এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের কাজ করবে জাপান, বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম

বাংলাদেশ

23 November, 2022, 09:35 am
Last modified: 23 November, 2022, 10:25 am
রাজধানী ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় যানজট নিরসনে ছয়টি মেট্রো রেল নির্মাণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ধারাবাহিকতায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও একই ধরনের গণপরিবহন সেবা চালু করতে চায় সরকার। 

জাপানের টোকিউ কনস্ট্রাকশন এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের জয়েন্ট ভেঞ্চার রাজধানীর এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের কাজ করবে।

আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে কনসোর্টিয়ামটির সঙ্গে ৬০৭ কোটি টাকা মূল্যের একটি চুক্তি করতে যাচ্ছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানী লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৬.২১ কিলোমিটার ভূ-গর্ভস্থ ও নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত ১১.৩৬ কিলোমিটার উড়াল মেট্রো রেল নির্মাণ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয় ২০১৯ সালের অক্টোবরে। এই চুক্তির আওতায় প্রকল্প অনুমোদনের তিন বছরের ব্যবধানে আগামী মাসে দেশের প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো রেলের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। 

আগামী মাসে দেশের প্রথম মেট্রো রেলের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরুর আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন এই মেট্রো রেলটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা।

এদিকে রাজধানী ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় যানজট নিরসনে ছয়টি মেট্রো রেল নির্মাণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ধারাবাহিকতায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও একই ধরনের গণপরিবহন সেবা চালু করতে চায় সরকার। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ লক্ষ্যে ৭০.৬৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরে 'ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান অ্যান্ড প্রিলিমিনারি ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর আরবান মেট্রো রেল ট্রানজিট কন্সট্রাকশন অব চট্টগ্রাম' প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ২০২৬ সালের মধ্যে উড়াল ও পাতাল মিলে ৩১.২৪ কিলোমিটার লাইন নির্মাণের কাজ শেষ করতে নেয়া এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা আছে ৫২,৫৬১.৪৩ কোটি টাকা। মোট ছয়টি প্যাকেজের আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজের আওতায় মাটি ভরাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পাশ্ববর্তী রাস্তার উন্নয়ন, স্লপ প্রটেকশন, সেটেলমেন্ট মনিটরিং ইত্যাদি কাজ হবে। এসব কাজ শেষ করতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে আড়াই বছর সময় দেয়া হবে।

তারা আরও জানান, ডিপোর কাজ এগিয়ে নিতে রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ ও ব্রাহ্মণখালী এলাকায় ৮৭৮ কোটি টাকায় ৯২.৯৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছে পুরো জমি হস্তান্তরযোগ্য অবস্থায় রয়েছে বলেও তারা জানান। 

কর্মকর্তারা জানান, নর্দা, নতুন বাজার ও উত্তর বাড্ডার তিনটি স্টেশনে এন্ট্রি ও এক্সিটের জন্য এবং একটি সাবস্টেশনের জন্য জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

এর আগে, নির্মাণ তদারকির পরামর্শক হিসাবে আটটি কোম্পানির সমন্বয়ে একটি জাপানি সংস্থার নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম নিয়োগ করা হয়েছিল।

লাইনটিতে ২১টি স্টেশন থাকবে- ১২টি আন্ডারগ্রাউন্ড এবং ৯টি এলিভেটেড। এছাড়াও আট কোচ বিশিষ্ট ২৫ সেট ট্রেন এই লাইনে প্রতিদিন চলাচল করবে। একটি ট্রেনের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা হবে ৩,০৮৮ জন।

কর্মকর্তাদের মতে, বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর যেতে মাত্র ৩৪ মিনিট, নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ২০ মিনিটে এবং কমলাপুর থেকে পূর্বাচল যেতে ৩৫ মিনিট সময় লাগবে।

ট্রেনগুলো অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টার থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যাত্রীদের সহজে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের জন্য স্টেশনগুলোতে লিফট, সিঁড়ি এবং এসকেলেটর থাকবে।

কর্মকর্তাদের মতে, উদ্বোধনের পর ২০২৮ সালে ভূগর্ভস্থ মেট্রো রেলের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৮ লাখ যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন। ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রো রেল চালু হওয়ার সাথে সাথে ৫০ লাখেরও বেশি যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করতে পারবেন। 

মেট্রো রেলের আওতায় আসবে চট্টগ্রাম 

চট্টগ্রাম শহর এবং আশেপাশের উপজেলায় মেট্রোরেল চালু এবং সমন্বিত পরিবহন পরিকল্পনা তৈরির লক্ষ্যে 'ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান অ্যান্ড প্রিলিমিনারি ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর আরবান মেট্রো রেল ট্রানজিট কন্সট্রাকশন অব চট্টগ্রাম' প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। 

২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়সীমার এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এতে কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কোইকা) ৫৭ কোটি টাকা সহায়তা দেবে।

রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়।

সভা শেষে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, শুধু চট্টগ্রাম শহরে মেট্রোলের প্রাথমিক সমীক্ষার প্রস্তাব থাকলেও একনেক সভায় সীতাকুণ্ড, পটিয়াসহ আশেপাশের উপজেলায়ও মেট্রোরেল চালু করা যায় কিনা সেই বিষয়টিও সমীক্ষাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম শহর ও আশেপাশের এলাকার জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা করা হবে বলে তিনি জানান।

তিনি আরো বলেন, ২০২৫ সালের মার্চে চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের প্রিলিমিনারি ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হলে মূল সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হবে। দুই বছরের মধ্যে এই কাজ শেষ হলে ২০২৭ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৪০ লাখ মানুষ বসবাস করে। শিল্প কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান প্রসারের মাধ্যমে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দ্রুত নগরায়ন ঘটেছে। ফলে চট্টগ্রামে পরিবহন ব্যবস্থার উপরে চাপ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যানজট, দুর্ঘটনা, বায়ুদূষণ ইত্যাদি সমস্যা বেড়ে চলছে। 

চট্টগ্রাম শহর ও আশেপাশের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম বন্দর বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়েছে। যানজট পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্যও বিভিন্ন সংস্থা নানা পদক্ষেপ নিলেও সমন্বিত পরিকল্পনা না থাকায় বিচ্ছিন্নভাবে নেওয়া প্রকল্প জনদুর্ভোগ লাঘবে ফলপ্রসূ হয়নি। 

আট প্রকল্প অনুমোদন করেছে একনেক

একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি জানান, সভায় ৪,৮২৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরে মোট আট প্রকল্প অনুমোদন পায়। এর মধ্যে সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে তিনটি।  

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.