চট্টগ্রামের আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগারের কার্যক্রম শুরু হয়নি ছয় বছরেও

বাংলাদেশ

18 November, 2022, 05:40 pm
Last modified: 18 November, 2022, 05:50 pm

ইনফোগ্রাফ: টিবিএস

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে রয়েছে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলের একমাত্র আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার। অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি থাকার সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠার ছয় বছর পরও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি এর স্বাক্ষর-কর্তৃপক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতায়। 

আধুনিক পরীক্ষাগারটি রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরশনের (চসিক) মালিকানায়। চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এর অর্গানোগ্রাম (জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষক পদে নিয়োগসহ) অনুমোদন দিতে এবং দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করায় আমরা এখনও ল্যাবরেটরটি চালু করতে পারিনি।    

এই পরিস্থিতির শিকার হয়ে চসিক এখন পরীক্ষাগারটি চালু করতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। এলক্ষ্যে তারা গ্রাউন্ডওয়ার্ক শুরু করছেন বলেও জানান তিনি। 

খাদ্য পরীক্ষাগারটির অবস্থান বন্দর নগরীর বিবিরহাট পশুর বাজারের কাছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নের এক প্রকল্পের আওতায়, ২০১৬ সালে ২৪.৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। এমন আরেকটি ল্যাবরেটরি নির্মাণ করা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য।

ল্যাব দুটি নির্মাণের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল– ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন নিশ্চিত করা। ঢাকা দক্ষিণের পরীক্ষাগারটি ভালোভাবেই সচল রয়েছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।  

চট্টগ্রামের পরীক্ষাগারটির আয়তন ৮ হাজার বর্গফুট। খাদ্যের ভেজাল শনাক্ত ও গুণাগুণ নির্ণয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এখানে ৮৩টি যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করা হয়েছে। পুরো স্থাপনাটি দুটি ল্যাবে বিভক্ত– একটি মাইক্রোবায়োলজিক্যাল টেস্টের জন্য; অন্যটি রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট।  

খাদ্য মন্ত্রণালয় ল্যাবটিকে খাদ্যের মান পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছিল এবং পরীক্ষামূলকভাবে তা চালুও করা হয়। তবে ল্যাবে স্বীকৃত কোনো স্বাক্ষর কর্তৃপক্ষ না থাকায় টেস্টের ফলাফল কোনো কাজে আসছে না।

টিবিএসের সাথে আলাপকালে পরীক্ষাগারটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে একজন পরিচালক, একজন সিনিয়র রসায়নবিদ এবং একজন সিনিয়র মাইক্রোবায়োলজিস্টসহ ২৪ জনকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের স্থায়ী করে সরকারি চাকরিজীবী করার কথা থাকলেও– সংশ্লিষ্ট দুই কর্তৃপক্ষ– অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ছয় বছরেও তা করেনি।  

ফলস্বরূপ; গত কয়েক বছরে চাকরি ছেড়েছেন এর ১৭ জন কর্মকর্তা। এতে স্থাপনাটি আরও অচল হয়ে পড়েছে। 

এদিকে, প্রায় ৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া জমে যাওয়ায় গত বছরের জুন মাসে ল্যাবের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। তবে চলতি মাসের শুরুর দিকে সংযোগ পুনরায় দেওয়া হয়েছে। 

খাদ্য পরীক্ষাগারটির সম্ভাবনা 

প্রায় ৮০০ ধরনের পণ্যের ৭৯ ধরনের পরীক্ষা করার সক্ষমতা রয়েছে ল্যাবটির। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০টি পণ্যের পরীক্ষা করা সম্ভব বলে জানান এটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। 

তারা জানান, বিভিন্ন পরীক্ষার নমুনা প্রস্তুতের জন্য একদম বিশুদ্ধ মানের পানি প্রয়োজন হয়। পরীক্ষাগারটিতে উচ্চ প্রযুক্তির লিকুইড ক্রোমাটোগ্রাফি পদ্ধতিতে এই ব্যবস্থা রয়েছে। এতে সবচেয়ে নির্ভুল ফলাফল পাওয়া যায়। দেশের অন্যান্য ল্যাবগুলিতে 'ডিসটিলড ওয়াটার' ব্যবহার করা হয়।  

শুরুর দিকে পরীক্ষাগারটির দায়িত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, "খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এবং নিরাপদ খাদ্য অধিপ্তরের অ্যাক্রেডিশেন পেয়েছে ল্যাবটি। খাদ্যের মান রক্ষার পাশাপাশি এটি বাণিজ্যিকভাবেও বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে।" 

"বন্দরনগরী হয়েও কেন এখানকার ব্যবসায়ী, আমদানি-রপ্তানিকারকদের ঢাকার প্রতি নির্ভর থাকতে হবে? এই ল্যাবে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। আমদানি-রপ্তানি খাদ্যপণ্যের সব ধরনের পরীক্ষা এখানেই করা সম্ভব"।

পরীক্ষাগারটির সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সংযোগ করা গেলে এখান থেকে বিরাট আয়ের সুযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি। 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.