জিন থেরাপির একমাস পর রায়হান এখন নড়াচড়া করতে, বসতে ও কথা বলতে পারে

বাংলাদেশ

29 November, 2022, 11:00 am
Last modified: 29 November, 2022, 11:10 am
২২ কোটি টাকা মূল্যের জিন থেরাপি ইনজেকশন নেওয়ার পর রায়হান এখন একটু সাপোর্ট নিয়ে বসতে পারে, নিজে নিজেই নড়াচড়া করতে পারে, বলতে পারে ছোট ছোট বাক্য।

এক মাস আগেও ২২ মাস বয়সী শিশু রায়হান বসতে পারতো না, হাত উচু করতে পারতোনা, পারতোনা ঠিকমত কথা বলতে। বিরল নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ) তে আক্রান্ত শিশুটির দুই বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যেতো। রায়হানকে বাঁচানোর আশা ছেড়ে দিয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু রায়হানের ডাক্তার তখনও হাল ছাড়েননি। বিশ্বব্যাপী এক প্রকল্পের অধীনে রায়হানকে বিনামূল্যে ব্যয়বহুল জিন থেরাপি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন তার ডাক্তার। এরপরই বদলে গেছে রায়হানের জীবন।

২২ কোটি টাকা মূল্যের জিন থেরাপি ইনজেকশন নেওয়ার একমাস পর রায়হান এখন একটু সাপোর্ট নিয়ে বসতে পারে, নিজে নিজেই নড়াচড়া করতে পারে, বলতে পারে ছোট ছোট বাক্য।

গত ২৪ অক্টোবর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে জিন থেরাপি নেওয়ার কিছুদিন পর মানিকগঞ্জের বাড়িতে ফিরে গিয়েছিল রায়হান। ইনজেকশন দেওয়ার একমাস পর গত ২১ নভেম্বর নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ফলোআপের জন্য আবারও আনা হয় তাকে। সেদিন তার কিছু টেস্ট করা হয় ও ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপি দেওয়া হয়; সেইসঙ্গে তার মাকে বাড়িতেই থেরাপি দেওয়ার নিয়ম শিখিয়ে দেওয়া হয়।

রায়হানের ২১ নভেম্বরের সকালটি ছিল একেবারেই অন্যরকম। সকাল দশটায় নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের আউটডোরের ১১২ রুমে ঢোকার পরেই চোখে পড়ে একটি বেডের ওপর বসে সম্প্রতি ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া 'সাদা সাদা কালা কালা' গান গাচ্ছে রায়হান। তার চিকিৎসক ডাঃ জোবাইদা পারভিন রায়হানের কর্মকাণ্ড ভিডিও করছেন এবং তাকে মোবাইল ফোন হাতে নিতে, হাত মাথার ওপর তুলতে নির্দেশ দিচ্ছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী সবই করছে রায়হান। এরপর তাকে ফিজিক্যাল মেডিসিন ডিপার্টমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয় ফিজিওথেরাপির জন্য।

নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দেওয়ার পর এক সময় রায়হান হাঁটতে শিখবে বলে প্রত্যাশা চিকিৎসকদের।

রায়হানের রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে বৈশ্বিক প্রকল্পে নাম লেখানো পর্যন্ত, লটারিতে রায়হানের নাম আসার পর দেশে ওষুধ আনার ক্ষেত্রে তার চিকিৎসক ডাঃ জোবাইদা পারভিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

বহুজাতিক ঔষধ কোম্পানি নোভার্টিস তাদের বৈশ্বিক সিএসআর ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে 'ওনাসেমনোজিন অ্যাবেপারভোভেক' নামক ব্যয়বহুল ওষুধটি লটারির মাধ্যমে প্রতিমাসে দুইজন শিশুকে বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে ২২কোটি টাকা মূল্যের জিন থেরাপি ইনজেকশন দেওয়া একমাত্র এসএমএ রোগী শিশু রায়হান।

রায়হানের ফলোআপের পর ডাঃ জোবাইদা পারভিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "রায়হানের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। ও আগে হাত নাড়াতে পারলেও শূন্যে হাত তুলতে পারতো না, এখন মাথার ওপরে হাত তুলতে পারছে। ও আগে পা নাড়াতে পারতো না, এখন পাও নাড়াতে পারে।" 

"সাপোর্ট দিলে রায়হান এখন বসতে পারে, কথাও বলতে পারে ভালোভাবেই। আগে শুধু শব্দ বলতো, এখন সে বাক্য বলতে পারে।"

"রায়হানের এখন ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপি চলবে। আমরা আশা করছি, রায়হান হাঁটতেও পারবে। তবে রায়হানের হাঁটা শুরু করতে কত সময় লাগবে, তা এখনই বলা যাচ্ছেনা," যোগ করেন ডাঃ জোবাইদা।

স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি স্নায়ুতন্ত্রের একটি বিরল রোগ; এটি একটি জটিল জন্মগত ব্যাধি, যা মূলত জেনেটিক কারণে হয়।

চিকিত্সকরা বলেন, শিশুদের ঘাড় শক্ত না হলে তারা বসতে বা দাঁড়াতে পারে না। দুর্বল পেশীর কারণে তাদের নড়াচড়া হয় অনেক সীমিত এবং তারা প্রায়ই শ্বাসকষ্টে ভোগে। এক সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে ব্যবহৃত পেশীগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে শিশুর মৃত্যু হয়।

মানিকগঞ্জ সদরের নবগ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম এবং রিনা আক্তার দম্পতির ছেলে রায়হান। রফিকুল ইসলাম সৌদি আরবে থাকেন। বিয়ের ৯ বছর পর জন্ম হয় শিশু রায়হানের। জন্মের নয় মাস পর রায়হান যখন হাত পা নাড়ায় না, বসতে পারেনা- তখন তাকে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে আনা হয়। সেখানেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এসএমএ রোগ শনাক্ত হয়।

রিনা আখতার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমার ছেলেকে হাত-পা নাড়াতে এবং ওঠার চেষ্টা করতে দেখে আমি যে আনন্দ পাই, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।"

"ছেলের নয় মাস বয়সে যখন হাসপাতালে এনেছিলাম, তখন অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলা হয় ওর চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই। আমি অনেক কান্নাকাটি করেছি সে সময়। পরে ডাক্তার বললেন, ভাগ্য ভালো্ হলে রায়হান ২২ কোটি টাকা দামের ইনজেকশন পাবে। ছেলে দিন দিন সুস্থ্য হয়ে উঠছে, এখন স্বপ্ন দেখি আমার ছেলে হাঁটতেও পারবে," যোগ করেন রায়হানের মা।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.