমাতুল্লাহ বুশরাকে জামিন না দেওয়া নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

গত ১০ নভেম্বর ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়েরের কয়েক ঘণ্টা পরেই রাজধানীর বনশ্রী এলাকা থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ফারদিনের বন্ধু বুশরাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বুশরার পরিবারের দাবি তাকে ফাঁসানো হয়েছে এবং বুশরার জীবন এখন 'ঝুঁকিতে'।

এক মাস তদন্তের পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গত বুধবার জানায়, ফারদিনকে খুন করা হয়নি বরং সে আত্মহত্যা করেছে। তবে তাদের পূর্ববর্তী বক্তব্যের সঙ্গে এই বক্তব্যের মিল খুবই সামান্য।

প্রাথমিকভাবে উভয় সংস্থাই জানায়, মাদক ব্যবসায়ীরা ফারদিনকে খুন করে থাকতে পারে।

তদন্তকারী সংস্থা ডিবি পুলিশ আরও জানায় যে তারা ফারদিনের মৃত্যুতে বুশরার জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ খুঁজে পায়নি। তাহলে প্রশ্ন আসে কেন বুশরা এখনও হত্যার অভিযোগে কারাগারে রয়েছে?

এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তদন্তকারী সংস্থা ফারদিনের বাবা বাদী কাজী নূর উদ্দিনের ওপর বিষয়টি চাপানোর চেষ্টা করে।

'এটা গোয়েন্দা শাখার দোষ না, আপনাদের উচিত মৃতের বাবা কাজী নূর উদ্দিনকে প্রশ্ন করা। তিনি আমাতুল্লাহ বুশরার বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং এরপর রামপুরা পুলিশ বুশরাকে তার বাসা থেকে ১০ নভেম্বর আটক করে। একই দিনে মামলাটি গোয়েন্দা শাখায় ট্রান্সফার করা হয় এবং আমরা তার রিমান্ড আবেদন করি,' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবি মতিঝিল বিভাগের এক কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান।

'যেকোনো হত্যামামলার তদন্তের নিয়মিত ব্যবস্থা অনুসারেই সে সময় আগানো হয়। যদি তাকে গ্রেপ্তার না করে পরে গিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত পাওয়া যেত, তখন মানুষ আমাদেরই দোষ দিত,' বলেন তিনি।

এ বিষয়ে কাজী নূর উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাতুল্লাহ বুশরার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নূর উদ্দিন তার ছেলের আত্মহত্যার বিষয়ে পুলিশের বক্তব্যও মানছেন না। তিনি বলেন, 'আমি এখনও বিশ্বাস করি এটা আত্মহত্যা নয় বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড'।

এই বিষয়ে নো-কনফিডেন্স পিটিশন দায়েরের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।

ডিবির তদন্ত ফলাফল প্রকাশের একদিন পর বৃহস্পতিবার ডিবি প্রধান হারুন-অর রশিদ জানান, ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর সঙ্গে আমাতুল্লাহ বুশরার কোনও সম্পৃক্ততা খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে তারা আদালতকে অবহিত করবেন।

রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, মামলায় বুশরার নাম উল্লেখ না করার জন্য তারা ফারদিনের বাবাকে অনুরোধ করেছিলেন।

'যেহেতু সে এখনও একজন শিক্ষার্থী, সেজন্য আমরা ফারদিনের বাবাকে বলেছিলাম তদন্তের সময় সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে আমরা বুশরাকে আটক করব। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন এবং বলেছিলেন যেহেতু বুশরাকে শেষবার আমার ছেলের সঙ্গে দেখা গেছে, তাই তাকে আসামি করা উচিত', বলেন ওসি।

গ্রেপ্তারের পর আমাতুল্লাহ বুশরাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ পাঠানো হয়।

সম্প্রতি বুশরার বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম তাকে কারাগারে দেখতে যান। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, কিছু সময়ের জন্য মেয়ের সঙ্গে তার কথা হয়। সেসময় বুশরা তার বাবাকে বলে 'আমি নির্দোষ। তাহলে কেন আমার জামিন নামঞ্জুর করা হলো?'

মঞ্জুরুল ইসলাম তাকে এই বলে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন যে, 'আদালত কিছুদিনের জন্য মুলতবি করা হয়েছে। তারা ছুটিতে। খুব শিগগিরই তোমাকে জামিন দেওয়া হবে।"

'বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বিনা কারণে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দি– এটা কতটা যৌক্তিক? তার মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে,' বলছিলেন শোকাহত বাবা।

বুশরার চাচা মাজহারুল ইসলাম বলেন, 'সত্যটা ইতোমধ্যেই জনগণ জানতে পেরেছে। বুশরা নির্দোষ হয়েও এখনও কারাগারে। এটা কি ন্যায়বিচারের অবমাননা নয়?'

তিনি আরও বলেন, আমরা অবিলম্বে মামলা থেকে বুশরার অব্যাহতি চাই।

তবে আদালত সূত্র জানায়, বুশরাকে আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে। ওইদিন মামলার শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের মানবাধিকার আইনজীবী ইশরাত হাসান টিবিএসকে বলেন, অনুমানের ভিত্তিতে কাউকে অভিযুক্ত করাটা ভয়ঙ্কর।

'গত এক মাসে যে ধরনের মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে মেয়েটিকে যেতে হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা তার জন্য খুব কঠিন হবে। এই ধরনের মামলা সামলানোর ক্ষেত্রে পুলিশের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল,' বলেন তিনি।

পুলিশ-র‍্যাবের তদন্তে সন্তুষ্ট বুয়েট শিক্ষার্থীরা

মামলার তদন্তের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ও নিহত ফারদিন নূর পরশের সহপাঠীরা।

মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ডিবি ও র‌্যাব সদর দপ্তুর পরিদর্শনের পর শনিবার এক ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, 'ফারদিনের মামলা নিয়ে র‌্যাব ও ডিবি পুলিশের তদন্তে আমাদের আর কোনো সন্দেহ নেই'।

'ডিবি অফিসে গিয়ে আমরা কিছুটা বিভ্রান্ত হয়েছিলাম। কিন্তু র‌্যাব সদর দপ্তর পরিদর্শনের পর আমাদের বিভ্রান্তি দূর হয়ে যায়। সেখানে তিন ঘণ্টার বৈঠকে র‍্যাব তাদের সমস্ত তথ্য ও প্রমাণ আমাদের কাছে উপস্থাপন করে,' বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বুয়েট শিক্ষার্থী।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.