বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই প্রায় ৪০% অগ্নিকাণ্ড: ফায়ার সার্ভিস

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
27 November, 2022, 09:30 am
Last modified: 27 November, 2022, 10:29 am
প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ২০ হাজার আগুন লাগার ঘটনায় ফোন আসে। শুধু ঢাকাতেই প্রতিবছর গড়ে ১৮০ জনের মৃত্যু ঘটে অগ্নিকাণ্ডের ফলে।

দেশে প্রতিবছর ২১ হাজারেরও বেশি সংখ্যক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আর এ অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ৪০%-ই বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে ঘটে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বাংলাদেশের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইন উদ্দিন। 

শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত ৮ম আন্তর্জাতিক ফায়ার, সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো-২০২২ উপলক্ষ্যে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ তথ্য দেন।

'ফায়ার সেফটি ইস্যুজ ইন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জেস এন্ড ওয়েজ ফরওয়ার্ড' শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় মাইন উদ্দিন বলেন, এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ২০৬৩২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০২১ সালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২১৬০১টি। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ২০ হাজার আগুন লাগার ঘটনায় কল আসে। শুধু ঢাকাতেই প্রতি বছর গড়ে ১৮০ জনের মৃত্যু ঘটে অগ্নিকাণ্ডের ফলে। এতে ব্যাপক পরিমাণে সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। 

তার বক্তব্য থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে বৈদ্যুতিক শর্ট-সার্কিটের কারণে ৩৭%, রান্নাঘরে ১৮%, সিগারেট থেকে ১৫% এবং অন্যান্য কারণে ১৫% অগ্নিকাণ্ড ঘটে থাকে।

মাইন উদ্দিন বলেন, 'যেভাবে উন্নয়নশীল দেশ হচ্ছি তাতে করে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ফায়ার সেফটির জন্য। আমি মনে করি সার্ভিসের সদস্যদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। আমাদেরও কিছু দুর্বলতা আছে।'

তিনি আরও বলেন,  'ফায়ার সার্ভিস ভবন নির্মাণ করতে সবাই চায় কিন্তু সেফটিতে কেউ টাকা খরচ করতে চায় না। ফায়ার সেফটির বিষয়ে প্রশিক্ষণাগার তৈরি করতে হবে।'

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, 'অগ্নি দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি ও জীবন বাঁচাতে বড় আকারের পূর্বপ্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই। প্রস্তুতি না নিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে দিন শেষে ক্ষয়ক্ষতি আমাদেরই হবে। আগুনে পুড়ে মানুষের মৃত্যুর মিছিল দেখতে হবে। নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেই হবে না। নির্বাপণ ব্যবস্থা কতটুকু কার্যকর তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।' 

উত্তরের মেয়র বলেন, 'আমি বিজিএমইএ (বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি) এর সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পরে রানা প্লাজায় বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এখন আমরা পোশাক কারখানাগুলোকে একটি সিস্টেমের মধ্যে এনেছি। আমরা যখন গার্মেন্টস শুরু করেছি তখন এটা ছিল না। আমরা পোশাক কারখানায় ফায়ার সেফটি ও বিল্ডিং সেফটি নিশ্চিত করছি। গার্মেন্টসে যদি ট্রান্সপারেন্সি করতে পারি ঢাকা শহরকে কেন পারবো না? নগরীর নাগরিকদের সচেতন করতে ফায়ার সার্ভিস ট্রেনিং সরবরাহ করবে সিটি কর্পোরেশন।'

মেয়র বলেন, 'বাসায় এডিস মশার লার্ভা থাকলে, রাস্তার রড রাখলে যদি ফাইন করতে পারি তাহলে কেন ভবনে ফায়ার সেফটি না থাকলে জরিমানা করতে পারবো না?'

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, 'ফায়ার সেফটির বিষয়ে সতর্কতা জরুরি। সচেতনতার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সচেতন করার জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের সোচ্চার হতে হবে ফায়ার সেফটির বিষয়ে।'

ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইসাব) যুগ্মসচিব জাকির উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'দেশকে ও দেশের পোশাক খাতকে আগুনের ভয়াবহতা থেকে বাঁচাতে চাই। প্রতিটা স্কুলে বাচ্চাদের এই বিষয়ে জ্ঞান দিতে চাই, সচেতন করতে চাই। প্রতিটা দেশেই কিন্তু বাচ্চাদের ফায়ার সেফটির বিষয়ে সচেতন করা হয় কিন্তু আমাদের দেশে শুরু হয়নি।'

ইসাবের আয়োজনে তিনদিনব্যাপী ৮ম আন্তর্জাতিক ফায়ার, সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপো-২০২২ শেষ হয়েছে শনিবার। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.